চিকিৎসকদের সুরক্ষায় সুরক্ষা সরঞ্জাম বানালো উপজেলা প্রশাসন
প্রয়োজনীয় সংখ্যক ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) সরকারিভাবে সরবরাহ না করায় চিকিৎসকদের পিপিই বানালো মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলা প্রশাসন।
আজ বুধবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা যায়। দুপুরে দেখা যায়, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের (পিপিই) পরে বহির্বিভাগে সেবা দিচ্ছেন সুরক্ষায় সুরক্ষা সরঞ্জাম চিকিৎসক।
তাদের মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস ছিল। সেসময় সেখানে প্রায় ৫০ জন রোগী ছিলেন। তবে নার্সদের পড়নে কোনো সুরক্ষা পোশাক ছিল না। অন্যদিকে, অন্তর্বিভাগে দায়িত্ব পালনরত চিকিৎসকেরা মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস পরে সেবা দিচ্ছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. নুরুল হক বলেন, ‘সরকারি নির্দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য পুরোনো ভবনের মহিলা কেবিনে আইসোলেশন কক্ষ তৈরি করে ২০টি শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে। কিন্তু, এখন পর্যন্ত করোনা শনাক্ত করার কোনো কিট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেনি। একই সঙ্গে এখনো হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও অন্য স্টাফদের কোনো ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) সরকারিভাবে সরবরাহ করা হয়নি।’
‘ফলে জ্বর-সর্দি-কাশির রোগী এলে চিকিৎসক ও নার্সরা আতঙ্কের মধ্যে পড়ছেন। এমন অবস্থায় সরকারের সুরক্ষা পোশাকের জন্য অপেক্ষা না করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত ৬৫ জন চিকিৎসকসহ নার্সদের জন্য হু এর গাইডলাইন মেনে উপজেলা প্রশাসন চিকিৎসকদের জন্য বারবার ব্যবহারযোগ্য সুরক্ষায় সুরক্ষা সরঞ্জাম তৈরি করে দিয়েছেন।’
‘প্রতি পিপিই দাম পড়েছে ১,২০০টাকা। এগুলো বারবার ব্যবহার করা যাবে’ বলে যোগ করেন তিনি।
কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এটিএম ফরহাদ চৌধুরৗ বলেন, ‘দুর্যোগ তহবিল থেকে আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি যেন চিকিৎসার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সুরক্ষা করা যায়।’
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নিরাপত্তামূলক পোশাকের অভাবে ঝুঁকিতে রয়েছেন মৌলভীবাজারের ডাক্তার নার্সসহ সংশ্লিষ্টরা। প্রাথমিকভাবে ৫,০০০ পিপিইর চাহিদাপত্র পাঠানো হলেও মিলেছে মাত্র ১০০। তা নিয়ে চিকিৎসকদের অভিযোগ, এগুলো নিম্নমানের।
মৌলভীবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাস থেকে ডাক্তার, নার্সসহ সংশ্লিষ্টদের সুরক্ষা দিতে ৫,০০০ পিপিইর চাহিদাপত্র দেওয়া হয়। কিন্তু এসেছে মাত্র ১০০।
গত ২৩ মার্চ রাতে এই ১০০ পিপিই সিভিল সার্জন কার্যালয়ে এসে পৌঁছালে পরদিন তা বিতরণ করা হয় জেলার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারদের মধ্যে।
এই ১০০ পিপিইর মধ্যে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালের চিকিৎসকদের ২০টি, সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পাঁচটি, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঁচটি, জেলা সদরে বক্ষব্যাধি হাসপাতালে পাঁচটি এবং জেলায় বাকি ছয়টি উপজেলায় ১০টি করে পিপিই দেয়া হয়েছে।
তবে এই ১০০ পিপিই শুধু ডাক্তারদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। করোনা রোগীসহ অন্যদের সার্বক্ষণিক দেখভালের দায়িত্বে থাকা হাসপাতালের নার্স, আয়া, ওয়ার্ডবয়সহ টেকনিশিয়ানরা এখনো কোনো নিরাপত্তা পোশাক পাননি।
ডাক্তাদের মাঝে বিতরণ করা পিপিইর মান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা। মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালের এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতামত হচ্ছে, একটি পিপিই একবার পড়া যাবে। কিন্তু, আমাদেরকে বলা হচ্ছে এই একটিই প্রতিদিন জীবাণমুক্ত করে দেওয়া হবে। এটিই বারবার পড়তে হবে।’
এই পিপিইর মান সন্তোষজনক নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে পিপিই না পেয়ে নিজেদের নিরপত্তা নিয়ে শঙ্কিত মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের ডিপ্লোমা মেডিকেল ফেকাল্টির (ডিএমএফ) ইন্টার্নরা। তারা নিরাপত্তা সামগ্রী না পেয়ে গতকাল মঙ্গলবার থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন।
তাদের সংঠনের সাধারণ সম্পাদক জাভেদ হোসেন ইমন বলেন, ‘আমরা ৬১ জন শিক্ষার্থী করোনার আতঙ্ক নিয়ে চিকিৎসা দিয়ে আসছি। বারবার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পিপিই নিয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে। তারা প্রতিবারই ২-৩ দিনের সময় নিচ্ছেন। কিন্তু, দিতে পারছেনা না।’
‘আমাদের জীবনের নিরাপত্তার জন্য যতক্ষণ না পিপিই পাচ্ছি আমরা কর্মবিরতি পালন করব,’ যোগ করেন তিনি।
মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন তউহীদ আহমদ বলেন, ‘জেলায় পিপিই কতগুলো লাগবে তা নির্ভর করছে আমাদের রোগীর চাপ কেমন হবে তার ওপর। প্রাথমিকভাবে আমরা পাঁচ হাজার পিপিইর চাহিদাপত্র পাঠিয়েছি। এখন পর্যন্ত যা পেয়েছি তা প্রয়োজনের তুলনার খুবই নগন্য। আমরা সরকারি এবং বেসরকারি উপায়ে তা সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি।’
পিপিইর মানের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের যা আছে তা নিয়েই আমাদের লড়তে হবে। আমরা যা পেয়েছি তা দিয়েই রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
Comments