দূরত্ব বজায় রাখুন, ভিড় এড়িয়ে চলুন
করোনাভারাসের সংক্রমণ বন্ধ করতে বিশ্বজুড়ে নজিরবিহীন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সামাজিক বিচ্ছিন্নতা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশেও ১০ দিনের বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে যা এরই মধ্যে আরও পাঁচ দিন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দেশবাসীর জন্য করণীয় সম্পর্কে জানিয়েছেন স্বনামধন্য মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। পার্ক, মার্কেটসহ জনসমাগম হয়, এমন জায়গা ও ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে। অবশ্যই যার যার ধর্ম পালন করবেন। তবে বর্তমান বাস্তবতায় ঘরে বসে ধর্ম পালন করা ভালো। আলেম–ওলামাদের সঙ্গে কথা বলে জামাতে নামাজ সীমিত করলে খুব ভালো। তবে অবশ্যই মসজিদ বন্ধ থাকবে না। ইমাম মুষ্টিমেয় লোকজনকে নিয়ে নামাজ পড়াবেন। মসজিদের মেঝে বারবার পরিষ্কার করা উচিত। রাসুল (সা.)–এর আমলে মহামারি দেখা দিলে ঘরে বসে নামাজ পড়ার নির্দেশনা ছিল।
মিরপুরে মারা যাওয়া ব্যক্তির বাসার কেউ বিদেশফেরত ছিলেন না। ধারণা করা হচ্ছে, মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়ে তিনি সংক্রমণের শিকার হয়েছেন। পরে মসজিদ কমিটির সম্পাদকও মারা গেছেন। তাই বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে হবে। অন্য ধর্মাবলম্বীরা যেমন মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে না গিয়ে ঘরে বসে প্রার্থনা করবেন। বাইরে থেকে এলে অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ঘরে ঢুকবেন। সর্দি–কাশি হলেই করোনা হয়েছে, এমন ধারণার কোনো কারণ নেই। তবে বয়স্ক মানুষ, অন্য রোগী যেমন হৃদ্রোগ, কিডনি রোগ, উচ্চ রক্তচাপ আছে, এমন রোগীর ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
কাগজ বা পত্রিকার মাধ্যমে করোনা ছড়ায় না, এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। তাই পত্রিকা নিশ্চিন্তে পড়তে পারেন। অনেকে শুধু আতঙ্কিত হচ্ছেন, ভয় পাচ্ছেন। সতর্কতামূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে আমরা এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারব। বিদেশ থেকে অনেক মানুষ চলে এসেছেন। তাদের প্রতি অনেকে রূঢ় আচরণ করছেন, এমনটি দেখা যাচ্ছে। আমি বলব, ভয় পেয়ে পরিবারের টানে অনেকে চলে এসেছেন। যেহেতু চলেই এসেছেন, এখন তাঁদের হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা জরুরি। তাঁদের প্রতি সহানুভূতি, সহমর্মিতামূলক আচরণ করতে হবে।
সরকার ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটির ঘোষণা দিয়েছে। এ সুযোগে অনেকে শহর থেকে গ্রামে বেড়াতে গিয়েছেন। আমাদের মনে রাখতে হবে, এ ছুটি বিনোদনমূলক নয়। যাঁরা উৎসব করে গ্রামে চলে গেছেন, তাঁদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। সরকার ১০ দিনের লকডাউন তথা ছুটি ঘোষণা করেছে। এটি ১৪ দিনের করা উচিত।
রিকশাওয়ালাসহ দিনমজুর, দিনে আনে দিনে খায়, এমন মানুষদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতে সরকারের পাশাপাশি বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত। হতদরিদ্রদের জন্য খাবার পৌঁছে দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। তা না হলে জীবিকার তাগিদে তাঁরা রাস্তায় বের হবেন, কোনো ব্যবস্থায়ই কাজ হবে না।
চিকিৎসক, নার্সসহ চিকিৎসাসংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যকর্মী, সাংবাদিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে আছেন। এ সময় চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা চিকিৎসা দিতে গিয়ে অবশ্যই নিজেদের সুরক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। এখন পিপিইসহ সুরক্ষাসামগ্রীর যথেষ্ট মজুত আছে। এগুলো উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে দিতে হবে। এখন অধিকাংশ মানুষ গ্রামে থাকায় উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও হাসপাতালে লোকজন যাবে। তাই তাদের সুরক্ষার বিষয়টি আগে দেখতে হবে। জনগণকে তথ্য জানাতে সাংবাদিকেরা বিভিন্ন করোনা রোগী, মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই তাঁদের নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে নিজের সর্বোচ্চ সুরক্ষা নিশ্চিত করে দায়িত্ব পালন করতে হবে। ঝুঁকিতে আছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যেমন পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, সেনাবাহিনী এমনকি আনসার সদস্যরা জনগণকে সচেতন করতে মানুষের সংস্পর্শে যাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁদের নিজেদের সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করে কাজ করতে হবে।
Comments