করোনার কারণে পঞ্চগড় সীমান্তে বসেনি দুই বাংলার মিলন মেলা

বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে এভাবেই সীমান্তে ভিড় করেন দুই বাংলার মানুষ। স্টার ফাইল ছবি

প্রতি বছরের মতো এবার পহেলা বৈশাখে সূর্য উঠার সঙ্গে সঙ্গে পঞ্চগড়ের বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত অভিমুখে হাজার হাজার মানুষের ছুটে যাওয়ার সেই চিরচেনা দৃশ্যে দেখা যায়নি। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে বাংলাদেশে সাধারণ ছুটি ও ভারতে লকডাউন থাকায় সদরের অমরখানা সীমান্ত কাঁটাতারের দুপাশে বসেনি বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মিলন মেলা।   

সারাবছর এই দিনটির প্রতীক্ষায় থাকা দুই বাংলার স্বজনরা। তবে তারা হতাশ হলেও পরিস্থিতির কারণে সব মেনে নিয়েছেন। আর তাদের অপেক্ষার সময় বেড়েছে পরের পহেলা বৈশাখ পর্যন্ত।

স্থানীয়রা জানান, ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির আগ পর্যন্ত এই জেলার চারটি উপজেলা ভারতের জলপাইগুড়ি অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু, দেশ ভাগের কারণে এখানে বসবাসরত আত্মীয়-স্বজন দুভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও দুদেশের নাগরিকরা আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে যাতায়াতের সীমিত সুযোগ পেতেন। কিন্তু, সীমান্ত এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার পর থেকে সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন তারা।

উভয় দেশের নাগরিকদের অনুরোধে প্রায় এক যুগ ধরে বিজিবি ও বিএসএফের অলিখিত সম্মতিতে অমরখানা সীমান্তের ৭৪৪ নম্বর মেইন পিলারের ১ থেকে ৭ নম্বর সাব-পিলার পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার নো ম্যান্স ল্যান্ডে নববর্ষের দিন তারা কাঁটাতারের দুই ধারে এসে দেখা করার সুযোগ পান। 

অর্থাভাবে পাসপোর্ট-ভিসা করতে না পারা দুই দেশের মানুষ এই দিনটির অপেক্ষায় থাকেন স্বজনদের সঙ্গে দেখা করে কুশলাদি বিনিময়ের জন্য। শুধু পঞ্চগড় নয়, আশপাশের কয়েকটি জেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ স্বজনদের জন্য নিয়ে আসেন নানা রকমের উপহার।

সদরের জগদল এলাকার নকিবুল ইসলাম প্রধান বলেন, ‘আমার নানাবাড়ীর আত্মীয় স্বজন সবাই ভারতের জলপাইগুড়িতে থাকেন। তাদের সঙ্গে দেখা করতে প্রতি বছরই পহেলা বৈশাখে সীমান্তে যাই। এবার করোনাভাইরাসের কারণে সবই উলট-পালট হয়ে গেল। তাদের সঙ্গে দেখা করতে পারলাম না। তবে ভিডিও কলে কথা বলেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই কঠিন মুহূর্তে দেখা না হওয়াটা খুব বেশি কষ্টের না। এই দুর্দিন কাটিয়ে বেঁচে থাকলে আগামীতে অবশ্যই দেখা হবে।’

অমরখানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নুরুজ্জামান বলেন, ‘প্রতি বছর বিজিবি এবং বিএসএফের সম্মতিক্রমে অমরখানা সীমান্তে দুই বাংলার মিলন মেলা হয়। কিন্তু, এবার বৈশ্বিক দুর্যোগের কারণে তা সম্ভব হয়নি।’

নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মামুনুল হক বলেন, ‘উভয় দেশের জনগণের আবেগ বিবেচনায় নিয়ে জেলা প্রশাসনের বার্তার প্রেক্ষিতে অলিখিতভাবে ভারতের বিএসএফের সঙ্গে কথা বলে এই মিলন মেলার আয়োজন হতো। তবে এবার বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে মিলন মেলা হয়নি।’

পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘করোনাভাইরাস এখন সারাবিশ্বের সমস্যা। এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশের মানুষকে ঘরে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। এছাড়া ভারতেও চলছে লকডাউন। সব মিলিয়ে এই কঠিন পরিস্থিতিকে এবার সীমান্তে মিলন মেলা হয়নি।’

Comments

The Daily Star  | English

Govt to expedite hiring of 40,000 for public sector

The government has decided to expedite the recruitment of 6,000 doctors, 30,000 assistant primary teachers, and 3,500 nurses to urgently address the rising number of vacancies in key public sector positions.

8h ago