‘নারায়ণগঞ্জে একটি করোনা পরীক্ষা ল্যাব অত্যন্ত জরুরি’

সেলিনা হায়াৎ আইভী। ছবি: সংগৃহীত

দেশে প্রতিদিনই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ইতোমধ্যেই ঢাকার পরে নারায়ণগঞ্জকে দেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জেলা হিসেবে চিহ্নিত করেছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। আইইডিসিআরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ২ হাজার ১৪৪ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে শতকরা প্রায় ২০ ভাগই নারায়ণগঞ্জের।

বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী।

সেখানকার বর্তমান পরিস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমিও বলবো, নারায়ণগঞ্জ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, এটা এখানকার চারিদিকে ছড়িয়ে গেছে। সদরের প্রত্যেকটি ওয়ার্ডসহ রূপগঞ্জ, আড়াইহাজার, সোনারগাঁও, সবগুলো জায়গাতেই ছড়িয়ে পড়েছে। এটাতো অবশ্যই চিন্তার ব্যাপার। নারায়ণগঞ্জ শ্রমিক অধ্যুষিত এলাকা। এখানে অনেক মানুষ থাকেন। বাইরের জেলারও অনেক লোক আসেন।’

‘আমার তো মনে হয় ৬৪ জেলার লোকই নারায়ণগঞ্জে কোনো না কোনো কর্মসংস্থানের কাজ করছেন। ইপিজেড গার্মেন্টস ছাড়াও নিতাইগঞ্জে চাল, ডাল, আটা, ময়দা, ভুষির মতো কাঁচামালের ব্যবসা রয়েছে। বিভিন্ন মিল-কারখানা রয়েছে এখানে। সেই কারণেই নারায়ণগঞ্জটা এভাবে আক্রান্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে’, বলেন তিনি।

করোনা রোগীর চিকিৎসায় নারায়ণগঞ্জে ডেডিকেটেড হাসপাতালের বিষয়ে মেয়র বলেন, ‘ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জের ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি করোনা হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। সেখানে রোগীরা যাচ্ছেন। এ ছাড়া, সাজেদা ফাউন্ডেশন নারায়ণগঞ্জে একটা হাসপাতাল করেছে। সেখানে চারটি আইসিইউ বেড রয়েছে। সেটিও রোগীতে ভর্তি। সব মিলিয়ে কাজ চলছে। কিন্তু, আমি মনে করি এগুলো যথেষ্ট নয়। আমাদের অন্য চিন্তাও করতে হবে। কারণ, আমার মনে হচ্ছে দিনকে দিন আমরা আরও খারাপের দিকেই হয়তো যাবো। তবে, ঢাকায় সরকারি-বেসরকারিভাবে অনেক হাসপাতাল করা হচ্ছে। সেগুলো হয়ে গেলে সেখানেও আমরা রোগী পাঠাতে পারবো।’

ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের বিষয়ে মেয়র বলেন, ‘চিকিৎসক, নার্সসহ হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট যে কর্মী, তাদের সবাইকে সুরক্ষা সরঞ্জাম দিতে হবে। এটা অত্যন্ত জরুরি।  চিকিৎসকরা নিজেদের যত বেশি নিরাপদ মনে করবেন, তত বেশি তারা আমাদের সেবা দেওয়ার চেষ্টা করবেন। নারায়ণগঞ্জের অনেক চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, এখনো আক্রান্ত রয়েছেন। তাদের মানসম্পন্ন ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম দিতেই হবে। ডাক্তাররা যদি আক্রান্ত হয়ে যান এবং সেই সংখ্যা যদি অনেক বেড়ে যায়, তাহলে তো আক্রান্ত রোগীরা আরও সংকটে পড়বেন।ডাক্তাররা পিপিই নিয়ে যে অভিযোগ করছেন, তা গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে এবং সমাধান করতে হবে।’

‘জেলা সিভিল সার্জনসহ ৩০০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কও হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন। আমি মনে করি, আমাদের তো থেমে থাকলে চলবে না। আমাদের কাজ করতে হবে, সুরক্ষিত হয়ে কাজ করতে হবে। তাই চিকিৎসকদের যা যা সুরক্ষা সরজ্ঞাম দরকার, সেগুলো দ্রুত সরবরাহ করলে তারা মানুষকে সেবা দিতে পারবেন’, যোগ করেন তিনি।

নারায়ণগঞ্জ ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হলেও সেখানে করোনার নমুনা পরীক্ষার কোনো ল্যাব নেই। ল্যাবের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘ল্যাব এখন অত্যন্ত জরুরি। বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী নিজ উদ্যোগে রূপগঞ্জে একটি ল্যাব তৈরি করছেন। সেটি হয়ে গেলে আমাদের সুবিধা হবে। আমরা সেখানেও নমুনা পাঠাতে পারবো। এ ছাড়া, প্রধানমন্ত্রীও নারায়ণগঞ্জে একটি ল্যাব করার জন্য বলেছেন। যদি নারায়ণগঞ্জে একটি ল্যাব হয়, তাহলে আমরা আক্রান্ত রোগী দ্রুত শনাক্ত করতে পারবো। তখন তাদের আইসোলেশনের ব্যবস্থা করলে এটা হয়তো অনেক অংশে কমে আসতে পারে।’

নারায়ণগঞ্জের লকডাউনে আরও কড়াকড়ি করার কথা উল্লেখ করে আইভি বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা চেষ্টা করছেন। কিন্তু, লোকজন কথা শুনতে চায় না। দেখা গেছে, যেই এলাকাতে কেউ মারা যাচ্ছেন বা আক্রান্ত হচ্ছেন, তখন হয়তো ওই এলাকাতে দুই-তিন দিনের জন্য লকডাউন থাকছে। পরে আবার আগের পর্যায়ে চলে আসছে। এভাবে হলে তো হবে না। সাধারণ মানুষকেও বুঝতে হবে। ঘরে থাকতে হবে। সেই কথাগুলোই আমরা বার বার বলছি।’

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের উদ্যোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমাদের তিনটি অঞ্চলে প্রায় ১২ জন চিকিৎসক মানুষকে পরামর্শ দিচ্ছেন, প্রেসক্রাইব করছেন। বিশেষ করে, টেলিফোনেই এগুলো বেশি করছেন। আমাদের সিটি করপোরেশন থেকে চারটা অ্যাম্বুলেন্স কাজ করছে। সেগুলো দিয়ে আমরা নমুনা সংগ্রহ করছি। সেগুলো সিভিল সার্জনের অফিসে দিয়ে আমরা তাদের সহায়তা করছি। যেখানেই আমরা পজিটিভ রোগী পাচ্ছি, চেষ্টা করছি সেই এলাকার কাউন্সিলরদের মাধ্যমে লকডাউন করে মানুষকে বোঝাতে। শহরের প্রতিদিনের যে রুটিন কাজ, সেগুলোও করা হচ্ছে। প্রতিদিন ক্লোরিন মিশ্রিত পানি ছিটানো হচ্ছে, রাস্তাঘাট পরিষ্কার করা হচ্ছে। আমাদের চিকিৎসক টিম রয়েছে, তারা কাজ করছেন, নমুনা সংগ্রহ করছেন।’

‘এ ছাড়া, সরকার থেকে যে অনুদান আসছে, সেই চাল বিতরণের কাজেও আমাদের প্রত্যেক কাউন্সিলর সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। প্রায় ৩৬ জন কাউন্সিলর মিলে তালিকা ধরে সবাইকে এগুলো দিচ্ছেন। সরকারের নির্দেশনা মেনে তারা কাজ করছেন। এখনো তারা মাঠে আছেন। তবে, তাদেরও ঝুঁকি রয়েছে। কারণ, লোকজন কথা শুনতে চায় না। খাবার-ত্রাণের জন্য বাড়িঘরে গিয়ে উঠেন,’ বলেন মেয়র।

মরদেহ দাফনেও সিটি করপোরেশন থেকে সহাযোগিতা করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখন মারা গেলে কেউ যেতে চাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে দাফনে আমাদের কাউন্সিলররা সহযোগিতা করছেন। সিটি করপোরেশন থেকে টিম গঠন করা হয়েছে। কবর খনন থেকে শুরু করে দাফন করা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন অনবরত সহযোগিতা করছে।’

করোনা সতর্কতায় তিনি বলেন, ‘এখানে প্রতিদিনই রোগী বাড়ছে। আগামী দিনগুলোতে হয়তো আরও বাড়তে পারে। নারায়ণগঞ্জবাসীকে বলবো, বারবার প্রশাসন এসে লকডাউন করবে— তা হয় না। আপনাদেরও সতর্ক হতে হবে। কাউন্সিলরদের ফোন করে বলেছি, তাদের মাধ্যমে স্থানীয়দের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। যাতে লোকজন রাস্তায় বের না হয়ে বাড়িতেই থাকেন। বাড়িতেই থেকে যাতে সরকারকে সহযোগিতা করে।’

‘যেহেতু সারা বিশ্বেই মহামারিটা দেখা দিয়েছে। তাই আমি বলবো, নারায়ণগঞ্জবাসী যেন আতঙ্কিত না হন। আতঙ্কিত না হয়ে, এখন কীভাবে আমরা এটা মোকাবিলা করবো, কীভাবে নারায়ণগঞ্জসহ অন্যান্য জেলার মানুষকে সুরক্ষিত করবো, সেটা নিয়ে আমাদের চিন্তা করতে হবে। কাজ করতে হবে। সেভাবেই আমরা এগোচ্ছি। প্রশাসনের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করছি’, বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

42m ago