করোনা যুদ্ধে রাশিয়ার ফর্মুলা

চীনের সঙ্গে দীর্ঘ সীমান্ত থাকার পরও রাশিয়ায় করোনাভাইরাসের সংক্রামণ খুবই কম এবং দেশটির পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিন্তু কি করে তা সম্ভব হলো!
Russia
মস্কোর করোনাভাইরাস তথ্য কেন্দ্রে ভিডিও কনফারেন্সে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলছেন রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত

চীনের সঙ্গে দীর্ঘ সীমান্ত থাকার পরও রাশিয়ায় করোনাভাইরাসের সংক্রামণ খুবই কম এবং দেশটির পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিন্তু কি করে তা সম্ভব হলো!

প্রায় সব উন্নত দেশ নভেল করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করতে হিমশিম খাচ্ছে। অবরুদ্ধ হয়ে পড়ছে পুরো দেশ, ঘোষণা করতে হচ্ছে জরুরি অবস্থা। তবুও কমছেই না সংক্রামিত এবং মৃতের সংখ্যা।

প্রায় সাড়ে ১৪ কোটি জনসংখ্যার দেশ রাশিয়ায় কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছে ২৫৩ জন এবং মৃতের সংখ্যা এক। যেখানে ছয় লাখ ২৮ হাজার জনসংখ্যার ধনী দেশ লুক্সেমবার্গে আক্রান্ত হয়েছে ৬৭০ জন এবং মারা গেছেন আট জন। ইতালিতে সাড়ে ছয় কোটি মানুষের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছে ৫৩ হাজার ৫৭৮ এবং মারা গেছেন চার হাজার ৮২৫ জন।

সম্প্রতি রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, আগেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে তার দেশ করোনাভাইরাসের ভয়াবহ পরিমাণে সংক্রামণ বন্ধ করতে পেরেছে এবং দেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।

করোনাভাইরাস নিয়ে রাশিয়া অনেক বেশি সতর্কতা অবলম্বন করছে। দেশটিতে সব ধরনের অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। যাতে বেশি মানুষ একসঙ্গে সমবেত হতে না পারে।

সীমান্ত বন্ধ

জানুয়ারিতে প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রামিত রোগী পাওয়া যাওয়ার পরই রাশিয়া ৩০ জানুয়ারি চীনের সঙ্গে থাকা দুই হাজার ৬০০ মাইল সীমান্ত বন্ধ করে দেয়। সেই সঙ্গে তৈরি করে কোয়ারেন্টিন জোন। বিশেষজ্ঞদের মতে শুরুতেই এমন ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে দেশটিতে সংক্রামণের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়নি।

পরীক্ষা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক করোনাভাইরাস প্রতিরোধে পরীক্ষা করার ওপর জোর দিয়েছেন। যেখানে রাশিয়া জানুয়ারি থেকেই জোর দিয়েছে পরীক্ষার ওপর। সামান্যতম লক্ষণ দেখা দিলেই তার পরীক্ষা করা হয়েছে।

রাশিয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি ডা. মেলিতা ভজনোভিচ বলেছেন, ‘পরীক্ষা ও সনাক্ত করা, সংক্রামিত রোগী কাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে তাদের পরীক্ষা করা, আইসোলেশনের মতো ব্যবস্থা যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রস্তাব করেছে সেগুলো রাশিয়ায় শুরু থেকেই ছিল। সেই সঙ্গে ছিল সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, যা সত্যি তুলনামূলকভাবে খুবই দ্রুত শুরু হয়েছিল।’

সিএনএনের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাশিয়ায় এখন পর্যন্ত প্রায় এক লাখ ৫৬ হাজার মানুষের করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র মার্চের শুরুতে পরীক্ষা করা শুরু করলেও রাশিয়া শুরু করেছে ফেব্রুয়ারির শুরুতে। রাশিয়ার বিমানবন্দরগুলো ছিল কঠোর নজরদারির মধ্যে। ইরান, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আসা যাত্রীদের ওপর রাখা হয়েছে বিশেষ নজরদারি।

সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ

রাশিয়ার এলায়েন্স অব ডক্টরস ইউনিয়নের নেতা আনাস্তাসিয়া ভাসিলিভা দাবি করেছেন রাশিয়ার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ করোনাভাইরাসে প্রকৃত মৃতের সংখ্যা কম দেখাচ্ছে। কোনো রোগী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেও নিউমোনিয়া কিংবা একিউট রেসপাইরেটরি ইনফেকশনে মারা গেছেন বলে জানানো হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।

তিনি বলেন, ‘প্রথম যে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী মারা গেছেন তিনি থ্রমবোসিসে মারা গেছেন বলে জানানো হয়েছে। সেটা তো অবশ্যই, সরাসরি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যান না। রোগীরা অন্য কোনো সমস্যা তীব্রতর হয়ে মারা যান বলে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা কম দেখানো খুবই সহজ।’

মস্কোর স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডা. মেলিতা ভজনোভিচ সন্দেহ পোষণ করেছেন আনাস্তাসিয়া ভাসিলিভার এই দাবি নিয়ে।

দেশে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এত কম হওয়া নিয়ে পুতিন বলেছেন, সরকারের কাছে হয়ত প্রকৃত পরিসংখ্যান নেই, কিন্তু কোনো কিছু লুকানো হচ্ছে না।

এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের কাছে হয়তো সম্পূর্ণ পরিসংখ্যানটি নেই। কারণ অনেক সময় রোগীরা তাদের সমস্যা জানায় না এবং অনেক সময় তারা জানেই না যে তারা অসুস্থ। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে যে তথ্য আছে তাই সবাইকে জানানো হচ্ছে।’

Comments

The Daily Star  | English

After OCs, EC orders to transfer UNOs

In the first phase, it asked to transfer all UNOs who have been working in their respective upazilas for more than a year

1h ago