করোনাভাইরাস

অস্ট্রেলিয়া কি ভুল পথে হাঁটছে?

সিডনির আন্তর্জাতিক বন্দরে অবতরণ করা ‘রাবি প্রিন্সেস’ জাহাজ। ১৯ মার্চ, ২০২০। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলেছে জ্যামিতিক হারে। পরিসংখ্যান বলছে, ইতালির মতো মহাবিপর্যের দিকে নিয়ত এগিয়ে চলেছে প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ের এই দেশ। উৎকণ্ঠা নিয়ে বিপর্যস্ত ও অনিশ্চিত জীবনযাপন করছেন দেশটির আড়াই কোটি মানুষ। সরকারের বেশ কয়েকটি ভুল সিদ্ধান্ত করোনা বিপর্যয়কে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে বলে স্থানীয় মিডিয়া ও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের প্রতি সাধারণ মানুষের ক্ষোভও বাড়ছে।

গত ২০ মার্চ নিউজিল্যান্ড থেকে ‘রাবি প্রিন্সেস’  নামে একটি জাহাজ এসে অবতরণ করে নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের রাজধানী সিডনির আন্তর্জাতিক বন্দরে। ওই জাহাজে ৩ হাজার ৬৭৭ জন যাত্রী ছিলেন। এর মধ্যে, চার জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন। এই খবরটি জানবার পর ওই জাহাজটি বন্দর থেকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানায় দেশের মানুষ। তাদের যুক্তি ছিল, এই করোনাকালে পৃথিবীর বহু দেশ তাদের বন্দরে আন্তর্জাতিক জাহাজ অবতরণের অনুমতি দিচ্ছে না। তা ছাড়া, ইতোমধ্যেই অস্ট্রেলিয়া আন্তর্জাতিক ফ্লাইট অবতরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। কিন্তু, সরকার জনগণের দাবিকে উপেক্ষা করে ওই জাহাজের সব যাত্রীকে সিডনিতে প্রবেশের অনুমতি দেয়। দেশের মানুষ আশঙ্কা করছেন, যেহেতু করোনা একটি ছোঁয়াচে ভাইরাস, তাই রাবি প্রিন্সেসে আক্রান্ত চার যাত্রী থেকে ভাইরাসটি সব যাত্রীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর ৩ হাজার ৬৭৭ জন যাত্রী সিডনিতে অবতরণ করে এই ভাইরাস ছড়িয়ে দেবে সমগ্র নগরীতে। এখন প্রমাণিত হয়েছে, তাদের আশঙ্কা অমূলক ছিল না।

২০ মার্চ ওই জাহাজটি অবতরণের দিন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬৪১। মাত্র ১০ দিনে তা বেড়ে সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৮০৯ জনে। এর মধ্যে, নিউ সাউথ ওয়েলসে ১ হাজার ৭৯১ জন, ভিক্টোরিয়ায় ৬৮৫ জন, কুইন্সল্যান্ডে ৬২৫ জন, সাউথ অস্ট্রেলিয়ায় ২৮৭ জন, ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ায় ২৭৮ জন এবং অন্যান্য রাজ্যে ১৪৩ জন।

গত ২২ মার্চ আরও চারটি জাহাজ এসে অবতরণ করে সিডনি বন্দরে। যাত্রী সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৭০০। এই জাহাজের সব যাত্রীকেও সিডনি শহরে প্রবেশের অনুমতি দেয় কর্তৃপক্ষ। প্রতিবাদের ঝড় উঠলেও তা উপেক্ষা করে সরকার। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অস্ট্রেলিয়ান সরকারের অদূরদর্শিতার কারণে দেশটি মহাবিপর্যয়ে পড়তে যাচ্ছে।

এখন পর্যন্ত সরকার স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেনি। বড় শহরগুলো লকডাউন না করার ফলে কেউই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে পারছেন না। এখনও সমুদ্র সৈকতগুলোতে অজস্র মানুষের ভিড় রয়েছে। দ্বীপপুঞ্জের দেশ অস্ট্রেলিয়ায় সমুদ্র সৈকতগুলোও লকডাউন করার তীব্র দাবি উঠেছে। অথচ সরকার সাধারণ মানুষের সব দাবিকে উপেক্ষা করে আড়াই কোটি জনগোষ্ঠীকে ভয়ঙ্কর সময়ের দিকে টেনে নিয়ে চলেছে।

রাষ্ট্র বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জনগণের দাবিকে উপেক্ষা করার মাশুল এই সরকারকে দিতে হবে আগামী নির্বাচনে।

আকিদুল ইসলাম: লেখক, সাংবাদিক

[email protected]

 

(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নিবে না।)

Comments

The Daily Star  | English
BNP demands national election by December 2025

2014, 2018, 2024 polls: BNP to sue former ECs, officials today

BNP is set to file a case against officials involved in the last three national elections with Sher-e-Bangla Nagar police today. The party will also lodge a formal complaint with the Election Commission in this regard, BNP leaders said yesterday.  

2h ago