চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি
![](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/feature/images/kuwait-bangladesh_friendship_govt_hospital_0.jpg?itok=2SdJTVOE×tamp=1584792730)
কোভিড-১৯ সারা বিশ্বে মহামারী আকার ধারণ করছে। একদিকে যেমন সাধারণ মানুষ আক্রান্ত, অন্যদিকে যারা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছে তারাও সমান হারে আক্রান্ত হচ্ছে।
ইতালিতে মোট আক্রান্তের ৮ দশমিক ৩ শতাংশ চিকিৎসা-কর্মী। এখন পর্যন্ত ইতালিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪৭,০২১ জন। এর মানে হচ্ছে আক্রান্ত চিকিৎসা-কর্মীর সংখ্যা প্রায় তিন হাজার ৯০৩ জন।
চীনে চিকিৎসা-কর্মীদের আক্রান্তের হার ইতালির আক্রান্তের হারের ঠিক উল্টো। দশমিকের আগের সংখ্যাটা দশমিকের পরে আর পরের সংখ্যাটা দশমিকের আগে আসলেই অংকটা মিলে যাবে। অর্থাৎ চীনে চিকিৎসা-কর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার হার মোট আক্রান্তের ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। চীনে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮১ হাজার ৮। আক্রান্ত চিকিৎসা-কর্মীর সংখ্যা ৩০৭৮ জন।
ইতালি এবং চীন দুটি দেশই চিকিৎসা বিজ্ঞানে অনেক এগিয়ে। তারা তাদের চিকিৎসা-কর্মীদের উন্নতমানের সব ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম দিয়েছে। একেকজন চিকিৎসা-কর্মীকে দেখলে মনে হয় নভোচারী। এর পরও উন্নত বিশ্বে চিকিৎসা-কর্মীদের আক্রান্তের সংখ্যা এত বেশি।
ইতালিতে চিকিৎসা-কর্মীরা এত বেশি আক্রান্ত হচ্ছে যে সেখানে চিকিৎসক সংকট দেখা দিয়েছে। কোভিড-১৯ আক্রান্ত চিকিৎসকরা নিজে চিকিৎসা না নিয়ে অন্যদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন, এমন দৃষ্টান্তও আছে। এই চিকিৎসকদের অবদান সারা বিশ্বের মানুষ জানে। সারা বিশ্ব নিশ্চয়ই এইসব মানবতার শিখরে থাকা চিকিৎসকদের অবদান স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখবে।
বাংলাদেশে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা ২৪ জন। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মোট ১০ জন চিকিৎসক আইসোলেশনে আছেন। আমাদের এখানে এখনো কোভিড-১৯ এর কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়নি। আমাদের দেশে লেভেল-৩ ট্রান্সমিশন চলছে। যারা বিদেশ ফেরত বা বিদেশ ফেরতদের সংস্পর্শে এসেছেন তারাই আক্রান্ত হচ্ছেন। আমাদের দেশে যদি কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়ে ইতালি বা চীনের মতো অবস্থায় যায়, আর সমান তালে চিকিৎসক, নার্সরা আক্রান্ত হতে শুরু করলে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই হাসপাতালগুলো চিকিৎসক ও নার্স-শূন্য হয়ে যাবে। এটি একটি বড় আশঙ্কার ব্যাপার।
আমাদের দেশে এখনো সব হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য চিকিৎসাকর্মীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম দেওয়া হয়নি। যার ফলে একদিকে যেমন চিকিৎসকরা সর্দি কাশি জ্বরের রোগীদের চিকিৎসা দিতে ভয় পাচ্ছে অন্যদিকে বেশিরভাগ রোগী চিকিৎসা না পাওয়ার ভয়ে বিদেশ ভ্রমণের কথা গোপন করছে। রোগীদের ধারণা বিদেশ ভ্রমণের ইতিহাস থাকলে তারা চিকিৎসা পাবে না, প্রকৃতপক্ষে সেটাই ঘটছে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হবে।
একটি উদাহরণ দিয়ে বলি কীভাবে ডাক্তাররা আক্রান্ত হচ্ছে, বাংলাদেশে প্রথম যে ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, তিনি করোনার লক্ষণ নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যাননি। উনার কিডনিতে পাথর ছিল, সেটার চিকিৎসার জন্য তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে গিয়েছেন। অসুস্থতার ইতিহাস, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসকরা তাকে আইইডিসিআর এ পাঠায় করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য। সেখানে তাকে পজিটিভ হিসেবে শনাক্তকরণ করা হয়। উনার চিকিৎসার সঙ্গে যেসব চিকিৎসক জড়িত ছিলেন সবাইকে আইসোলেশনে রাখা হয়। এভাবে যদি একজন রোগীর জন্য চার জন চিকিৎসককে আইসোলেশনে রাখতে হয়, তাহলে হাসপাতাল শূন্য হতে সময় লাগবে না।
যেসব চিকিৎসক সেবা দিচ্ছেন তাদের সর্বোচ্চ প্রোটেকশন দিয়ে প্রস্তুত রাখতে হবে, নয়ত আমরা সবাই ঝুঁকিতে থাকব।
যেসব চিকিৎসক, নার্স এবং কর্মচারীরা আউটডোর সেবা দিবে তাদের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা অনুযায়ী লেভেল-১ প্রোটেকশন দেওয়া জরুরি। লেভেল-১ প্রোটেকশনে যেসব পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) দরকার তার তালিকা:
ক. সার্জিক্যাল মাস্ক,
খ. ডিসপোজেবল গ্লাভস
গ. সার্জিক্যাল ক্যাপ
ঘ.ওয়ার্কিং ইউনিফর্ম (চিকিৎসকরা নিজেরা নিয়ে আসবেন)
ঙ. ডিসপোজেবল আইসোলেশন ক্লথিং (যদি প্রয়োজন হয়)
চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনায় আক্রান্ত হলে তাদের কাছে চিকিৎসা নেওয়া সাধারণ রোগীদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে, বহির্বিভাগে সেবা নিতে আসা রোগীদেরও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
বাংলাদেশে চিকিৎসকদের প্রস্তুত করাটা এখন সবচেয়ে জরুরি। যা সম্পূর্ণভাবে করা হয়নি। শুধু সংবাদ সম্মেলনে—প্রস্তুত আছি, এই দেশ সেই দেশ থেকে আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভালো—এসব কথা বন্ধ করে চিকিৎসকদের নিরাপদ রাখুন, জনগণকে নিরাপদে রাখুন। দেশকে মহামারি থেকে রক্ষা করুন।
Comments