কৃষি খাতে ৫ শতাংশ সুদে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা

কৃষি খাতের জন্য পাঁচ শতাংশ সুদে পাঁচ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনা ফান্ড তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
PM Gonobabhan-1.jpg
ছবি: পিআইডি

কৃষি খাতের জন্য পাঁচ শতাংশ সুদে পাঁচ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনা ফান্ড তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আজ রোববার সকাল ১০টায় করোনা পরিস্থিতি নিয়ে গণভবন থেকে বরিশাল ও খুলনা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্যকালে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের শিল্প, কৃষি সব ক্ষেত্রেই আমরা ব্যাপকভাবে প্রণোদনা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা জানি আমাদের অনেক উন্নয়নের কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু, সবচেয়ে বড় কথা এখন মানুষ বাঁচানো এবং মানুষের জীবনযাত্রা যাতে অব্যাহত থাকে, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়া। সেক্ষেত্রে আমাদের দেশের কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর থেকে শুরু করে কামার, কুমার, তাঁতি, জেলে থেকে শুরু করে যে শ্রেণির মানুষই থাকুক, সব শ্রেণির মানুষের জন্য আমরা সদা প্রস্তুত, তাদের সাহায্য করার জন্য। ইতোমধ্যে আমাদের শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সবকিছু যাতে অব্যাহত থাকে সেজন্য প্রায় ৭২ হাজার কোটি টাকার একটা প্রণোদনা আমরা ঘোষণা করেছি।’

‘কিন্তু আমাদের কৃষিপ্রধান দেশ। আমাদের কৃষিকাজ অব্যাহত রাখতে হবে। খাদ্যটা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের কৃষির ক্ষেত্রেও আমরা বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছি। কিছুদিনের মধ্যেই বোরো ধান উঠবে। কৃষক যাতে এ ফসলের ন্যায্য দাম পায়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে খাদ্য মন্ত্রণালয় গত বছর যে খাদ্য সংগ্রহ করেছিল, তার থেকে বেশি অর্থাৎ আরও বেশি ধান-চাল ক্রয় করবে। দুই লাখ মেট্রিক টন বেশি চাল ক্রয় করবে। সেই উদ্যোগটা নেওয়া হয়েছে’, বলেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘ধান কাটা-মাড়াই কাজে যান্ত্রিকীকরণের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়কে ইতোমধ্যে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছি। কারণ, যেহেতু কৃষিশ্রমিক পাওয়া যায়না। কিন্তু, এখন অনেকেই কাজ পাচ্ছেন না। তারা কৃষিকাজে যেতে পারেন। ধান কাটা বা মাড়াতে হাত দিতে পারেন। কিন্তু, সঙ্গে সঙ্গে আমরা যান্ত্রিকীকরণের ক্ষেত্রে ১০০ কোটি টাকার একটা আলাদা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আরও ১০০ কোটি টাকাও আমরা বরাদ্দ দেবো। অর্থাৎ সর্বমোট ২০০ কোটি টাকা আমরা বরাদ্দ দেবো। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে বীজ, চারা বিতরণের জন্য ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে। যাতে কৃষিকাজ আপনারা অব্যাহত রাখতে পারেন। সেদিকে লক্ষ্য রেখে এই ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি।’

‘সারের ভর্তুকি বাবদ আগামী অর্থবছরের বাজেটে নয় হাজার কোটি টাকা আমরা বরাদ্দ রেখেছি। আগামী অর্থ বছরে নয় হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হবে। যাতে কৃষি উৎপাদন কোনোভাবে ব্যাহত না হয়।  কৃষি খাতে চলতি মূলধন সরবরাহের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক পাঁচ হাজার কোটি টাকার নতুন এবং একটি পূর্ণ অর্থায়ন স্কিম গঠন করবে। শুধু কৃষি খাতেই পাঁচ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনা ফান্ড আমরা তৈরি করবো। এই স্কিমের গ্রাহক পর্যায়ে সুদের হার হবে সর্বোচ্চ পাঁচ শতাংশ’, যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে আরেকটা উদ্যোগ চলমান রয়েছে। সেটা হলো— কেউ যদি পেয়াজ, মরিচ, রসুন, আদাসহ মসলা জাতীয় কিছু উৎপাদন করলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে মাত্র চার শতাংশ সুদে তাদের ঋণ দেওয়া হয়। সেটা অতীতে আমরা কার্যকর করেছি। সেটা অব্যাহত আছে, অব্যাহত থাকবে।’ 

‘পাশাপাশি আমরা যে নতুন স্কিমটা নিচ্ছি, পাঁচ হাজার কোটি টাকার একটা প্রণোদনা, এই স্কিম গঠন করবো। এখান থেকে মাত্র পাঁচ শতাংশ সুদে আমরা কৃষকদের জন্য টাকা বরাদ্দ দেবো। এই তহবিল থেকে মূলত গ্রাম অঞ্চলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষিদের জন্য (অর্থ) দেওয়া হবে। তারা কৃষি, ফলমূল, মৎস্য চাষ, পোলট্রি, ডেইরি ফার্ম ইত্যাদি সব কর্মকাণ্ডে এই সহায়তা পাবে। যাতে করে কোনো মানুষ  কষ্ট না যায়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা এই পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা শুধু এই কৃষি খাতের (জন্য)। কৃষি খাতে মানে একেবারে গ্রাম অঞ্চলে আমাদের যারা ক্ষুদ্র-মাঝারি চাষি, যারা কৃষিকাজ, ফলমূল, মৎস্য চাষ, পোলট্রি, ডেইরি ফার্ম ইত্যাদি কর্মকাণ্ডে যারা ব্যয় করবে, কাজে লাগাবে, তাদেরকে মাত্র পাঁচ শতাংশ সুদে টাকা দেওয়া হবে। এই জন্য আলাদাভাবে আমরা একটা স্কিম তৈরি করেছি। যাতে করে আমাদের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়’, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে এগুলো সংগ্রহ করা। কারণ, একটা কথা মনে রাখতে হবে, এই করোনার কারণে, এই ভাইরাসটা এমনভাবে সারা বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে, এখানে কিন্তু খাদ্য অভাবটা মারাত্মকভাবে দেখা দিতে পারে। কিন্তু, বাংলাদেশে আমি এইটুকু বলতে পারি যে এই দেশে আমাদের মাটি আছে, মানুষ আছে, আমাদের মাটি অত্যন্ত উর্বর। আমরা কিন্তু, নিজেদের চাহিদা পূরণ করেও অনেককে সাহায্য করতে পারবো, যদি আমরা যথাযথভাবে খাদ্য উৎপাদন করতে পারি। সেটা আমাদের উৎপাদন করতে হবে। যাতে আমাদের দেশের মানুষ কষ্ট না পায়। আবার দরকার হলে আমরা অনেক মানুষ বা দেশকে সহযোগিতা করতে পারি। এটাও আমরা রপ্তানি করতে পারি। সেভাবে আপনারা উৎপাদন বাড়াবেন। আবারো বলছি, কারো এতটুকু জমিও যাতে অনাবাদী না থাকে। তা ছাড়া, যারা ঘরে, ছাদে, টবে চাষ করতে পারেন, একটা কাঁচামরিচ লাগিয়ে সেটা যদি আপনি খান, নিজেরই ভালো লাগবে। এভাবেই আপনারা নিজেরা কিছু করতে পারেন।’

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

6h ago