ত্রাণ পৌঁছায়নি বিধবা কান্দ্রি বালাদের ঘরে

লালমনিরহাট পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের উত্তর সাপ্টানা রায়পাড়া গ্রামে বাস করেন বিধবা কান্দ্রি বালা (৫৮)। ভ্যানচালক ছেলে সুধান চন্দ্র রায়ের আয়ে সংসার চলে যেত। কিন্তু করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে আয়ের একমাত্র পথও বন্ধ। কোনো ত্রাণ সহায়তাও পৌঁছায়নি এই বিধবা নারীর ঘরে। তাই মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি ও তার পরিবার।
উত্তর সাপ্টানা রায়পাড়া গ্রামের এ নারী রুটি ভাজছেন। ছবি: স্টার

লালমনিরহাট পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের উত্তর সাপ্টানা রায়পাড়া গ্রামে বাস করেন বিধবা কান্দ্রি বালা (৫৮)। ভ্যানচালক ছেলে সুধান চন্দ্র রায়ের আয়ে সংসার চলে যেত। কিন্তু করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে আয়ের একমাত্র পথও বন্ধ। কোনো ত্রাণ সহায়তাও পৌঁছায়নি এই বিধবা নারীর ঘরে। তাই মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি ও তার পরিবার।

দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, ‘মোর ব্যাটা সুধান ভ্যান গাড়ি চালায়। এ্যালাতো বাড়িত বসা। কাজ-কাম নাই সেজন্য চাল ডাল আনবার পাবার নাগছে না। ঘরোত হাফ কেজি খানিক আটা আছিল তাক দিয়া রুটি ভাজি খাবার নাগছি। হাফ কেজি আটা দিয়া ছোট ছোট করি বারোখান রুটি হইছে। হামরা বাড়িত ছয়জন মানুষ। ভাগাভাগি করে রুটি খাইলং।’

কোনো ত্রাণ সহায়তা পাননি বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘বাড়ি থাকি কি আর ইলিপ সিলিপ পাওয়া যায়। আর মেম্বার চেয়ারম্যানতো হামারগুলার খোঁজখবর ন্যায়ে না। হামরাগুলা বাঁচি আছি নাকি মরি গ্যাছি।’

তার ভ্যানচালক ছেলে সুধান চন্দ্র রায় জানান, সংসারে বিধবা মা, স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে চরম কষ্টে আছেন। ভ্যান চালাতে পারছেন না, তাই আয়ও নেই।

সুধান চন্দ্র রায় বলেন, ‘সরকার বলছে বাড়িতে থাকেন, বাড়িতে ত্রাণ চলে যাবে। কিন্তু বাড়িতে আছি তবে ত্রাণ পাচ্ছি না। আধা সের আটার রুটি খেয়ে সকলে বেঁচে আছি। এভাবে আর চলতে পারছি না।’

কান্দ্রি বালার প্রতিবেশী বিধবা ননী বালা (৬৪) জানান, তার ছেলে পরিবহন শ্রমিক। বাড়িতে বসে আছে। কোনো আয় নেই। ৫ জনের সংসারে খাবারের জন্য হাহাকার চলছে।

ওই গ্রামের বিধবা দুর্গা বালা (৬০), মধু বালা (৬৫), আনো বালা (৫৫) ও অন্যরাও একই কষ্টের কথা জানান। ঘরে কোন খাবার নেই। দুমুঠো অন্নের জন্য সংসারে চলছে হাহাকার।

আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের তিস্তা পাড়ের ইয়াকুব আলী (৮৫) জানান, ঘরে খাবার নেই তাই না খেয়ে আছি। তার ছেলে হোটেল শ্রমিক সাইফুল ইসলাম কর্মহীন বাড়িতে বসে আছে।

তিনি বলেন,‘মাইনসের জমিত থাকি। তিস্তা নদীত জমাজমি বাড়ি ঘর শোকগুলায় জলি গ্যাইচে। এ্যালাং কোন কিছু পাং নাই। খুব কষ্ট করি চলিবার নাগছি।’

তার ছেলে সাইফুল ইসলাম বলেন,‘সুদের উপর তিন হাজার টাকা নিয়েছিলাম সেটিও শেষ হয়ে গেছে,’ তিনি জানান।

একই এলাকার তিস্তা পাড়ের দিনমজুর মন্টু মিয়া (৫৫) জানান, করোনা তাদের কর্মহীন করে দিয়েছে। সরকারি বা বেসরকাার কোনো ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছেন না।

তিস্তা পাড়ের ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আব্দুল মতিন বলেন, ‘আমাদের কোনো উপায় নেই। কারণ, সরকারিভাবে যে বরাদ্দ আসে তা খুবই অপ্রতুল। চাহিদা হলো ৬ শ পরিবারের সেখানে বরাদ্দ পেয়েছি মাত্র ৩২টি পরিবারের। আমি ঘর থেকে বের হতে পারছি না। মানুষ ত্রাণের জন্য ভিড় করছেন।’

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘জেলার পাঁচটি উপজেলা ও দুটি পৌরসভায় সাড়ে ৪৫ মেট্রিক টন চাল ও ২৪ লাখ ১২ হাজার টাকার সরকারি অনুদান বিতরণের কাজ চলছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে এসব বিতরণ করা হচ্ছে। মানুষ কেন ত্রাণ পাচ্ছেন না তা নিয়ে জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলবো।

Comments

The Daily Star  | English

Floods cause Tk 14,421 crore damage in eastern Bangladesh: CPD study

The study highlighted that the damage represents 1.81 percent of the national budget for fiscal year (FY) 2024-25

1h ago