করোনার ঝুঁকি উপেক্ষা করে ঢাকামুখী মানুষ

করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি উপেক্ষা করে রাজধানীমুখী হচ্ছে মানুষ। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় নিম্ন আয়ের মানুষ, বিশেষত পোশাক কারখানার শ্রমিকরা ট্রাকে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে।
গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ট্রাকে বরিশাল থেকে রাজধানী ঢাকার পথে রওনা দিয়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। ছবি: স্টার

করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি উপেক্ষা করে রাজধানীমুখী হচ্ছে মানুষ। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় নিম্ন আয়ের মানুষ, বিশেষত পোশাক কারখানার শ্রমিকরা ট্রাকে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে।

আজ শনিবার সকাল থেকে ঢাকার প্রবেশপথে ছিল উপচে পড়া ভিড়। লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকলেও পাটুরিয়া ঘাটে ফেরি চলছে। সকাল থেকেই ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে গাদাগাদি করে পোশাক শ্রমিকদের এই রুট দিয়ে ফিরতে দেখা যায়।

কয়েকজন শ্রমিক বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে পোশাক কারখানা ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছিল কর্তৃপক্ষ। আগামীকাল থেকে কাজে যোগ দিতে হবে। তাই কষ্ট করে হলেও ফিরতে হচ্ছে।

আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাবেদ মাসুদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, কারখানা খোলা থাকলে শ্রমিকদের যেতে হবে। আমাদের নির্দেশনা হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে সচেতন করা।

এ প্রসঙ্গে আশুলিয়া সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ বলেন, ট্রাক বা পিকআপ ভ্যানে যাত্রী পরিবহন করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আমাদের বরিশাল সংবাদদাতা জানান, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ট্রাকে বরিশাল থেকে রাজধানী ঢাকার পথে রওনা দিয়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। তারা ঢাকা ও এর আশেপাশের পোশাক কারখানায় কাজ করেন। বেসরকারি চাকরিজীবী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন। বাস বন্ধ থাকায় ট্রাকই এখন একমাত্র ভরসা। মাওয়া থেকে স্পিড বোটে পদ্মা পাড়ি দিয়ে তারা ঢাকায় ফিরবেন। বরিশালের নথুল্লাবাদ, কাশীপুর চৌমাথা, রহমতপুর, গড়িয়ার পারসহ বিভিন্ন এলাকায় কয়েকশ মানুষকে এভাবে পিকআপ ভ্যান ও ট্রাকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিতে দেখা যায়।

আলমগীর (৩৫) নামে এক যাত্রী জানান, তিনি ঢাকায় বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। আগামীকাল থেকে অফিস চালু হওয়ার কথা। বাকেরগঞ্জ থেকে ঢাকা যাচ্ছেন ফাতেমা (৩৫)। তিনি বলেন, কাল থেকেই পোশাক কারখানা চালু হবে।

বরিশাল মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার খায়রুল হাসান বলেন, ‘আমরা শুনেছি আগামীকাল থেকে বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানা খোলা আছে। তাই মানুষ এভাবে মরিয়া হয়ে যাচ্ছে। আমরা তাদের সতর্ক করার চেষ্টা করছি, ১২টি যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলাও দিয়েছি।’

ময়মনসিংহ, শেরপুর ও কিশোরগঞ্জের পোশাক শ্রমিকরা অটোরিকশা ও হিউম্যান হলারে করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, ঢাকার গাড়ি পেতে তারা সবাই ময়মনসিংহের দিগরকান্দা বাই পাসে ভিড় করছেন।

ঢাকার একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক আবুল হোসেন জানান, তিনি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা থেকে ময়মনসিংহ শহরে এসেছেন। কিন্তু ঢাকায় যাওয়ার কোনো গাড়ি পাননি। আজ ঢাকায় পৌঁছাতে পারবেন কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। সঙ্গে তার স্ত্রী রয়েছেন। আবুল বলেন, ‘আমি সকাল থেকে পিকআপে ওঠার জন্য অপেক্ষা করছি। কিন্তু ভিড়ের কারণে এখনো উঠতে পারিনি।’

ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলায় বাড়ি আফিয়া আক্তারের (২৫)। তিনি বলেন, ‘যে কোনো মূল্যে কারখানায় পৌঁছাতে হবে। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই যেতে হবে। এই চাকরিতে চলে আমার পাঁচ জনের পরিবার।’

ময়মনসিংহের ট্রাফিক পরিদর্শক সৈয়দ মাহমুদুর রহমান বলেন, এই পরিস্থিতিতে আমাদের কিছুই করার নেই।

এ ধরনের যাত্রায় করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে উল্লেখ করে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘আগামীকাল থেকে পোশাক কারখানা খোলার বিষয়টি সরকারের সিদ্ধান্ত, তাই আমাদের কিছুই বলার নেই।’

ময়মনসিংহের পাটগোদাম ব্রক্ষপুত্র সেতুর ওপর ঢাকামুখী মানুষের স্রোত। ছবি: স্টার

গাজীপুরে শতাধিক পোশাক শ্রমিককে বাসের অপেক্ষায় জটলা পাকিয়ে বসে থাকতে দেখা যায়। কখনো হালকা যানবাহন আবার কখনো দল বেঁধে পায়ে হেঁটে ঢাকামুখে ছুটছেন তারা।

শ্রীপুর উপজেলার মাওনা চৌরাস্তা উড়ালসেতুর নিচে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে তাকালে মনে হবে এ যেন ঈদের ভোগান্তি। কয়েকজন শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পোশাক কারখানা থেকে মোবাইল ফোনে তাদের বলা হয়েছে, ৫ এপ্রিল থেকে কাজে যোগ দিতে হবে।

ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার বড়পুটিয়া এলাকার আকরাম হোসেন সুইং অপারেটর হিসেবে গাজীপুরের বাঘেরবাজারে মণ্ডল গার্মেন্টস লিমিটেডে কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার অফিস থেকে ফোন করে ৫ এপ্রিল কাজে যোগ দিতে বলেছে। তাই শনিবার ভোর সাড়ে ৬টায় বাড়ি থেকে রওনা হয়েছি। কোথাও বাস না পেয়ে কিছুটা হেঁটে, কিছুটা অটোরিকশায় এসেছি।’

করোনাভাইরাসের কারণে স্বাস্থ্য বিভাগ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলেছে, এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কারখানা খোলা থাকলে এ দূরত্ব কীভাবে বজায় রাখবো? কারখানার ভেতরে এ দূরত্ব রাখা যায়?’

আকরাম হোসেনের সহকর্মী সোনিয়ার সঙ্গে রয়েছে তার স্বামী ও সন্তান। সোনিয়া বলেন, ‘শনিবার সকাল সাড়ে ৭টায় স্বামী-সন্তান নিয়ে মুখে মাস্ক লাগিয়ে বের হয়েছি। কোনো গাড়ি না পেয়ে প্রথমে পায়ে হেঁটে, পরে রিকশায় এক হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে মাওনা চৌরাস্তায় এসেছি।’

মাওনা চৌরাস্তায় কথা হয় পিকআপ ভ্যান চালক সোহাগের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘রাস্তায় পোশাক শ্রমিক ছাড়া কোনো যাত্রী নেই। তারা দ্বিগুণ ভাড়ায় যেতে রাজি। আমরাও তাদের সেবা দিচ্ছি। ঝুঁকি নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি। মুখে মাস্ক লাগিয়ে নিয়েছি।’

মাওনা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ট্রাক-পিকআপ চালকদেরকে এভাবে যাত্রী পরিবহনে বাধা দেওয়া হচ্ছে। যাত্রীদেরকেও এসব পরিবহন থেকে নেমে যেতে বলা হচ্ছে। অনেকে দল বেঁধে পায়ে হেঁটে গাজীপুর মহানগর ও ঢাকার দিকে যাচ্ছেন।’

শ্রীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারজানা নাসরিন বলেন, ‘সরকারি নির্দেশ অমান্য করে ট্রাক-পিকআপে যাত্রী বহন করায় বেশ কয়েকজন ট্রাক চালককে অর্থ দণ্ড দেওয়া হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সরকারি নির্দেশ বাস্তবায়নে তৎপর রয়েছে।’

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

10h ago