আজও ভেসে এলো মৃত ডলফিন
মানুষের আনাগোনা কমে যাওয়ায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে কাছে আবারো ডলফিন দেখা যাচ্ছে। তবে পরপর দুদিন সৈকতে ইন্দো-প্যাসিফিক গোত্রের দুটি মৃত হাম্পব্যাক ডলফিন ভেসে আসায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
আজ রবিবার সকালে কক্সবাজারের ইনানী সৈকতে একটি মৃত ডলফিন ভেসে আসে। ডলফিনটির লেজে মোটা রশি বাঁধা ছিল। সাধারণত এ ধরনের রশি জেলেরা ব্যবহার করেন। গতকাল দুপুরে টেকনাফের শামলাপুর বাজারের পশ্চিম অংশের সৈকতে একটি মৃত ডলফিন পাওয়া যায়। ডলফিনটির সারা গায়ে ধারালো ধাতবজাতীয় বস্তুর আঘাতের চিহ্ন ছিল। স্থানীয়রা ধারণা করছেন, জালে আটকা পড়লে জেলেরা ডলফিনটিকে পিটিয়ে হত্যা করে।
স্থানীয় যুবক জালাল উদ্দিন টেকনাফে ভেসে আসা মৃত ডলফিনটির ছবি ফেসবুকে শেয়ার করেছিলেন। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ডলফিনের সারা গায়ে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন ছিল। যে জায়গায় ডলফিনটি পাওয়া গেছে, সেই এলাকায় জেলেরা মাছ ধরার জন্য ট্রলার থেকে জাল ফেলে।
তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে জেলেদের সংগঠন। শামলাপুর ফিশিং বোট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বেলাল উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এ রকম একটা উপকারী প্রাণীকে জেলেরা কখনো হত্যা করবে না। কারণ, আমরা যখন সাগরে বিপদে পড়ি, তখন অনেক সময় ডলফিনগুলো আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে।’
ডলফিন ও কাঁকড়া জাতীয় প্রাণী সংরক্ষণের দায়িত্বে থাকা বনবিভাগ মনে করছে, জাহাজ বা মাছ ধরার ট্রলারের প্রপেলারের আঘাতে ডলফিন দুটির মৃত্যু হতে পারে।
কক্সবাজার বনবিভাগের (দক্ষিণ) বিভাগীয় বন কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এর আগেও এ রকম দুটি ডলফিন আমরা ইনানী ও দরিয়ানগর থেকে উদ্ধার করেছিলাম। ময়নাতদন্তে জাহাজের প্রপেলারের আঘাতে মৃত্যুর প্রমাণ মিলেছিল। ডলফিনগুলোর বার্ধক্যজনিত কারণ অথবা এ ধরনের আঘাতে মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। আমরা ময়নাতদন্তের জন্য ভেটেরিনারি সার্জন ডেকেছি।’
সহকারী বন সংরক্ষক আবদুল্লাহ আল মামুন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘দুটি জায়গায় মৃত ডলফিন ভেসে আসার ঘটনা ঘটছে। একটি হলো হোয়াইক্কং, আরেকটি হলো ইনানী। দুটি এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে, যেন ডলফিন রক্ষায় মানুষ সচেতন হয়। এ ছাড়া, স্থানীয়দের নিয়ে ডলফিন রক্ষায় দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মঞ্জরুল কিবরিয়া বলেন, ‘যে এলাকায় মৃত ডলফিন পাওয়া গেছে, সেখানে মাছ ধরার ট্রলার থেকে প্রচুর মনোফিলামেন্ট টাইপের জাল ফেলা হয়। সহজেই ডলফিনগুলো আটকে যেতে পারে। এরা খুবই সংবেদনশীল প্রাণী। দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় অল্প আঘাতে এদের শরীরে ইনফেকশন হয় এবং পরে মারা যায়।’
সেইভ দ্য নেচার, বাংলাদেশ’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম রিয়াদ দ্য ডেইল স্টারকে বলেন, ‘মানুষের আনাগোনা কমে যাওয়ায় ডলফিনগুলো সৈকতের কাছাকাছি এসছিল। এ ধরনের মৃত্যু তাদের মানুষের দৃষ্টিসীমার বাইরে নিয়ে যাবে। ডলফিনটির মাথায় ও পেটে বড় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। লেজের দিকেও কেউ কেটে দিয়েছে। এদের বাঁচাতে হলে জেলেদের সচেতন করে তুলতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘কক্সবাজার সৈকতের ১২০ কিলোমিটার এলাকায় কোনো প্রাণী সেটা ডলফিন হোক বা কচ্ছপ যদি আঘাতপ্রাপ্ত হয়, তাকে বাঁচানোর কোনো ব্যবস্থা নেই। এ দায়িত্ব বনবিভাগের হলেও তাদের কোনো সক্ষমতা নেই।’
Comments