করোনাভাইরাস: করণীয় কী? ডাক্তার আবদুল্লাহর পরামর্শ

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে আক্রান্ত হয়েছেন ২৪ জন, মারা গেছেন দুই জন। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি নিয়ে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ।

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে আক্রান্ত হয়েছেন ২৪ জন, মারা গেছেন দুই জন। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি নিয়ে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ।

তিনি বলেন, ‘দিনদিন পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে, চারপাশের চিত্র বদলে যাচ্ছে। আমরা এক মাস আগেও যে অবস্থানে ছিলাম বর্তমানে সেখানে নেই। আক্রান্তের হার একটু একটু করে বাড়ছে। এখন পর্যন্ত ২৪ জন আক্রান্তের খবর পেয়েছি। প্রথম বিষয়টা হচ্ছে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়া চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব না।’‘আর এ রোগের লক্ষণ অনেকটা সর্দি-কাশির মতো। সুতরাং কেউ যদি আক্রান্ত হয়ে থাকেন বিশেষ করে যারা বিদেশ থেকে এসেছেন, আক্রান্ত এলাকা থেকে দেশে এসেছেন তাদের মধ্যে কারো যদি লক্ষণ দেখা যায় তখন স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। যদি পজিটিভ হয় তখন তাকে সরকারি ব্যবস্থাপনা অনুযায়ী নির্দিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’

‘করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির যারা পরিবারের সদস্য, যাদের সঙ্গে তিনি মিশেছেন, বাসার আশেপাশের লোক বা গ্রামের লোক হতে পারে, যেখানে যেখানে গেছেন অর্থাৎ তার সংস্পর্শে যারা আছেন তাদের ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। সুতরাং তাদেরও যদি কোনো উপসর্গ দেখা যায়, সর্দি-কাশি-জ্বর এগুলো দেখা যায় অবশ্যই তারা সঙ্গে সঙ্গে আইইডিসিআরের হটলাইনে যোগাযোগ করবেন। কাউকে ঢাকায় আইইডিসিআরে আসতে হবে না। আইইডিসিআরে যোগাযোগ করার পর তারা জেলা প্রতিনিধিদেরকে নিজস্ব গাড়িতে কিংবা অন্য কোনোভাবে নির্দিষ্ট ঠিকানায় পাঠাবেন। প্রতিনিধি গিয়ে সুরক্ষা নিশ্চিত করে নির্দেশনা অনুযায়ী নমুনা নিয়ে আসবেন। রোগীকে কোথাও যেতে হবে না। রোগীকে আইইডিসিআরেও যেতে বলা হয়নি। কারণ যদি আক্রান্ত কেউ যশোর থেকে ঢাকায় আসেন, তাকে ট্রেনে কিংবা বাসে আসতে হবে। সেক্ষেত্রে অনেক মানুষের মধ্যে তিনি ভাইরাসটি ছড়াবেন। তাই ঘরেই থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বাড়িতে গিয়ে নমুনা নিয়ে আসা হবে। পজিটিভ হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হবে।’

‘এয়ারপোর্ট কিংবা স্থলবন্দর কিংবা নৌবন্দর সবখানে একই নিয়ম। কাউকে কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলার মানে হচ্ছে তিনি ভাইরাসের বাহক হতে পারেন। সুপ্ত অবস্থায় ভাইরাস তার মধ্যে থাকতে পারে। হয়তো তিনি নিজের অজান্তেই বহন করছেন। এটা তো পরীক্ষা করার কোনো উপায় নেই। তাকে কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলার মানে তিনি ঘরে থাকবেন। কোথাও যাবেন না, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিশবেন না, বাইরে যাবেন না, ঘোরাঘুরি করবেন না। তার যদি ১৪ দিনের মধ্যে কোনো লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে আইইডিসিআরকে জানাবেন। এয়ারপোর্ট থেকে বাড়ি যাওয়ার সময়ও করোনা ছড়ানোর একটা ঝুঁকি আছে।’

‘আমরা কেউ জানি না কার মধ্যে এ ভাইরাসটি আছে। ডাক্তারদের পিপিই থাকা খুব জরুরি। কারণ অনেক ডাক্তার ভয় পাচ্ছেন। এখন কোনো সর্দি-কাশির রোগী তার কাছে গেলে তিনি ভয়ে দেখতে চাইছেন না। ভয় তার থাকতেই পারে। চিকিৎসকরা নিরাপদে চিকিৎসা করতে পারছেন না। শুধু চিকিৎসক না। নার্স ও অন্যান্য মেডিকেল টিমের যারা আছেন যেমন ওয়ার্ড বয় বা একটা ট্রলি যে ঠেলবে তারও কিন্তু নিরাপত্তার দরকার আছে।’

‘আমাদের দরকার দুটো জিনিস। চিকিৎসকদের নিরাপত্তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। তারা যেন নিরাপদে চিকিৎসাসেবা দিতে পারেন এজন্য পিপিই দরকার। বিদেশ থেকে ডাক্তার আনার প্রয়োজন আছে কিনা আমি জানি না। তবে, ডাক্তারদের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এটা চালিয়ে যেতে হবে। কারণ পরিস্থিতি দিনদিন যদি আরও খারাপ হয়ে যায় আমাদের কিন্তু সেভাবেই প্রস্তুতি নিতে হবে।’

‘জনগণকে সর্দি কাশি ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। যেমন, যেখানে সেখানে থু থু ফেলা যাবে না। কাশি দিলে টিস্যু, রুমাল ব্যবহার করতে হবে। নিয়মিত হাত ধোয়ার কথা বলা হচ্ছে সাবান দিয়ে। কেউ স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে চাইলে করতে পারেন। না পারলে সাধারণ সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুলেই চলবে। আর সবচেয়ে যেটা জরুরি জনসমাগম যেখানে বেশি হয়, মানুষ ভিড় করে যেসব জায়গায় সেগুলো এড়িয়ে যেতেই হবে।’

‘ইতোমধ্যে সরকার জনসমাগম এড়াতে অনেকগুলো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সবার জন্য একটাই কথা— আপনারা পারতপক্ষে নেহাত প্রয়োজন না হলে বাইরে যাবেন না। বাসায় থাকবেন। বিশেষ করে যারা ঝুঁকিপূর্ণ যেমন বয়স্ক মানুষ বা অন্যান্য রোগে ভুগছেন, স্ট্রোক করেছেন, হৃদরোগ, কিডনির রোগ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি নিচ্ছেন তারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন। আপনারা পারতপক্ষে বাইরে যাবেন না। বাসায় থাকবেন।’

‘দ্বিতীয়ত, কোনো সভা সমাবেশ, মিছিল মিটিং এসবে যতটুকু সম্ভব এড়িয়ে যাবেন। এমনকি গণপরিবহনও। নেহায়েত প্রয়োজন না হলে বাস, ট্রেন, লঞ্চ যতটুকু সম্ভব এড়িয়ে চলাই ভালো। আমরা যেহেতু মুসলিম দেশ। অনেকেই নামাজ বন্ধ করার ব্যাপারে বলছেন। অনেক দেশে প্রথমে জুমার নামাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মুসলিম দেশগুলোতে যেমন সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, মালয়েশিয়াতেও কিন্তু পাঁচ ওয়াক্ত জামাত এড়িয়ে যেতে বলা হয়েছে। ঘরে বসে নামাজ পড়তে বলা হয়েছে। যেহেতু আমরা ধর্মভীরু তাই এ ব্যাপারেও সরকারের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

‘তবে, এ বিষয়ে সরকার কিছু নির্দেশনা কিন্তু ইতোমধ্যে দিয়ে দিয়েছে। কারো যদি সর্দি কাশি জ্বর থাকলে তাকে মসজিদে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। তারা ঘরেই থাকবেন। মসজিদে হাঁচি-কাশি হলে সেটা ছড়াবে। এ কথাগুলো আমাদের প্রচার করতে হবে।’

‘পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আমাদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। লকডাউননের সিদ্ধান্তের বিষয়ের দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে হবে।’

Comments

The Daily Star  | English
Dhaka luxury hotels see decline in clients

Luxury hotels fall silent as business travellers fade away

Luxury hotels in Dhaka are yet to resume normal business activities as foreign and local clients do not feel confident in travelling to the country given that the overall situation is still unstable.

17h ago