পৃথিবীর গভীর অসুখ: আমরাও ভালো নেই অস্ট্রেলিয়ায়

দুবার অস্কারজয়ী হলিউড তারকা টম হ্যাঙ্কস গত ১২ মার্চ তার ইনস্টাগ্রামে লিখলেন, ‘পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া গেছে আমরা উভয়ই করোনায় আক্রান্ত।’ তিনি ও তার স্ত্রী রিটা উইলসন তখন অবস্থান করছিলেন অস্ট্রেলিয়ার সমুদ্রনগরী কুইন্সল্যান্ডে। তারা অস্ট্রেলিয়ায় এসেছিলেন রক সংগীতশিল্পী এলভিস প্রিসলির বায়োপিকের শুটিং করার জন্য।
অস্ট্রেলিয়ার সুপারশপগুলোতে ফাঁকা র‌্যাকের দৃশ্য সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছবি: আকিদুল ইসলাম

দুবার অস্কারজয়ী হলিউড তারকা টম হ্যাঙ্কস গত ১২ মার্চ তার ইনস্টাগ্রামে লিখলেন, ‘পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া গেছে আমরা উভয়ই করোনায় আক্রান্ত।’ তিনি ও তার স্ত্রী রিটা উইলসন তখন অবস্থান করছিলেন অস্ট্রেলিয়ার সমুদ্রনগরী কুইন্সল্যান্ডে। তারা অস্ট্রেলিয়ায় এসেছিলেন রক সংগীতশিল্পী এলভিস প্রিসলির বায়োপিকের শুটিং করার জন্য।

হ্যাঙ্কসের ইনস্টাগ্রাম বার্তার পরই অস্ট্রেলিয়ান সরকার ও জনগণ আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন। তখন থেকেই করোনা নিয়ে শুরু হয় নানামুখী উদ্যোগ। অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার ডাটটন নতুন করোনাভাইরাস কোভিড ১৯ এ আক্রান্ত হলে অস্ট্রেলিয়া সরকার বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে এবং কঠোর পদক্ষেপ নিতে শুরু করে।

নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ১৫ লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। এজন্য তিনি সবগুলো হাসপাতালে ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিটের বেড সংখ্যা দ্বিগুণ করার পরামর্শ দিয়েছেন। এরই মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তর শিল্পনগরী মেলবোর্ন অবরুদ্ধ করা হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ার আকাশ আইকন কোয়ান্টাসের ৯০ শতাংশ ফ্লাইট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দেশটির ৬০ শতাংশ অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বন্ধ থাকবে। সব মিলিয়ে আগামী মে মাস পর্যন্ত ১৫০টি অস্ট্রেলিয়ান উড়োজাহাজ আকাশে উড়বে না। সরকার এয়ারলাইন্সের এই ক্ষতি পূরণে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ কর মওকুফের ঘোষণা দিয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখন বন্ধ। প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের শিক্ষার্থীদের অনলাইনে পড়াশুনা করার কথা জানিয়ে ইমেইল করেছে। বড় বড় কোম্পানির অফিস বন্ধ করে দিয়ে স্টাফদের ঘরে থেকে অনলাইনে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছে। পাবলিক ট্রান্সপোর্টগুলোও চলছে যাত্রীহীন। শপিং সেন্টারগুলোতে নেই নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য। সবাই পণ্য জমাতে শুরু করেছেন। অস্ট্রেলিয়ানদের আশঙ্কা, যে কোনো মুহূর্তে যে কোনো শহর অবরুদ্ধ ঘোষণা করা হতে পারে।

সুপারশপে ক্রেতাদের ভিড়। ছবি: সংগৃহীত


এখন পর্যন্ত কোভিড ১৯ এ অস্ট্রেলিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ৪৫৪ জন। পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটিতে বাংলাদেশিদের সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ। এখন পর্যন্ত কোনো বাংলাদেশি আক্রান্তের সংবাদ পাওয়া যায়নি। তবে এই ভাইরাসের কারণে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। ‘বাংলা টাউন’ হিসেবে খ্যাত সিডনির লাকেম্বা ও রকডেল এলাকার জমজমাট বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট ও শপিং সেন্টারগুলো নিঝুম হয়ে পড়েছে। মার্চ-এপ্রিলে বসন্ত ও বৈশাখ উপলক্ষে আয়োজিত প্রায় সাতটি মেলা-উৎসব বাতিল করতে হয়েছে। কারণ সরকার ৫০০ লোকের অধিক যে কোন সমাগমের উপর কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন।

অস্ট্রেলিয়া এখন রিসেশন আতঙ্কে কাঁপছে। সর্বশেষ ২৭ বছর আগে, ১৯৯১ সালে অস্ট্রেলিয়া মারাত্মক অর্থনৈতিক মন্দায় পড়েছিল। ২০০৯ সালে গোটা পৃথিবী অর্থনৈতিক মন্দায় পড়লে তা ছুঁয়ে যায় অস্ট্রেলিয়াকেও। পরপর দুটি আর্থিক ধাক্কার কাটিয়ে এই মহাদেশটি যখন গতিশীল অর্থনীতির বাজারে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল তখনই মহামারি ভাইরাস নতুন করে অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতিতে আঘাত হেনেছে। মহামারি করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের চাঙ্গা করতে সরকার ২২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের স্টিমুলেট প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পাবেন সর্বোচ্চ ২১ হাজার ডলার।

গতকাল বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন নাগরিকদের উদ্দেশ্যে এক ঘোষণায় আগামী ছয় মাসের বিপজ্জনক সময় অতিক্রমণের প্রস্তুতি রাখতে বলেছেন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘প্রতি ঘণ্টায় অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে এবং আমরা প্রতি ঘণ্টায় বিপদের দিকেই এগিয়ে চলেছি।’

আকিদুল ইসলাম: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English

Wage growth still below inflation

Unskilled workers wage grew 8.01% in September this year when inflation was 9.92%

2h ago