রাজগুরুর প্রয়াণে মুহ্য শিষ্য-ভক্তরা
বাংলাদেশের অন্যতম বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু ও দ্য ওয়ার্ল্ড বুদ্ধ শাসনা সেবক সংঘের প্রধান শ্রীমৎ উ পঞ্ঞা জোত মহাথেরের মৃত্যুতে শোকাহত তার শিষ্য ও ভক্তরা। গতকাল সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে এই ধর্মগুরু পরলোক গমন করেন। তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর।
হৃদরোগে আক্রান্ত হলে গত ১০ এপ্রিল তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর আগের দিন রাত থেকে তিনি অসুস্থ বোধ করেন। আজ মঙ্গলবার তার আশ্রম সূত্র জানিয়েছে, অন্তেষ্টিক্রিয়া কবে হবে সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তার প্রয়াণ ছিল অনুমেয়। ৮ এপ্রিল দুপুর পৌনে ২টায় ফেসবুকে তিনি একটি ভিডিও পোস্ট করেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘শেষ রাত্রি শেষ আনন্দ শেষ স্মৃতি’।
বোমাং রাজপরিবারে ১৯৫৫ সালে শ্রীমৎ উ পঞ্ঞা জোত মহাথেরের জন্ম হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষা জীবন শেষ করে ১৯৮৩ সালে তিনি বাংলাদেশ সরকারের ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগ দেন। প্রায় ৮ বছর সফলতার সঙ্গে তিনি সেই দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৯৯০ সালে তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়ে চিংম্রং বিহারে প্রব্রজ্যা ও উপসম্পদা গ্রহণ করেন। সেদিন থেকেই গৃহী নাম উচহ্লা ত্যাগ করে তিনি উ পঞ্ঞা জোত মহাথের নামে পরিচিতি লাভ করেন। বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারে ও পার্বত্য অঞ্চলের অনাথ এবং পিছিয়ে পড়া শিশুদের জন্য তিনি ছিলেন আলোকবর্তিকা।
তিনি ১৯৭৫ সালে মারমা ভাষায় ‘সানগ্রাইমা’ গান রচনা করেন। পরবর্তী সময়ে মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই উৎসবে সবার মুখে মুখে এই গানটি উঠে আসে। গানের কথা ছিল. ‘সাংগ্রাইমা, ঞি ঞি ঞা ঞা/ রিক্জায় গাই পামে’। এর অর্থ হলো, এসো মিলে সাংগ্রাইয়ের মৈত্রী পানি বর্ষণে।
দ্য রয়েল আর্টিস্ট গ্রুপ নামে একটি ব্যান্ড দলও গঠন করেছিলেন তিনি। অনাথ শিশুদের জন্য গড়ে তোলে অনাথ আশ্রম ও ফ্রি স্কুল ‘বি হ্যাপি লার্নিং সেন্টার’। সেখানে প্রায় ৩১৭ শিশু পড়ালেখা করে। পর্যটন আকর্ষণ স্বর্ণ মন্দির তার হাতে গড়া। এ ছাড়া রাম জাদী, কিয়কমলং জাদীসহ অনেক ধর্মীয় স্থাপনা প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি।
তার লেখা উল্লেখযোগ্য বইগুলো হলো— দেশনা কল্পতরু, বিদর্শন সাধনা পদ্ধতি ও দীক্ষা, পঞ্চগুণো অনন্তো বন্দনা, বিদর্শন দর্পণ, শোয়েয়াংগা দীক্ষা ও বিদর্শন সাধনা পদ্ধতি।
Comments