তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া

নিষ্ঠুর মাসে নিষ্ঠুর বিজিএমইএ

Garments Workers.jpg
ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েও সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হওয়ায় ফের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার জন্য মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ঘাটে ফেরিতে করে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছেন তৈরি পোশাকশিল্প শ্রমিকরা। ছবি: সংগৃহীত/স্টার

এপ্রিল মাসকে বলা হয় বছরের সবচেয়ে নিষ্ঠুরতম মাস। আর এই নিষ্ঠুর মাসে আরেকটি নিষ্ঠুরতম কাজ করল দেশের তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পোশাক শ্রমিকরা গত শনিবার কাজে যোগদানের জন্য হেঁটে-রিকশায়-ট্রাকে করে ঢাকায় এসেছেন। তীব্র রোদে মাইলের পর মাইল হেঁটেছেন শুধু জীবিকার তাগিদে। কারণ তাদের কাছে জীবনের চেয়ে জীবিকা অনেক বেশি দামী, অনেক বেশি প্রয়োজনীয়।

করোনার প্রকোপ কমাতে সারাবিশ্ব যখন হিমশিম খাচ্ছে, তখন আমাদের সরকারের নেওয়া সাধারণ ছুটি জনমনে কিছুটা স্বস্তি এনেছিল। কিন্তু যেভাবে তারা ঢাকায় আসলো, তখন স্বস্তি উদ্বেগে রূপ নিল।

করোনার ছোবল যখন ভালো করে আঘাত হানেনি, তখন বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক সরকারের কাছে আর্থিক সাহায্য চাইলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিলেন ৫ হাজার কোটি টাকা।

তারপরেই কারখানা সব বন্ধ। বহু জল গড়িয়ে বিজিএমইএ নিল কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত। বলা হলো- স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালানো হবে কারখানা। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি কীভাবে মানা হবে, আর কে এটা মনিটর করবে সেটা পরিষ্কার হলো না।

রাতের বেলা এক অডিওবার্তায় দৃশ্যপটে হাজির রুবানা হক। বললেন- ১১ তারিখ পর্যন্ত সব কারখানা বন্ধ থাকবে। তার কিছুক্ষণ পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা দিলেন ঢাকা থেকে কোনো পরিবহন বাইরে যাবে না এবং ঢাকায় ঢুকবেও না।

কিন্তু প্রশ্ন হলো- যারা মাইলের পর মাইল হেঁটে বহু কষ্ট করে ঢাকায় আসলেন, তাদের অনেকে ঘরে ঢুকতে পারলেন না। বাড়িওয়ালারা ঢুকতে দিলেন না। ‘ঢাকা থেকে বের হওয়া যাবে না’- এই শ্রমিকরা কোথায় থাকবেন? কী খাবেন? গ্রামে ফিরতে চাইলে কীভাবে ফিরবেন? মালিকরা তাদের ঢাকায় ডেকে এনে বেতনও দেননি। তারা এখন কী করবেন? প্রশ্ন আছে, উত্তর নেই। গরীবের প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার অধিকার থাকে না!

যে সংগঠনটি বা যে শিল্পটি ২০২১ সালের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির স্বপ্ন দেখে, সেই সংগঠনটি মাত্র কয়েকদিন জাতির বৃহত্তর স্বার্থে কারখানা বন্ধ রাখতে পারল না? শিল্প যদি মানবিক না হয়, তবে সেই শিল্প কি সত্যিকার অর্থে কোনো কল্যাণ আনতে পারে রাষ্ট্রের?

যে ঘোর আমাবস্যা চলছে তা কেটে যাবে, তবে বাংলাদেশের জনমনে নিষ্ঠুরতম মাসের নিষ্ঠুরতার প্রতীক হিসেবে থেকে যাবে বিজিএমইএ।

Comments

The Daily Star  | English

Smaller in size, larger in intent

Finance Adviser Salehuddin Ahmed has offered both empathy and arithmetic in his budget speech, laying out a vision that puts people, not just projects, at the heart of economic policy.

9h ago