করোনা-ঝুঁকি ছাপিয়ে চট্টগ্রামের শতাধিক কারখানায় ২ লাখ শ্রমিক

রোজকার জীবনের দাবি যখন বড় হয়ে ওঠে, তখন করোনার ঝুঁকি ছাপিয়ে চাকরিটা বাঁচাতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লকডাউন উপেক্ষা করে কর্মস্থলে ফিরেছেন গার্মেন্টস শ্রমিকরা। করোনা মোকাবিলায় দেশে চলমান লকডাউনের মধ্যেও আজ রোববার চট্টগ্রামের অন্তত ১৩৩টি গার্মেন্টস ও রফতানিমুখী অন্যান্য শিল্প কারখানা চালু রেখেছেন মালিকরা। এসব কারখানায় প্রায় দুই লাখ শ্রমিক কাজ করছেন বলে জানিয়েছে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও সংশ্লিষ্ট ইপিজেড (রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল) কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রামে করোনা-ঝুঁকি নিয়েই কাজে যাচ্ছেন শ্রমিকরা। ছবি: সংগৃহীত

রোজকার জীবনের দাবি যখন বড় হয়ে ওঠে, তখন করোনার ঝুঁকি ছাপিয়ে চাকরিটা বাঁচাতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লকডাউন উপেক্ষা করে কর্মস্থলে ফিরেছেন গার্মেন্টস শ্রমিকরা। করোনা মোকাবিলায় দেশে চলমান লকডাউনের মধ্যেও আজ রোববার চট্টগ্রামের অন্তত ১৩৩টি গার্মেন্টস ও রফতানিমুখী অন্যান্য শিল্প কারখানা চালু রেখেছেন মালিকরা। এসব কারখানায় প্রায় দুই লাখ শ্রমিক কাজ করছেন বলে জানিয়েছে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও সংশ্লিষ্ট ইপিজেড (রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল) কর্তৃপক্ষ।

গণপরিবহন বন্ধ থাকায় এসব কারখানার বেশিরভাগ শ্রমিকই গতকাল পায়ে হেঁটে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে চট্টগ্রামে এসেছেন। এসব কারখানার মালিকরা বলছেন, কিছু বিদেশি ক্রেতাদের কার্যাদেশ ধরে রাখতেই কারখানা চালু করেছেন তারা।

বিজিএমইএ’র সহসভাপতি এম এ সালাম বলেন, ‘করোনায় চলামান সমস্যার কারণে ইউরোপ ও আমেরিকার অধিকাংশ বায়ারই কার্যাদেশ স্থাগিত অথবা বাতিল করেছেন। তবে, যেসব বায়ারদের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে, শুধু সেসব অর্ডার এখনো বাতিল করেননি তারা। এ ছাড়া, জাপান ও চীনসহ বেশকিছু দেশের বায়াররা এখনো কার্যাদেশ বাতিল বা স্থগিত করেননি। মূলত এসব কাজ করার জন্যই কারখানা চালু করেছেন মালিকপক্ষ।’

তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামের বিজিএমইএর নিবন্ধিত প্রায় ৪২১ কারখানার মধ্যে ৩৮টি কারখানা চালু রয়েছে। এসব কারখানয় অন্তত এক লাখের মতো শ্রমিক কাজ করেন। যেসব অর্ডারের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে, সেগুলো শেষ হলেই বেশিরভাগ কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। চট্টগ্রামের তিনটি ইপিজেড ও বিজেএমইএর নিবন্ধনের বাইরে কিছু কারখানা খোলা থাকতে পারে। তবে, এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।’

তার দাবি, চালু থাকা কারখানায় শ্রমিকদের তাপমাত্রা মাপাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হচ্ছে।

এ ছাড়াও, বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নিবন্ধিত ৩০টি কারখানা এবং তিনটি ইপিজেডের আওতায় খেলনাসামগ্রী, ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য, প্রসাধানী, জুতা ও ওষুধসামগ্রীসহ শতভাগ রপ্তানিমুখী আরও অন্তত ৬৫টি কারখানা চালু রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিকেএমইএ ও বাংলাদেশ এক্সপোট প্রসেজিং অথরেটি (বেপজা) কর্তৃপক্ষ।

এসব কারখানায় আরও অন্তত এক লাখ শ্রমিক কাজ করেন। এর মধ্যে শুধু চট্টগ্রাম ইপিজেডের ৮৫টি কারখানার মধ্যে ৫০টি কারখানা চালু করেছেন মালিকরা। চালু থাকা কারখানায় প্রায় ৮৫ হাজার শ্রমিক কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন সিইপিজেড'র জিএম খুরশেদ আলম।

তিনি বলেন, ‘সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনেই এসব কারখানা চালু করেছেন মালিকরা। যদিও একসঙ্গে এতো শ্রমিকদের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। তাই আমরা তাদের অনুরোধ করেছিলাম, কারখানা যাতে যত দ্রুত সম্ভব বন্ধ করে দেওয়া হয়। তারা জানিয়েছেন, কিছু বায়ারদের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এসব কাজ শেষ করেই তারা কারখানা বন্ধ করে দিবেন।’

বেপজার কর্মকর্তারা বলছেন, ইপিজেড এলাকায় কারখানায় শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হলেও শ্রমিক বেশি হওয়ায় দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে এসব মালিকদের দু-এক দিনের মধ্যে কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে জানান তারা।

চট্টগ্রামের ইপিজেড এলাকায় কাজ করেন ফেনীর শাহানা বেগম। তিনি বলেন, ‘গতকাল সকাল ৮টার দিকে ফেনীর ছাগলনাইয়া থেকে বের হয়ে চট্টগ্রামে শহরে পৌঁছেছি সন্ধ্যা ৬টার দিকে। অধিকাংশ পথ হেঁটে ও বাকি পথ সিএনজিচালিত অটোরিকেশা ও রিকশায় করে এসেছি।’

তার মতো একই কারখানার আরও দুই হাজার শ্রমিক বিভিন্ন অঞ্চল থেকে একইভাবে কষ্ট করে এসে কাজ যোগ দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

‘অফিস থেকে বলা হয়েছে, নির্ধারিত সময়ে অফিসে উপস্থিত না থাকলে চাকরি থাকবে না’, যোগ করেন তিনি।

চট্টগ্রাম ইপিজেড এলাকার একটি কারখানায় কোয়ালিটি কন্ট্রোল অফিসার পদে কর্মরত আছেন, এমন একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমি ছুটিতে শহরেই ছিলাম। গতকাল পরিবহন বন্ধ থাকায় আমি ভেবে ছিলাম আজ হয়তো অনেকেই অনুপস্থিত থাকবেন। কিন্তু, অন্যান্য দিনের চেয়ে আজ উপস্থিতির হার বেশি ছিল। তাদের মধ্যে আজ না আসলে চাকরি চলে যাওয়ার ভয়ে ছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘গতকাল দীর্ঘপথ হেঁটে আসার ক্লান্তি আজও সকলের চোখে-মুখে ছিল। দুপুর ২টার পর অনেককেই আর দাঁড়িয়ে কিংবা বসেও কাজ করতে পারছিলেন না। অনেকই আধবেলা ছুটির জন্য এসেছিলেন। বিষয়টি মালিকপক্ষকে জানানো হলে বিশেষ বিবেচনায় বেলা আড়াইটার দিকে সকলকেই হাফ বেলা ছুটি দেওয়া হয়।’ 

Comments