সেদিন বিশ্বজয়ের আনন্দে মেতেছিল বাংলাদেশ

১৯৯৭ সালের ১৩ এপ্রিল, দুপুরবেলা। মালোয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের কিলাত কেলাব মাঠ থেকে ভেসে আসা রেডিওর ধ্বনি আজও কানে ভাসে অনেকের। সেদিন যে প্রায় বিশ্ব জয়ের আনন্দে মেতেছিল বাংলাদেশ। তখনো ক্রিকেট বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা নয়। সে আসন ফুটবলের। কিন্তু বড় মঞ্চে সাফল্য এসেছিল ক্রিকেটের হাত ধরেই। নাটকীয় ফাইনাল জিতে আইসিসি ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। যে ভিতের উপর দাঁড়িয়েই আজকের বাংলাদেশের ক্রিকেটের রমরমা জৌলুস, দুর্বার পথচলা।
শেষ বলে দরকার ছিল ১ রান। হাতে দুই উইকেট। হাসিবুল হোসেন শান্তর অনসাইডে ঠেলে দিয়েই দুহাত উঁচিয়ে দৌড় বাংলাদেশের ক্রিকেটের এক বড় বিজ্ঞাপন হয়েই ঝুলছে এতকাল। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে ডি/এল মেথডে বাংলাদেশ জিতে ২ উইকেটে।
প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের বিশ্বকাপে যাওয়া নিশ্চিত হয়েছিল আগের ম্যাচেই। অর্থাৎ সেমিফাইনালে। স্কটল্যান্ডকে ৭২ রানে হারিয়ে বাংলাদেশ নিশ্চিত করে টুর্নামেন্টের ফাইনাল একই সঙ্গে বিশ্বকাপের টিকেট।
টুর্নামেন্টটি ছিল মূলত বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব। মর্যাদা ছিল না আন্তর্জাতিক ম্যাচের। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটে মর্যাদার বিচারে যার অবস্থান প্রায় চূড়ায়। এই টুর্নামেন্টের সাফল্যেই বাংলাদেশের ওয়ানডে মর্যাদা লাভ। ১৯৯৯ বিশ্বকাপ খেলা। সেই বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ড ও পাকিস্তানকে হারিয়ে হইচই ফেলে দেওয়া। এবং যার প্রেক্ষিতে ২০০০ সালে টেস্ট মর্যাদা লাভ।
সেমিফাইনালে খালেদ মাসুদের ৭০ আর আমিনুল ইসলাম বুলবুলের ৫৭ রানে ভর করে বাংলাদেশ করে ২৪৩ রান। মোহাম্মদ রফিক আর এনামুল হক মনির স্পিনে স্কটিশরা গুটিয়ে যায় মাত্র ১৭১ রানে।
১২ এপ্রিল ফাইনালে স্টিভ টিকালোর দাপটে ফিকে হতে বসেছিল স্বপ্ন। বাকিদের ব্যর্থতার মাঝে টিকালো একাই ১৪৭ রানের ইনিংস খেলে দলকে পাইয়ে দেন ২৪১ রানের পূঁজি। লক্ষ্যটা চ্যালেঞ্জিং। এরমধ্যে নামে বৃষ্টি। হেলিকপ্টার দিয়েই শুকানো হয় মাঠ। খেলা চলে যায় পরদিন (১৩ এপ্রিল) রিজার্ভ ডেতে। তাতে যেন শাপেভর বাংলাদেশের।
২৫ ওভারে ১৬৬ রানে নেমে আসা নতুন লক্ষ্যে রফিক, মিনহাজুলদের ঝড়ো শুরুর পর বুলবুল, আকরামের এগিয়ে নেওয়া। শেষ দিকে সাইফুল ইসলাম, খালেদ মাসুদ পাইলট আর শান্তর ছোট ছোট অবদানে তীরে তরি ভেড়ানো।
বাংলাদেশের ক্রিকেটের স্বর্নোজ্জ্বল ইতিহাসে এই নামগুলো চিরস্থায়ী জায়গা পেয়ে যায় সেদিন। হুট করেই দেশে জনপ্রিয়তা লাভ করে ক্রিকেট। ফুটবলকে ছাপিয়ে ক্রমশই জৌলুস বাড়তে থাকে ক্রিকেটের। ২৩ বছরে ক্রিকেট চলে গেছে অন্য ধাপে। বাংলাদেশকে এখন বিশ্বমঞ্চে সুনাম এনে দিতে পারে এই খেলাই।
Comments