কোলাহলশূন্য সৈকতে ফিরছে ‘সাগরলতা’
সারি সারি সাগরলতা কক্সবাজারের সৈকতের বুকজুড়ে ছড়িয়ে গেছে। বেলাভূমির কোথাও ফুটেছে সাগরলতার ফুল, কোথাও বালিয়াড়ির গহীনে ছড়িয়ে যাচ্ছে এর শেকড়। অথচ সপ্তাহ দুয়েক আগেও কেউ এমন দৃশ্য কল্পনা করতে পারেনি।
পর্যটকদের ভিড়ে সৈকত থেকে হারিয়ে গিয়েছিল এখানকার বাস্তুতন্ত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই সদস্য। সৈকতে পর্যটকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাত্র ১০ দিনের মধ্যে ফিরে এসেছে সাগরলতা।
এখন কক্সবাজারের দরিয়ানগর, লাবনী, কলাতলী ও সুগন্ধা পয়েন্টে দেখা মিলছে রেলরোড ভাইন নামের এ চমৎকার উদ্ভিদের।
কক্সবাজারের দরিয়ানগরের বাসিন্দা ও সংবাদকর্মী গিয়াস উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি সাগরলতাকে ঘিরে বালিয়াড়ি তৈরি হয়। আর বালিয়াড়িকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠত সাগর কিনারের জনপদ।
বালিয়াড়িতে গড়ে ওঠা এসব পাড়াকে ডেইলপাড়া বলা হয়। কক্সবাজারে এরকম অনেকগুলো ডেইলপাড়া আছে। সাগরলতার সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস থেকে সমুদ্রতীরকে রক্ষা করে। ফলে, ভাঙন থেকে মানুষ রক্ষা পায়। ক্রমাগত দূষণ, দখলে এখন সাগরলতা দেখা মেলে না। বালিয়াড়িগুলো দখল করে হয়েছে হোটেল, বলেন তিনি।
কক্সবাজারভিত্তিক পরিবেশবাদী সংগঠন ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস) এর প্রধান নির্বাহী বলেন, জনমানবহীন সৈকতে মনের আনন্দে বাড়ছে সাগরলতা। অনিয়ন্ত্রিত পর্যটনের চাপে এগুলো বলতে গেলে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল।
তিনি বলেন, যেহেতু এগুলো এখন ফিরে আসছে, সরকারের উচিত হবে পর্যটক নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেওয়া। আর পরিবেশ রক্ষায় আরও মনোযোগী হওয়া যাতে কক্সবাজার সৈকত বিদেশি পর্যটক আকর্ষণ করতে পারে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও বনবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. কামাল হোসেন বলেন, সাগরলতা হলো সৈকতের সুস্থতার পরিচায়ক। এগুলো বালিকে ধরে রেখে বালিয়াড়ি সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে, তাই এ উদ্ভিদকে সৈকতের বাস্তুতন্ত্রের অগ্রপথিক বলা হয়।
‘মানুষ সরে গেছে তাই এগুলো আবার ফিরে আসছে সৈকতে যা খুবই আশাব্যঞ্জক দিক। মানুষের অতি আনাগোনায় সাগরতলা হারিয়ে যায়। তাই আমাদের উচিত হবে সৈকতের সুস্থতা ধরে রাখতে এখনই পদক্ষেপ নেয়া,’ তিনি বলেন।
Comments