নারী নেতৃত্বে করোনা জয়

বিশ্বব্যাপী করোনা মোকাবিলায় সফল দেশগুলোর মধ্যে একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো- নারী নেতৃত্ব। মহামারির মতো সংকটের সময়ে দক্ষ নেতৃত্বের দৃষ্টান্ত রেখেছে জার্মানি, নিউজিল্যান্ড, আইসল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক ও তাইওয়ানের মতো দেশগুলো।

বিশ্বব্যাপী করোনা মোকাবিলায় সফল দেশগুলোর মধ্যে একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো- নারী নেতৃত্ব। মহামারির মতো সংকটের সময়ে দক্ষ নেতৃত্বের দৃষ্টান্ত রেখেছে জার্মানি, নিউজিল্যান্ড, আইসল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক ও তাইওয়ানের মতো দেশগুলো।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য কিংবা রাশিয়ার মতো সামরিক ক্ষমতাধর দেশগুলো যেখানে মহামারি ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে দক্ষ নেতৃত্বের মাধ্যমে দেশের নাগরিকদের বাঁচাতে চেষ্টা করছেন নারী সরকারপ্রধানরা। মহামারি মোকাবিলায় এই সফল নারী নেত্রীদের নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ফোর্বস। 

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় এখন পর্যন্ত উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তৈরি করা দেশগুলোর ক্ষমতায় রয়েছেন নারীরা। অনেকেই হয়তো বলবেন ‘ছোট দেশ’, ‘জনসংখ্যা কম’ কিংবা ‘দ্বীপরাষ্ট্র’ বলেই সেসব দেশে সহজে মহামারি মোকাবিলা করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের পার্থক্যটা দেখা যেতে পারে। জার্মানি করোনা মোকাবিলায় যেভাবে কাজ করেছে একই আয়তন ও জনসংখ্যার যুক্তরাজ্য দ্বীপরাষ্ট্র হয়েও তা করতে পারেনি। নারী নেতৃত্বে থাকা দেশগুলোর কৌশল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় কয়েকটি সাধারণ বৈশিষ্ট্যের কারণেই তারা করোনা ঠেকাতে সফল হয়েছেন।

সত্য বলা

জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেল শুরু থেকেই অত্যন্ত ধীর-স্থিরভাবে দেশের মানুষকে বুঝিয়েছেন যে, ভয়ংকর এক ধরনের ভাইরাসের আক্রমণ হতে চলেছে। অন্তত ৭০ ভাগ মানুষ এতে আক্রান্ত হবে। বারবার করে তিনি বলেছেন, ‘এটা গুরুতর। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে।’

করোনাভাইরাসকে গুরুত্ব দিয়েই বিবেচনা করেছে জার্মানি। অন্যান্য দেশের মতো করোনাভাইরাসের শক্তি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো, জনমানুষের মধ্যে বিদ্বেষ কিংবা তথ্য গোপনের কোনো অভিযোগ জার্মানির বিরুদ্ধে নেই। প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় জার্মানিতে আক্রান্তের সংখ্যা কম ও মহামারি নিয়ন্ত্রণের সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। পরিসংখ্যান বলছে, খুব শিগগিরই জার্মানিতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করবে।

দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ

করোনা মোকাবিলায় প্রাথমিকভাবে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দেশগুলোর মধ্যে তাইওয়ান অন্যতম। জানুয়ারি মাসের শুরুতেই করোনার বিস্তার ঠেকাতে লকডাউন ঘোষণার বদলে আক্রান্তদের চিহ্নিত করে আলাদা করাসহ মোট ১২৪ ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট সাই ইং ওয়েন।

সিএনএনের এক প্রতিবেদনে তাইওয়ানের উদ্যোগকে ‘করোনা মোকাবিলায় বিশ্বে শ্রেষ্ঠ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

লকডাউন ঘোষণা ছাড়াই অন্যান্য কঠোর ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করে করোনা নিয়ন্ত্রণে এনেছে তাইওয়ান। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রায় এক কোটি ফেস মাস্ক সরবরাহ করেছে দেশটি।

করোনা মোকাবিলায় দক্ষ নেতৃত্বের কারণে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা অ্যার্ডেন। অ্যার্ডেনের নেতৃত্বে সংক্রমণের শুরুতেই দেশটিতে লকডাউন ঘোষণা করা হয়।

তিনি করোনার ভয়াবহতা ও লকডাউনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে স্পষ্টতই জাতিকে বোঝাতে সফল হয়েছেন। আর এ কারণেই জনগণ তার নির্দেশ অনুযায়ী সমস্ত নিয়ম কানুন মেনে চলেছেন। দেশটিতে ছয় জন আক্রান্ত হওয়ার পরপরই বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের বাধ্যতামূলকভাবে আইসোলেশনে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লে বিদেশি যাত্রীদের প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়।

দ্রুত সিদ্ধান্ত ও স্পষ্ট নির্দেশনার কারণেই নিউজিল্যান্ড মারাত্মক পরিণতির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। এখন পর্যন্ত দেশটিতে করোনায় নয় জন মৃত্যুবরণ করেছে, মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৩৬৬।

আক্রান্তের সংখ্যা কমতে শুরু করলেও দেশটির সীমান্ত চলাচলে কঠোর সতর্কতা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী অ্যার্ডেন। নিউজিল্যান্ডের নাগরিকরা দেশে ফিরতে পারছেন। তবে ফেরার পর বাধ্যতামূলকভাবে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হচ্ছে।

প্রযুক্তির ব্যবহার

দেশের সকল নাগরিকের বিনামূল্যে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করেছে আইসল্যান্ড।

অধিকাংশ দেশ উপসর্গ দেখা যাওয়ার পর করোনার পরীক্ষা করলেও ব্যতিক্রম আইসল্যান্ড। প্রধানমন্ত্রী ক্যাটরিন ইয়াকোবস্টডিটির নেতৃত্বে দেশটিতে প্রকৃত আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা জানতে ঝুঁকিতে থাকা সকল মানুষের করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। জনসংখ্যার অনুপাতে দেশটি ইতিমধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি মানুষের করোনা পরীক্ষা করেছে। আক্রান্তের সংস্পর্শে আসাদের খুঁজে বের করতে প্রযুক্তির সাহায্যে শক্তিশালী ব্যবস্থা চালু করেছে। অন্যান্য দেশের মতো আইসল্যান্ডে লকডাউন হয়নি এমনকি স্কুলগুলোও বন্ধ করা হয়নি।

প্রযুক্তি ব্যবহার করে সচেতনতা তৈরির দৃষ্টান্ত রেখেছে ফিনল্যান্ডে। গত ডিসেম্বর দেশটিতে নির্বাচিত হয়েছেন বিশ্বে সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী সানা মেরিন। নেতৃত্বে আসার পরপরই করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলায় সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করেন তিনি।

দেশের সব মানুষ সংবাদপত্র না পড়লেও অধিকাংশ মানুষই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় থাকে বলে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য অনলাইন ক্যাম্পেইন শুরু করেন তিনি। 

নাগরিকদের প্রতি ভালোবাসা

ঘরবন্দি শিশুদের মানসিক অবস্থার কথা ভেবে বিশ্বে প্রথম শিশুদের জন্য বিশেষ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী এর্না সোলবার্গ। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত ওই সংবাদ সম্মেলনে কেবল শিশুরাই ফোন করতে পারত। সম্মেলনে সারা দেশের শিশুদের সব ধরনের প্রশ্নের উত্তর দেন প্রধানমন্ত্রী এর্না সোলবার্গ। আতঙ্কে থাকা শিশুদের অনুপ্রেরণা ও সচেতন করে তুলতে এমন আয়োজন করেন তিনি।

বিশ্বব্যাপী মহামারির সংকটে ক্ষমতায় থাকা নারীদের বক্তৃতা ও ভাষণে দৃঢ়তার পাশাপাশি মমতা ও স্নেহের বিষয়টি অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, ইসরায়েল, রাশিয়ার মতো ক্ষমতাধর দেশগুলো যেখানে করোনা মোকাবিলা করতে গিয়ে অন্য দেশকে দোষারোপ, নাগরিকদের মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ, আইনের ভুল প্রয়োগ, সংবাদমাধ্যমকে দোষারোপ কিংবা ‘করোনা ততটা মারাত্মক নয়’ বলে ফাঁকা বুলি আওড়াচ্ছে সেখানে করোনার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছেন মানবিক নারী নেত্রীরা।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

6h ago