কুকুরের জন্য ভালোবাসা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) রাজু ভাস্কর্যের সামনে এক ব্যক্তি রাস্তায় বসে কুকুরকে হাতে তুলে খাওয়াচ্ছেন। পিঠে ‘পোভিসেপ’ মাখিয়ে দিচ্ছেন। নরম স্বরে বলছেন, ‘এমন করে না বাবু। একটু জ্বলবে। এক্ষুণি ঠিক হয়ে যাবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) রাজু ভাস্কর্যের সামনে এক ব্যক্তি রাস্তায় বসে কুকুরকে হাতে তুলে খাওয়াচ্ছেন। পিঠে ‘পোভিসেপ’ মাখিয়ে দিচ্ছেন। নরম স্বরে বলছেন, ‘এমন করে না বাবু। একটু জ্বলবে। এক্ষুণি ঠিক হয়ে যাবে।’

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রায় শূন্য ক্যাম্পাসে মানুষ-প্রাণীতে অদ্ভুত এই ভালোবাসার দেখা মেলে। তিন-চারটে কুকুর ওই ব্যক্তির পাশে ঘুরাঘুরি করছে। তিনি পরম মমতায় কুকুরগুলোকে বিস্কুট খাইয়ে দিচ্ছেন। ভাগ পাওয়ার আশায় কয়েক ডজন কাকও জড়ো হয়েছিল সেখানে।

রফিক আহমেদ ডলার নামের ওই ব্যক্তি জানালেন, কিছুদিন আগে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেখেন যে, সবাই চলে যাচ্ছে কিন্তু এই অবলা প্রাণীদের কি হবে? বিষয়টি তাকে খুব নাড়া দিয়েছিল। তারপর থেকে গত চার দিন ধরে তিনি ক্যাম্পাসে আসছেন। নিয়ম করে দুপুরের দিকে বিস্কুট-পানি খাওয়াচ্ছেন কুকুরগুলোকে।

ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসায় করা রফিক আহমেদ থাকেন লালবাগ এলাকায়। জানালেন, ‘ব্যাগে করে শুকনো খাবার নিয়ে ঘুরে বেড়ানো আমার অভ্যাস। যেখানে কোনো কুকুরকে ক্ষুধার্ত মনে হয়, আমি খাওয়াই। লালবাগ এলাকার সব কুকুরই আমাকে চেনে।’

রফিক আহমেদের পাশে একটি রিকশা দাঁড় করানো ছিল। রিকশাজুড়ে বিস্কুটের খালি প্যাকেট। বিস্কুটের পরিমাণ শেষের দিকে। জানালেন, গতকাল ক্যাম্পাসের সূর্যসেন হল, বিজয় একাত্তর হল এলাকার কুকুরগুলোকে ২০০ প্যাকেট বিস্কুট খাইয়েছেন তিনি।

রফিক আহমেদ বলছিলেন, ‘গত বুধবার তো আমার মা তার মাথার দিব্যি দিয়েছেন যেন এগুলো না করি। তবে আমার স্ত্রী খুব সহায়ক। তিনি এসব খাবার-দাবার গুছিয়ে দেন।’

যতদিন সামর্থ আছে, রফিক আহমেদ অবলা প্রাণীদের সহযোগিতা করে যেতে চান। কিন্তু গ্লাভস আর মাস্ক পড়ে নিজের স্বাস্থ্য-সুরক্ষা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কোনো প্রাণী থেকে করোনাভাইরাস ছড়াচ্ছে সেটা প্রমাণিত নয়। আশা করি কিচ্ছু হবে না, ইনশাল্লাহ।’

রফিক আহমেদ যার ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখে ক্যাম্পাসে এসেছেন, তিনি ইসতিয়াক আহমেদ হৃদয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে স্নাতকোত্তর করছেন। থাকেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলে।

যোগাযোগ করা হলে ইসতিয়াক আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘হল ছাড়ার সময় হলের বিড়ালগুলো দেখে মনে হলো, আমরা সবাই চলে গেলে এগুলোকে কে দেখবে। তাই সিদ্ধান্ত নিই এদের জন্য কিছু করার। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার পর অনেকেই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। রফিক আহমেদের সঙ্গেও সেভাবেই পরিচয়।’

ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘আমরা আর্থিক সহযোগিতা নিচ্ছি না। নিজেদের টাকাতেই কুকুর-বিড়ালগুলোকে খাওয়াচ্ছিলাম। তবে অনেকে ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে খাবার পাঠান। সেগুলো বিতরণ করার জন্য আমি থেকে যাই। আমার স্কুলের বন্ধু মাহাবুব বাবুকে সঙ্গে নিয়ে দুদিন খাবার দিয়েছি। দুদিন ধরে কিছু হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণের জন্য গ্রামে এসেছি। আসার সময় রফিক আহমেদেকে বলে এসেছিলাম কুকর-বিড়ালগুলোর দেখভাল করার জন্য। তিনি কথা রেখেছেন। আবার ঢাকায় ফিরে উনার সঙ্গে যোগ দেব।’

Comments

The Daily Star  | English

S Alam sons: They used fake pay orders even to legalise black money

Ashraful Alam and Asadul Alam Mahir, two sons of controversial businessman Mohammed Saiful Alam, deprived the state of Tk 75 crore in taxes by legalising Tk 500 crore in undisclosed income, documents obtained by The Daily Star have revealed.

1h ago