করোনাভাইরাসকে ‘বুড়ো আঙুল’ দেখিয়ে ফুটবল লিগ চলছে যে দেশে

হ্লেবের কথায় কটাক্ষের সুর স্পষ্ট। তবে তার লক্ষ্যবস্তু যে মেসি আর রোনালদো নন, সেটা আলাদা করে বলে না দিলেও চলে।
messi and ronaldo and belarus league
(বাঁ থেকে) মেসি, রোনালদো এবং করোনাভাইরাসকে পাত্তা না দিয়ে শুরু হওয়া বেলারুশ প্রিমিয়ার লিগে অংশ নেওয়া একটি ক্লাব, যারা স্টেডিয়ামভর্তি মানুষের সামনে ফুটবল খেলছে।

‘আপনাকে কেবলমাত্র কাজ করতে হবে, বিশেষত যারা গ্রামে থাকেন।’

‘টেলিভিশন দেখতে ভালো লাগছে, লোকেরা ট্রাক্টর ব্যবহার করে কাজ করছে, কেউ ভাইরাসের বিষয়ে কথা বলছে না।’

‘ট্রাক্টর সবাইকে সুস্থ করে তুলবে, মাঠগুলো সবাইকে রোগমুক্ত করবে।’

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মোকাবিলায় কদিন আগে এমন টোটকা দিয়েছেন বেলারুশের রাষ্ট্রপতি আলেক্সান্দার লুকাশেঙ্কো।

গোটা বিশ্বের মতো ইউরোপেও পড়েছে করোনাভাইরাসের ভয়াবহ প্রভাব। প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা, বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। সতর্কতার অংশ হিসেবে মহাদেশটির সমস্ত ক্রীড়া কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে ফুটবল লিগগুলো। অথচ একেবারে বিপরীত চিত্র বেলারুশে। সেখানে সবকিছু অতিমাত্রায় স্বাভাবিক, মাঠে গড়িয়েছে ফুটবলের নতুন মৌসুমও! করোনাভাইরাসের প্রকোপকে যেন বেলারুশবাসীর ‘থোড়াই কেয়ার’।

এমন বিচিত্র পরিস্থিতিতে দেশটির সাবেক তারকা আলেক্সান্দার হ্লেব, যিনি আর্সেনাল ও বার্সেলোনার হয়ে একসময় মাঠ মাতিয়েছেন, তিনি সময়ের দুই সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি ও ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বেলারুশিয়ান প্রিমিয়ার লিগে খেলতে, ‘লিওনেল মেসি আর ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোও বেলারুশ লিগে খেলতে আসতে পারে। কে জানে? এটাই ইউরোপের একমাত্র জায়গা, যেখানে আপনি ফুটবল খেলতে পারছেন। তখন অন্তত বেলারুশের মানুষ খুশি হবে।’

হ্লেবের কথায় কটাক্ষের সুর স্পষ্ট। তবে তার লক্ষ্যবস্তু যে মেসি আর রোনালদো নন, সেটা আলাদা করে বলে না দিলেও চলে।

পূর্ব ইউরোপের দেশ বেলারুশে একরকম স্বৈরাচারী শাসন চলছে। ১৯৯৪ সাল থেকে ক্ষমতায় আছেন লুকাশেঙ্কো, যিনি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ‘ট্রাক্টর থেরাপি’ আবিষ্কার করে জনগণকে গ্রামাঞ্চলে গিয়ে কাজ করতে উৎসাহ দিচ্ছেন।

করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত ইউরোপে একমাত্র তুরস্কে ফুটবল লিগ চালু ছিল। তারাও গেল বৃহস্পতিবার লিগ থামিয়ে দিয়েছে। সেদিন আলোচনায় বসেছিলেন ইউরোপের সর্বোচ্চ ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা উয়েফার কর্তারাও। কীভাবে চলতি মৌসুম শেষ করা যায় তা নিয়ে হয়েছে কথা-বার্তা।

আর ঠিক একই দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন মৌসুম চালু হয়েছে বেলারুশে। দেশটির ইতিহাসের সেরা ক্লাব বাতে বরিসোভের উদ্বোধনী ম্যাচ দেখতে স্টেডিয়ামের অর্ধেক পূর্ণ করে ফেলেছিলেন দর্শকরা।

এসবের কিছুই মাথায় ঢুকছে না হ্লেবের। ব্রিটিশ দৈনিক দ্য সানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মঙ্গলবার তিনি বলেছেন, ‘সারা বিশ্ব এখন বেলারুশের লিগ দেখছে। সবার উচিত টিভি খুলে বসা আর আমাদের ম্যাচ দেখা।’

‘আমাদের দেশকে ব্যাখ্যা করা খুব কঠিন। সমস্ত লিগ বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু আমরা মনে করছি না যে, এটা একটি সমস্যা। কেন? আমি জানি না।’

‘ইতালি এবং স্পেনে কী ঘটছে, তা এখানকার সকলেই জানেন। এটি মোটেও ভালো কিছু নয়। কিন্তু আমাদের দেশে প্রশাসনের লোকজন মনে করছে যে, সংবাদে যেভাবে দেখানো হচ্ছে, বিষয়টা তত গুরুতর কিছু নয়।’

‘এখানকার অনেক তরুণ এবং শিক্ষার্থীও এরকমটা চিন্তা করছে। আমি আমার পরিবারের সঙ্গে বাড়িতে থাকছি। তবে জরুরি দরকারে বাইরে গেলে আমি দেখতে পাই যে, রাস্তা এবং রেস্তোরাগুলো এখনও মানুষে পূর্ণ।’

বেলারুশে এ পর্যন্ত ৮৪ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মৃতের কোনো সংবাদ এখনও পাওয়া যায়নি। তবে কোনো বড় ধরনের ক্ষতি হওয়ার আগেই ফুটবল লিগ বন্ধ করার প্রয়োজনীয়তা দেখছেন হ্লেব, ‘বেলারুশে কেউ করোনাভাইরাসকে পাত্তা দিচ্ছে না। এটা অবিশ্বাস্য। হয়তো এক সপ্তাহ বা দুই সপ্তাহ পর আমরা থামব। সম্ভবত, আমাদের রাষ্ট্রপতি ভাইরাস কী ঘটায় তা দেখার জন্য অপেক্ষা করছেন।’

‘করোনাভাইরাস চ্যাম্পিয়নস লিগ ও ইউরোপা লিগ বন্ধ করে দিয়েছে। এটা ভালো, কারণ আপনাকে চেষ্টা করতে হবে এবং ভাইরাসকে থামাতে হবে। উয়েফা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

6h ago