হাটে জরিমানা করেও ঠেকানো যাচ্ছে না জনসমাগম
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ১১ এপ্রিল পর্যন্ত দেশে ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। বন্ধ করা হয়েছে জরুরি সেবা ছাড়া অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ সময়ে সবাইকে অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না গিয়ে ঘরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। লালমনিরহাট শহরে এ নির্দেশনা মানা হলেও গ্রামগুলোতে মানা হচ্ছে না।
শহরে ওষুধ ও খাদ্যসামগ্রীর দোকান ছাড়া সবকিছুই বন্ধ রয়েছে। কিন্তু, গ্রামগুলোতে সবকিছুই চলছে আগের মতো। শহরের ওষুধের দোকানগুলোতে মানা হচ্ছে নিরাপদ দূরত্ব। কিন্তু, গ্রামের রাস্তা-ঘাটেও মানা হচ্ছে না এ নির্দেশনা। এ ছাড়া, গ্রামের সবগুলো হাট-বাজার আগের মতোই বসছে। এমনকি কোন কোন হাটে অতিরিক্ত জনসমাগম দেখা যাচ্ছে।
গতকাল শুক্রবার লালমনিরহাট জেলার পাঁচটি উপজেলার বেশিরভাগ গ্রামগুলোতেই হাট বসে। গতকাল আদিতমারী উপজেলার ভাদাই ইউনিয়নের বুড়িরহাটে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে গ্রামের মানুষের উপচে পড়া ভিড়। একজন আরেকজনের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে কেনাকাটা করছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পাঁচটি উপজেলার মধ্যে লালমনিরহাট সদরের দুরাকুটি; আদিতমারীর মহিশখোচা, হাজিগঞ্জ, পলাশি, ভেলাবাড়ি এবং কালীগঞ্জের কাকিনা, চাপারহাটসহ বেশিরভাগ গ্রামেই একই চিত্র।
তবে, লালমনিরহাট শহরের চিত্র ভিন্ন। সেখানে তেমন কোনো লোকজনকে বাইরে দেখা যায়নি। রাস্তা-ঘাট প্রায় ফাঁকা।
স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, গ্রামের মানুষকে এখন থেকে সঠিকভাবে সচেতন করা না হলে এবং জনসমাগম থেকে ঠেকানো না গেলে ভবিষ্যতে এ জটলাই দেশের জন্য বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়াতে পারে।
আদিতমারী উপজেলার ভাদাই গ্রামের কৃষক আজিজুল ইসলাম (৬২) জানান, তারা করোনা সম্পর্কে জানেন ও সচেতন। সরকারি নির্দেশে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করতে বলা হয়েছে। কিন্তু, তারা সে নির্দেশনা মানতে পারছেন না। কারণ, তাদেরকে হাটে আসতে হয়।
তিনি বলেন, ‘হাটে না আসলে কীভাবে জিনিসপত্র কেনাবেচা করবো? আর জিনিসপত্র কেনাবেচা না করলে তো আমরা বাঁচতে পারবো না। তাই বাধ্য হয়েই হাটে এসে ঠেলাঠেলি করেই চলাফেরা করতে হয়।’
ভাদাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রোকনুজ্জামান রোকন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘হাট বসলে তো মানুষজন আসবেই। কারণ, হাটকে ঘিরে গ্রামের মানুষ তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের চাহিদা মেটায়। আমি গ্রামের মানুষকে জনসমাগম স্থানে না যেতে বলেছি। কিন্তু, আমার কথা কে শোনে?’
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গ্রামের হাট-বাজারগুলোতে জনসমাগম ঠেকানো যাচ্ছে না। স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিরা নিয়মিত এসব হাট-বাজারে গিয়ে জনসমাগম ঠেকাতে সচেতনতা-সতর্কতামূলক প্রচারণা চালাচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও জরিমানাও করা হচ্ছে। কিন্তু, তাতেও কোনো কাজ হচ্ছে না। এ ব্যাপারে আরও কঠোর না হলে গ্রামের হাট-বাজারগুলোতে জনসমাগম ঠেকানো যাবে না।’
Comments