৪ জেলায় চাল আত্মসাতের অভিযোগ ও উদ্ধার

বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নূরে আলমের ভূতেরদিয়া গ্রামের তিন তলা ভবনের নীচতলা থেকে জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত ১৮৪ বস্তা চাল উদ্ধার। ছবি: স্টার

অভিযান চালিয়ে সিরাজগঞ্জ, বরিশাল ও বগুড়া থেকে সরকারি চাল উদ্ধার করেছে প্রশাসন। যশোরে লিখিতভাবে চাল আত্মসাতের অভিযোগ জানিয়েছে এলাকাবাসী।

সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলা প্রশাসন, খাদ্য বিভাগ ও পুলিশের যৌথ অভিযানে দুই হাজার কেজি সরকারি চাল উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় আবু বক্কর নামে এক চাল ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়।

গতকাল বুধবার রাতে উপজেলার জোতপাড়া বাজারের একটি দোকান ও খাস কাউলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রফিকুল ইসলামের বাড়ি থেকে এসব চাল উদ্ধার করা হয়।

চৌহালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশেদুল হাসান বিশ্বাস জানান, গত রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তার নেতৃত্বে জোতপাড়া বাজারে অভিযান চালিয়ে চাল ব্যবসায়ী আবু বক্করের দোকান থেকে এক হাজার ৫০০ কেজি চাল উদ্ধার করা হয়।

এ সময় আবু বক্করকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়৷ তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, খাস কাউলিয়া দক্ষিণপাড়া এলাকায় ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলামের বাড়ি থেকে আরও ৫০০ কেজি সরকারি চাল উদ্ধার করা হয়। রফিকুল খাস কাউলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য।

চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেওয়ান মওদুদ আহমেদ জানান, চাল উদ্ধারের ঘটনাটি তদন্তের জন্য উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক আব্দুল মালেককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

বরিশালে র‌্যরের অভিযানে জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত ভিজিডি কর্মসূচীর ১৮৪ বস্তা চাল উদ্ধার করা হয়েছে। বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নূরে আলমের ভূতেরদিয়া গ্রামের তিন তলা ভবনের নীচতলা থেকে বুধবার দিবাগত রাতে এই চাল জব্দ করা হয়।

বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজিত হাওলাদার জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জেলেদের এই চাল চেয়ারম্যানের বাড়ী থেকে উদ্ধার করে জব্দ করেছে প্রশাসন। ঘটনায় জড়িত থাকায় ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জাকির হোসেন ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রোকনুজ্জামানকে ১ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। পলাতক রয়েছেন চেয়ারম্যান, ডিলারসহ সংশ্লিষ্ট সবাই।

বাবুগঞ্জ থানায় চেয়ারম্যান নূর আলম বেপারীসহ চার জনের নামে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মাঝিহট্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মির্জা গোলাম হাফিজ সোহাগকে ওএমএস’র ৩৩০ কেজি চালসহ গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় আটক করে পুলিশ।

শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে মির্জা গোলাম হাফিজ সোহাগ ওএমএস’র চাল আত্মসাৎ করেছেন— এমন তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল সৈয়দ দামগাড়া গ্রামে তার বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। সে সময় নয়টি বস্তায় ৩৩০ কেজি চাল উদ্ধার করা হয়। অভিযানের সময় তার বাড়ি থেকেই তাকে আটক করা হয়। আমরা আজ মামলার বিবৃতি বগুড়া দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠাচ্ছি। অভিযুক্তকে আদালতে পাঠানো হবে।’

যশোরের শার্শা উপজেলার উলাশী ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজি দরের চাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। যশোর জেলা প্রশাসক ও শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী।

অভিযোগে বলা হয়, শার্শা উপজেলার উলাশী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ইউপি সদস্য কামাল হোসেন কাঠুরিয়া গ্রামের ভ্যানচালক ও দিনমজুরসহ ১৫ জনের কাছ থেকে খাদ্যবান্ধব ১০ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি চালের কার্ড কৌশলে জমা নেন। গত ৮ এপ্রিল তিনি ১৫টি কার্ডের চাল ডিলারের কাছ থেকে তুলে আত্মসাৎ করেন।

১০ টাকা কেজি দরে চাল দিচ্ছে এমন খবর শুনে কার্ডের মালিকরা ইউপি সদস্য কামাল হোসেনের কাছে তাদের কার্ড চাইতে যান। এ সময় তিনি জানান, তাদের কার্ড বাতিল হয়ে গেছে। এ খবর শুনে হতভম্ব হয়ে পড়েন কার্ডের মালিকরা। পরে ডিলারের কাছে খবর নিয়ে জানতে পারেন তাদের নামে চাল তুলে নিয়েছেন কামাল হোসেন।

শার্শা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসার ইন্দ্রজিৎ সাহা বিষয়টি সরেজমিন তদন্ত করেন। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘তদন্ত করেছি। রিপোর্ট শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর পেশ করবো।’

তিনি জানান, শার্শা উপজেলায় ১৭ হাজার ৬১৭ জনের নামে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর ১০ টাকা কেজি দলের চালের কার্ড আছে। কার্ডধারীরা মাসে ৩০ কেজি চাল ১০ টাকা দরে উত্তোলন করতে পারবেন। এক জনের কার্ডে অন্য কেউ চাল তুলতে পারবেন না।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কামাল মেম্বার বলেন, ‘ওপরের নির্দেশ ছিল কার্ড পরিবর্তন করার। এ জন্য পুরনো কার্ড দিয়ে অন্যদের চাল তুলে দিয়েছি।’

উলাশী ইউপি চেয়ারম্যান আয়নাল হক বলেন, ‘ঘটনা জেনেই কামাল মেম্বারকে নির্দেশ দিয়েছি উত্তোলন করা চাল কার্ডধারীদের ফিরিয়ে দিতে। করোনাভাইরাসের কারণে অসহায়দের প্রাপ্য কোনো ত্রাণ আত্মসাৎকারীকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলক কুমার মণ্ডল বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত চলছে। অপরাধ প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Comments

The Daily Star  | English
Ishraque Demands Advisers Asif, Mahfuj Alam Resign

Protests continue as Ishraque vows to stay on streets until advisers resign

Protests rolled into this morning as BNP activists and leaders held their ground in front of the mosque, demanding that Ishraque be allowed to take the oath as mayor

1h ago