করোনা, মিডিয়ার জন্য মরার ওপর খাঁড়ার ঘা!

এক্সটিনশন, হ্যাঁ- ইংরেজিতে এই শব্দটিই ব্যবহৃত হচ্ছে। বাংলা একাডেমি যার অর্থ করেছে ধ্বংস। বিলোপ বা বিলুপ্ত হওয়াও বুঝায়। বিষয়টি আঁতকে ওঠার মত। করোনাভাইরাসের ভয়াবহতার সঠিক খবর পৌঁছে দিতে সংবাদকর্মীরা যখন সকল ঝুঁকি নিয়েও কাজ করে চলেছেন, ‘আপনি ঘরে থাকুন, খবর আমরা পৌঁছে দেব’ বলে যে তথ্যসেবার বানী উচ্চারণ করছেন, মিথ্যা রটনা আর গুজব প্রতিহত করে বস্তুনিষ্ঠ খবর জানিয়ে দিতে সদা সচেতন রয়েছেন, ঠিক তখনই পেশা হিসেবে সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অনেক মিডিয়ার ক্ষেত্রে বিলুপ্তির পর্যায়ে হুমকি রয়েছে বলেই উল্লেখ করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।
Mass Media-1.jpg
ছবি: সংগৃহীত

এক্সটিনশন, হ্যাঁ- ইংরেজিতে এই শব্দটিই ব্যবহৃত হচ্ছে। বাংলা একাডেমি যার অর্থ করেছে ধ্বংস। বিলোপ বা বিলুপ্ত হওয়াও বুঝায়। বিষয়টি আঁতকে ওঠার মত। করোনাভাইরাসের ভয়াবহতার সঠিক খবর পৌঁছে দিতে সংবাদকর্মীরা যখন সকল ঝুঁকি নিয়েও কাজ করে চলেছেন, ‘আপনি ঘরে থাকুন, খবর আমরা পৌঁছে দেব’ বলে যে তথ্যসেবার বানী উচ্চারণ করছেন, মিথ্যা রটনা আর গুজব প্রতিহত করে বস্তুনিষ্ঠ খবর জানিয়ে দিতে সদা সচেতন রয়েছেন, ঠিক তখনই পেশা হিসেবে সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অনেক মিডিয়ার ক্ষেত্রে বিলুপ্তির পর্যায়ে হুমকি রয়েছে বলেই উল্লেখ করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।

বিশেষ করে স্থানীয় পর্যায়ের সংবাদপত্রগুলোর জন্য এমন ভবিষ্যতই অপেক্ষা করছে বলে মত তাদের।

যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটল টাইমস পত্রিকার সিএফও অ্যালান ফিসকোকে উদ্ধৃত করে অনলাইন পোর্টাল বাজফিড.নিউজ লিখছে, সত্যি বলতে কী- বিনোদন সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন নেই, রেস্টুরেন্টগুলোর বিজ্ঞাপন উঠে গেছে, অটোমোবাইলের বিজ্ঞাপনগুলোও বন্ধ হওয়ার পথে- যার প্রভাব পড়বেই। শেষরক্ষা হবে বলে মনে করছেন না প্রতিষ্ঠানটির অর্থ বিষয়ক প্রধান।

মিডিয়ার ওপর করোনা ভাইরাসের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব কী হবে? এখনই খুব স্পষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না, কারণ এখনো কেউ ঠিক জানেই না এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শেষ কোথায়। কবে, কীভাবে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরবে। তবে কোন মিডিয়া কি ধরনের কনটেন্ট বানায় তার ওপর নির্ভর করবে, কার ওপর প্রভাব বেশি কার ওপর কম পড়বে। নিউজ ইন্ডাস্ট্রিতে সময়ের সঙ্গে দৌড়াতে লাইভ ইভেন্টের প্রতি ঝোঁক আমরা বেশ কিছুদিন ধরেই দেখে আসছি। তা যদি বড় ইভেন্টই না থাকে, কীসের ওপর লাইভ হবে। বড় বড় কাজই যদি না হয়, বড় বড় খবর তৈরি হবে কী করে?

করোনাভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার পর স্থগিত করা বা বাতিল করা হয়েছে যে কর্মসূচিগুলো, সেগুলো ব্রডকাস্ট করার কাজ পেয়ে গিয়েছিল যেসব মিডিয়া তাদের জন্য কোনো সুখবরই নেই। বাংলাদেশেও ২০২০ সাল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ। এই বছরে কত যে উৎসব, কত যে আয়োজন রাখা হয়েছিল, বছরটিকে কেন্দ্র করে মিডিয়াগুলোর কনটেন্ট প্ল্যান যেমন ছিল, তেমনি ছিল রেভিনিউ আয়েরও নানা পথ- সেগুলো সবই এখন স্থগিত। যার অর্থই হচ্ছে- রেভিনিউ নিয়ে নেই কোন ভরসা। কেবল টেলিভিশনগুলো অনেকাংশেই বিজ্ঞাপনের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু করোনার কারণে ব্যবসার ক্ষতি হবে না, এমন একটি শিল্প কিংবা ব্যবসার নাম এখন বলা যাবে না। প্রতিষ্ঠান নিজেই যখন কোনো না কোনো পথে ক্ষতি গুনছে, তখন সেগুলো কস্ট কাটিংয়ে যাবেই। আর সেক্ষেত্রে প্রথমেই কমানো হবে বিজ্ঞাপন বাজেট, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। সে আঘাত সরাসরি এসে লাগবে মিডিয়ার গায়ে।

বিষয়গুলোকে সামনে এনে কথা বলতে শুরু করেছেন বিশ্বের সাংবাদিকতা জগতের নেতৃত্বরা। বাংলাদেশেও থেমে নেই সংবাদমাধ্যমগুলোর কর্তাব্যক্তিরা। গত ২৯ মার্চ এডিটরস গিল্ড থেকে দেওয়া একটি বিবৃতির কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। এতে উদ্বেগের কথা বলা হয়েছে। তারা বলছেন, করোনাভাইরাসের প্রভাবে এক নজিরবিহীন সংকটের মুখোমুখি হয়ে পড়েছে দেশের গণমাধ্যম।

সত্যিই তাই। সবচেয়ে বড় হুমকি সংবাদপত্রের জন্য। টানা ছুটিতে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় পত্রিকার বিলি ও বিতরণ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। আর ‘খবরের কাগজ ঘরে ভাইরাস বয়ে আনতে পারে’ এই ভয়ে সাবস্ক্রিপশন বন্ধ হয়েছে ব্যাপক হারে। সংবাদপত্র মালিকদের প্রতিষ্ঠান নোয়াবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সংবাদপত্রে নেই করোনার ঝুঁকি। তো সে কথা আর কজনই শুনছেন। ফলে কোনো কোনো সংবাদপত্র পৃষ্ঠা সংখ্যা কমিয়ে, কেউ বা প্রকাশনা বন্ধ করে অনলাইনে সংবাদ প্রকাশ করে টিকে থাকার চেষ্টা করছে।

অনলাইন ও সম্প্রচারমাধ্যম ঝুঁকি নিয়ে অফিস খোলা রেখে কাজ করে যাচ্ছে ঠিকই। কিন্তু এগুলোতেও বিজ্ঞাপন কমছে দ্রুতগতিতে। এ ছাড়াও রয়েছে আরও নানা প্রভাব। আরও কিছু সমীকরণ।

টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে বিজ্ঞাপন বিলের কালেকশন একদম বন্ধ হয়ে গেছে বলেই জানিয়েছে এডিটরস গিল্ড। দেশের একটি প্রধান সারির দৈনিকের উচ্চ পর্যায়ের একজন সাংবাদিকের সঙ্গে কথা হলো। তিনি বললেন, মার্চের বেতনটাই তাদের সঞ্চয় থেকে দিতে হচ্ছে। এপ্রিলে কী হবে জানা নেই। তা কয়টা সংবাদমাধ্যমেরই আর রয়েছে সঞ্চয় করা অর্থ- যা দিয়ে মাস কয়েক চলবে? এ অবস্থায় গণমাধ্যম উদ্যোক্তাদের ভাবতে হচ্ছে, চলমান সংকট দীর্ঘ হলে তারা তাদের সাংবাদিক ও কর্মচারীদের বেতন দেবেন কোত্থেকে? এডিটরস গিল্ডের বিবৃতি বলছে- সংকটের সময় নিজস্ব সঞ্চয় থেকে সাংবাদিক, কর্মচারীদের মজুরি প্রদানসহ তথ্য সংগ্রহ ও পরিবেশন এবং প্রাতিষ্ঠানিক ব্যয় নির্বাহ কঠিন হয়ে পড়েছে। সম্পাদকদের সংগঠনটি আরও বলছে, গণমাধ্যম অতীতে অনেক বড় বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে। তবে এবারের মত বৈরী পরিস্থিতি সাম্প্রতিককালে আর আসেনি।

এ অবস্থায় সরকারের কাছে গণমাধ্যমের জন্য জরুরিভিত্তিতে একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণারও দাবি করা হয়েছে তাদের ওই বিবৃতিতে। টেলিভিশনের জন্য স্যাটেলাইট ফি তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখার দাবি করা হয়েছে। বিজ্ঞাপনের আয়ের ওপর থেকে সব ধরনের ভ্যাট মওকুফ করার কথাও বলা হয়েছে।

করোনা যে শুধু ব্যক্তিমালিকানার প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে- তা নয়, সবচেয়ে বেশি সঙ্কটে পড়তে যাচ্ছে সরকারগুলোই। বাংলাদেশ সরকার কোনো ব্যতিক্রম কিছু হবে- এমনটা দুরাশা। তারপরেও সরকার যদি মিডিয়ার কল্যাণে এগিয়ে আসে আর দাবিগুলো মেনেও নেয়- তাতেও কী শেষ রক্ষা হবে? অর্থনৈতিকভাবে মিডিয়াকে টিকে থাকতে তার নিজের কর্মকৌশল নিয়েই এগুতে হবে।

মিডিয়া জগতে বড় একটা রেভিনিউ আসে খেলার জগত থেকে। জাপান এরইমধ্যে বলে দিয়েছে অলিম্পিক-২০২০ এর টোকিও আসর বসছে না। ঠেলে পাঠানো হয়েছে ২০২১ সালে। ইউরোপের প্রিমিয়ার ফুটবল লিগের আসর চলতি মৌসুমেরটাও বাতিল করা হয়েছে। লা লিগাও বন্ধ। উয়েফা ২০২০ ফুটবল এই গ্রীষ্মে হচ্ছে না। শীত কাটলেই যুক্তরাষ্ট্র অপেক্ষায় ছিল সবচেয়ে বড় হকি লিগ, সকার লিগ, বেসবল লিগ, বাস্কেটবল লিগ ও গলফ লিগের আয়োজন করবে, যার সবগুলোই এখন বাতিল। করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ ক্রিকেট দুনিয়া। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এত বড় বন্ধের ডাক আমরা শুনতে পাচ্ছি। ক্রিকেটাররাই নিজেদের ঘরবন্দি করেছেন। বাংলাদেশেও একই অবস্থা। বিসিবি দেশের ঘরোয়া ক্রিকেট বন্ধ করে দিয়েছে অনির্দিষ্টকালের জন্য। পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত বিসিবির অধীনে স্বীকৃত কোনো টুর্নামেন্ট বা খেলা মাঠে গড়াবে না বলেই জানিয়ে দিয়েছে জাতীয় ক্রিকেট বোর্ড।

এসবেরই সরাসরি প্রভাব এসে পড়বে মিডিয়ার ওপর। এসব খেলা মানে শুধু ক্রিকেট, ফুটবল কিংবা বাস্কেটবলের খেলাই নয়, বড় অংকের টাকারও খেলা। মিডিয়াগুলোতে খেলার প্রমোশনাল ক্যাম্পেইন তো চলতই। এ ছাড়া খেলাগুলোর স্পন্সরদের দেওয়া দামি দামি বিজ্ঞাপন, আর এগুলো কাভার করার ক্ষেত্রে স্পন্সরশীপের মধ্য দিয়েও বড় রেভিনিউ গুনে আসছিল বিশ্বের সব ধরনের মিডিয়া। যা চলতি বছরে কোনোভাবেই আর মিডিয়ার পকেটে ঢুকছে না। এ বছরের সঠিক প্রেডিকশন এখনো হয়তো করা হয়নি- তবে এখন থেকে চার দশক আগের একটি হিসাব নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়েছিল- ১৯৮০ সালের অলিম্পিক যুক্তরাষ্ট্র বয়কট করার পর অফিশিয়াল ব্রডকাস্টার এনবিসি ইনস্যুরেন্স থাকার পরেও ৩৪ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতি গুনেছিল।

আগেই বলেছি- আরও কিছু সমীকরণ রয়েছে। করোনার কারণে মানুষের ঘরের বাইরে অবস্থান কমে যাবে। এখন কোয়ারেন্টিনের সময়টিতে বস্তুত কেউই বাইরে নেই। ফলে ঘরের বাইরে বের হয় যারা তাদের পটেনশিয়াল দর্শক, পাঠক কিংবা শ্রোতা ভেবে যেসব মিডিয়া সামনে এসেছে, বিশেষ করে, এফএম রেডিও, অনলাইন এগুলোর গ্রাহক কমবে। অনেক দেশই এরই মধ্যে ঘরের বাইরে অনেকের জড়ো হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এতে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে মানুষের উপস্থিতি কমে যাবে। রেস্টুরেন্টগুলোতেও ভিড় কমবে। একটি হিসাব এরইমধ্যে বলছে, করোনা মহামারি স্রেফ চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতেই ৫ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। জেমস বন্ড সিরিজের নতুন ছবি ‘নো টাইমস টু ডাই’ মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল ৩১ মার্চ। যা এরইমধ্যে নভেম্বর অব্ধি পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তো মানুষ যখন সিনেমা দেখতেই কম যাবে, তখন এগুলোর প্রমোশনেও ব্যয় কমবে। এতে মিডিয়া বিজ্ঞাপন কম পাবে এবং ক্ষতির মুখে পড়বে।

অনলাইনে মিডিয়া কনজাম্পশন বেড়েছে, বা বাড়বে তাতে সন্দেহ নেই। মানুষ যত ঘরে থাকবে, তত অনলাইনে বেশি সময় কাটাবে। কিন্তু কোথায়? জরিপ বলছে বিনোদন ভিডিও ও গেইমিং সাইটগুলোতে বেশি থাকবে তারা। চীনে ফেব্রুয়ারির গোঁড়ায় যখন দেশজুড়ে সকলকে আইসোলেশনে যেতে হল, তখন দেখা গেছে প্রথম দুই সপ্তাহে গেম অ্যাপস ডাউনলোড হয়েছে গত বছরের তুলনায় ৪০ শতাংশ বেশি। ফিনান্সিয়াল টাইমস এই তথ্য দিয়ে আরও জানিয়েছে, ২০১৯ সালের যেকোনো সপ্তাহের চেয়ে এ বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথম দুই সপ্তায় অ্যাপল ডিভাইসে গেম ডাউনলোড বেড়েছে ৮০ ভাগ। একইসঙ্গে বেড়েছে টেলিভিশনের দর্শকও। সনাতনী এই মিডিয়াটি গত কয়েক বছর টানা দর্শক কমার অভিজ্ঞতা নিয়ে আসছে, যা এই করোনা মহামারির কালে বেড়েছে।

করোনাভাইরাসের এই সময়টিতে খবরের প্রতিও মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। মানুষ এই ভাইরাসের আপডেট জানতে চায়। কিন্তু এই বেড়ে যাওয়াকে অনেক নিউজ কোম্পানির জন্য শাঁখের করাত হিসেবে দেখছেন মিডিয়া বিশ্লেষকরা। অনলাইন মিডিয়াগুলোর মধ্যে যারা সাবস্ক্রিবশন ফি নিচ্ছে, তারা হয়তো এর থেকে কিছুটা উপকৃত হতে পারে। মানুষ যত ঘরে আটকা থাকবে, ততই বাড়বে খবরের সাবস্ক্রাইবার। কিন্তু যারা অনলাইনে বিজ্ঞাপন থেকে আয় করতে চায়, তাদের জন্য এতে কোনো সুখবর নেই। ব্র্যান্ডগুলো সাধারণত কি-ওয়ার্ড নির্ধারণ করে অনলাইনে বিজ্ঞাপন ছাড়ে। যে ধরনের পাঠকের কাছে তারা যেতে চায় না, তাদের পছন্দের কি-ওয়ার্ডগুলো ব্লক করে রাখা হয়। এ বিষয়ে দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত একটি তথ্য উদ্বেগকর। আন্তর্জাতিক মিডিয়াটি জানাচ্ছে, ফেব্রুয়ারিতে বিজ্ঞাপনদাতাদের ব্লক লিস্টে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ‘করোনাভাইরাস’। সুতরাং করোনাভাইরাসের কল্যাণে আপনার কনটেন্ট হয়তো বেশিই পড়া হবে, কিন্তু সুযোগ থাকা সত্ত্বেও এতে অ্যাড নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন আয় বাড়বে না।

বিশ্লেষকরা বলছেন, পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দিয়ে উঠতে পারলে, মানুষ এই ভয়ঙ্কর শব্দটি থেকেও দূরে থাকতে চাইতে পারে। ফলে করোনা শব্দটি ব্লক করার হার বাড়বে বৈ কমবে না।

গোড়াতেই বলেছি, করোনা সংকট কিছুটা উতরে যাওয়ার পর, বড় বড় ব্র্যান্ডগুলো তাদের বিজ্ঞাপন বাবদ খরচটাই কমানোর সিদ্ধান্ত নেবে। সাপ্লাই চেইন যখন সঠিকভাবে কাজ করবে না, আর মোটের ওপর বিক্রি যখন কমে যাবে, তখন এটা ছাড়া আর উপায়ই কী থাকবে? বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতসহ প্যাকেটজাত পণ্যের ক্ষেত্রে বিষয়টি এমনই ঘটবে বলে মত বাজার বিশ্লেষকদের। চীনে তেমন পরিস্থিতি এখনই দেখা যাচ্ছে বলে একটি খবর জানাচ্ছে। এতে বলা হয়েছে, জরিপ মতে, ফেব্রুয়ারির শেষভাগে চীনা ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে ৭ শতাংশ তাদের বিজ্ঞাপন পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে। ১৪ শতাংশ তাদের বিজ্ঞাপন বাজেট অফলাইন থেকে অনলাইনে নিয়ে গেছে। তবে সেটা যে নিউজ মিডিয়ার জন্য সুখবর নয় তা আগেই বলেছি। কারণ কোম্পানিগুলো দেখেছে এই সময়ে চীনারা গেমস অ্যাপসই ডাউনলোড করেছে সবচেয়ে বেশি। যা মোট ডাউনলোডের ৬০ শতাংশ। এর পরে রয়েছে শিক্ষামূলক সাইটগুলো। যার প্রধানতম কারণ শিক্ষা ব্যবস্থায় ই-লার্নিং এখন সময়ের প্রয়োজন। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ ডাউনলোড ছিল বিনোদন বিষয়ক কনটেন্ট বা অ্যাপস।

ভারত লকডডাউনে যাওয়ার পর অনলাইন গেমিং প্ল্যাটফর্মগুলোয় প্রতিদিনের অ্যাকটিভ ইউজার ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়েছে। সেশন ডিউরেশন ও এনগেজমেন্ট তিন-চারগুণে বাড়ছে। পোকারবাজি, পিইউবিজি’র মতো গেমিং সাইটগুলো এখন তাদের ক্যাজুয়াল ইউজারদের ডেডিকেটেড ফ্যানবেজ তৈরির দিকে নিয়ে যেতে চাইছে।

এমনিতেই মানুষ অনলাইনে নন-নিউজ কনটেন্টে বেশি পড়ে থাকে, তা প্রমাণের অপেক্ষা রাখে না। করোনা কিংবা পোস্ট করোনাকাল সে বিষয়টি আরও ত্বরান্বিত করবে, তাতে সন্দেহমাত্র নেই।

তারপরেও খবরের পাঠক থাকবে এবং করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে অনলাইনেই আয় বাড়বে। তবে তা প্রয়োজনের সিকিভাগও পূরণ করতে পারবে না। মিডিয়াগুলো যখনই স্থানীয় বিজ্ঞাপনের বাজার হারিয়েছে, তা যে কারণেই হোক, তা আর ফিরে আসেনি। এই দশকের গোঁড়ার দিকে বিশ্বজুড়ে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দার পর মিডিয়াগুলো পিছিয়ে পড়তে শুরু করে। সেই থেকে ভঙ্গুর দশা কাটিয়ে ওঠা খুব কম মিডিয়ার পক্ষেই সম্ভব হয়েছে। করোনাভাইরাস সেই মরার ওপর খাঁড়ার ঘা ছাড়া আর কিছুই নয়।

গত রাত ১২টায় যখন জানা গেলো- আলোকিত বাংলাদেশ নামক সংবাদপত্রটি আর আলোর মুখ দেখবে না। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, আর কর্মীদের বলে দেওয়া হয়েছে শুক্রবার থেকে অফিস করতে হবে না। উপরের সব কথাই সত্যি হয়ে ওঠে সেই একটি ঘটনায়। কারণ এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। হয়তো এমন পরিনতিই বরণ করতে যাচ্ছে দেশের আরও অনেক মিডিয়া। এতে এক্সটিনশন শব্দটিই সারাক্ষণ ঘুরপাক খাচ্ছে মাথার ভেতর।

মাহমুদ মেনন, সাংবাদিক ও শিক্ষক

[email protected]

(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নেবে না।)

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

7h ago