আন্তর্জাতিক

পিপিই ছাড়াই করোনা পরীক্ষা, দক্ষিণ কোরিয়ার আরেক অভিনব উদ্ভাবন

করোনাভাইরাস মহামারিতে বিশ্বব্যাপী চলছে জরুরি মেডিকেল সামগ্রীর সংকট। স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষায় পিপিই, গ্লাভস, মাস্ক সরবরাহ করতে গিয়ে উন্নত দেশগুলোও হিমশিম খাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে এক ধরনের বুথ চালু করেছে দক্ষিণ কোরিয়া যার ভেতরে থেকেই স্বাস্থ্যকর্মীরা সম্ভাব্য আক্রান্তদের নমুনা সংগ্রহ করতে পারছেন। ইতিমধ্যেই করোনা মোকাবিলায় দুর্দান্ত সাফল্যও দেখিয়েছে দেশটি।
বুথের ভেতর থেকেই সম্ভাব্য করোনাক্রান্তের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করছেন দক্ষিণ কোরিয়ার স্বাস্থ্যকর্মী। ছবি: কোরিয়ান হেরাল্ড

করোনাভাইরাস মহামারিতে বিশ্বব্যাপী চলছে জরুরি মেডিকেল সামগ্রীর সংকট। স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষায় পিপিই, গ্লাভস, মাস্ক সরবরাহ করতে গিয়ে উন্নত দেশগুলোও হিমশিম খাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে এক ধরনের বুথ চালু করেছে দক্ষিণ কোরিয়া যার ভেতরে থেকেই স্বাস্থ্যকর্মীরা সম্ভাব্য আক্রান্তদের নমুনা সংগ্রহ করতে পারছেন। ইতিমধ্যেই করোনা মোকাবিলায় দুর্দান্ত সাফল্যও দেখিয়েছে দেশটি।

সংবাদমাধ্যম দ্য কোরিয়া হেরাল্ড জানায়, দক্ষিণ কোরিয়ার বুশান অঞ্চলের একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে করোনা পরীক্ষার জন্য এক ধরনের বুথ চালু করেছেন সেখানকার এক চিকিৎসক। সেই বুথের ভেতর থেকে স্বাস্থ্য কর্মীরা নমুনা সংগ্রহ করবেন। তাই, তাদের কোনো প্রকার ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের (পিপিই) প্রয়োজন হবে না।

ডা. আহ্ন ইয়ো হ্যুন বলেন, ‘স্বাস্থ্যকর্মীদের পিপিইর প্রয়োজন নেই। কারণ তারা বুথের ভেতরে থাকবেন। বুথের স্বচ্ছ কাঁচের দেয়ালে স্থায়ীভাবে গ্লাভস সংযুক্ত করা আছে। গ্লাভসে হাত ঢুকিয়ে ছিদ্র দিয়ে তারা বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা রোগীর কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করবেন।’

৪১ বছর বয়সী এই চিকিৎসক জানান, এই ধরনের বুথ স্বাস্থ্যকর্মী ও রোগী উভয়কেই সুরক্ষিত রাখবে। স্বাস্থ্যকর্মীরা নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারবেন।

এই বুথ একদিকে যেমন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে, অন্যদিকে পরিবেশ দূষণও কমায়। অনেকক্ষেত্রে একটি পিপিই একবারের বেশি ব্যবহার করা যায় না। ফলে, বিপুল পরিমাণ মেডিকেল বর্জ্য তৈরি হয় যেগুলো পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। সবসময় পিপিই গায়ে দেওয়া, নিয়ম অনুযায়ী পরিবর্তন, সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অপসারণ করতে গিয়ে প্রচুর অর্থ ও সময়ের প্রয়োজন হয়।

তাই, এ ধরনের বুথের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী পিপিইর যে সংকট চলছে, তা থেকে নিস্তার পাওয়া যাবে। করোনার নমুনা সংগ্রহ সাশ্রয়ী হবে।

ডা. আহ্ন আরও জানান, ‘সারা শরীরে পিপিই পরার কিছুক্ষণের মধ্যেই দমবন্ধ লাগতে পারে। তার উপর গরম বাড়ছে। গরমের মধ্যে সারাক্ষণ এগুলো পরে থাকা খুবই কষ্টকর। অন্যদিকে এই বুথগুলো বায়ুরোধী—বাইরে থেকে বাতাস ঢুকতে পারে না, অর্থাৎ বাতাসের মাধ্যমে সংক্রমণেরও ভয় নেই।’

বুথের নিচে চার কোণায় চারটি চাকা বসানো হয়েছে। জীবাণুমুক্ত করার জন্য বুথগুলোকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায়। আবার কোনো রোগীর নমুনা পরীক্ষার জন্য অন্য জায়গায় যাওয়ার প্রয়োজন হলে সেখানেও তুলে নিয়ে যাওয়া যায়। বুথগুলো গ্লাভসসহ জীবাণুমুক্ত করতে ৫-১০ মিনিট সময় লাগে বলে জানান ডা. আহ্ন।

সিউলের বোরামেই মেডিকেল সেন্টারেও পরীক্ষামূলকভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এ ধরনের একটি গ্লাভযুক্ত স্বচ্ছ কাচের দেয়াল ব্যবহার করা হচ্ছে। ফেব্রুয়ারির শুরু থেকেই এই ব্যবস্থা চালু হয়েছে বলে জানান সেখানকার কর্মীরা।

প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) ব্যবহার করে সহজ ও সফলভাবে করোনাভাইরাস মোকাবিলা করছে দেশটির স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো। মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে রোগীর লক্ষণ, ভ্রমণের ইতিহাসসহ অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব থাকলেও রোগ নির্ণয় যেন থেমে না থাকে সেজন্য রোবট তৈরি করেছে সিউলের অন্য একটি হাসপাতাল। স্বাস্থ্যকর্মীর সাময়িক অনুপস্থিতিতে রোগীর শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহের পাশাপাশি হাসপাতালটি জীবাণুমুক্ত করার জন্যও ব্যবহৃত হচ্ছে রোবট। ফলে, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের আর স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হচ্ছে না।

আগে থেকেই কিডনি, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের মতো অন্যান্য রোগে আক্রান্তরা করোনাভাইরাসের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে তাই তাদের জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে দেশটি। দক্ষিণ কোরিয়ার সর্বোচ্চ আক্রান্ত অঞ্চল দেইগুতে রোগীরা সরাসরি চিকিৎসকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলতে পারেন। রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী কাছাকাছি ফার্মেসি থেকে তাদের জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়, ডিজিটাল পদ্ধতিতে ওষুধের ব্যবস্থাপত্র লিখা হয়।

ডা. আহ্ন বলেন, ‘অধিকাংশ ক্ষেত্রে চিকিৎসকরাই রোগী দেখার জন্য সুবিধাজনক উপায়গুলো বের করেছেন। কারণ তারা জানেন প্রতিদিন তাদের কী কী অসুবিধায় পড়তে হয়। আশা করি, এ সংকট মোকাবিলায় এ ছোট ছোট ধারণাগুলো ভবিষ্যতে আরও বেশি কাজে আসবে।’

Comments

The Daily Star  | English

When the system develops rust, police can see even dead men running

The dead are thought to be free from mortal matters. But are they? Consider Amin Uddin Mollah. The Gazipur man has long since died, on January 25, 2021, to be precise, and yet he “took part” in attacking police personnel with a bomb on the night of October 28, 2023

1h ago