লালমনিরহাটে হঠাৎ বাড়ছে চালের দাম

লালমনিরহাটে হঠাৎ করেই চালের দাম বাড়তে শুরু করেছে। গত দুদিনে চালের দাম কেজিতে চার থেকে ছয় টাকা বেড়ে যাওয়ায় পাইকারি বাজারে প্রতিকেজি চাল বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫২ টাকা। যা দুদিন আগেও ছিল ৩৬ থেকে ৪৬ টাকা। আর গত এক সপ্তাহ আগে প্রতিকেজি চালের দাম ছিল ৩২ থেকে ৪২ টাকা।
ছবি: এস দিলীপ রায়

লালমনিরহাটে হঠাৎ করেই চালের দাম বাড়তে শুরু করেছে। গত দুদিনে চালের দাম কেজিতে চার থেকে ছয় টাকা বেড়ে যাওয়ায় পাইকারি বাজারে প্রতিকেজি চাল বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫২ টাকা। যা দুদিন আগেও ছিল ৩৬ থেকে ৪৬ টাকা। আর গত এক সপ্তাহ আগে প্রতিকেজি চালের দাম ছিল ৩২ থেকে ৪২ টাকা।

হঠাৎ করে চালের দাম বাড়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন জেলার সাধারণ মানুষ। প্রশাসনের বাজার মনিটরিং ব্যবস্থাও অনেক দুর্বল।

শহরের উত্তরা সিনেমা রোডের চা দোকানদার কাসেম আলী (৬৫) বলেন, ‘এমনিতেই করোনার কারণে আমরা কর্মহীন হয়ে বাড়িতে বসে আছি। তাই কোনো আয় নেই। তার উপর চালের দাম রাতারাতি বেড়ে যাওয়ায় আমরা সংসার চালাতে হিমশিম খাব। চালের দাম এভাবে বাড়তে থাকলে আমাদের নাগালের বাইরে চলে যাবে।’

শহরের সাপ্টানা রোডের পান ব্যবসায়ী সুজন সরকার (৪২) জানালেন, একমাসে আগে যে চাল ২৬ টাকা কেজি দরে কিনেছিলেন সেই চাল এখন ৪২ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। সবজী বাদে অন্য সকল নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামও বেড়েছে বলে তিনি জানান।

লালমনিরহাট শহরের কুলাঘাট রোডের ত্রাণ সহায়তাকারী ঠিকাদার ও আ. লীগ নেতা রেজাউল করিম স্বপন বলেন, ‘করেনা প্রাদুর্ভাব শুরুর দিকে আমি যে চাল ২৮ টাকা কেজি দরে কিনেছিলাম সেই একই চাল কিনতে হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি দরে। আবার অনেক সময় চালের সংকটও দেখা দিচ্ছে। ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার চাল কিনতে গিয়ে আমাকে জটিলতায় পড়তে হচ্ছে। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা না হলে তা লাগামহীনভাবে বাড়তে থাকবে।’

লালমনিরহাট সদর উপজেলার ভাটিবাড়ি গ্রামের কৃষক সুদেব চন্দ্র বর্মণ (৬৪) জানালেন, তাদের উৎপাদিত সব ধানই বিক্রি করা হয়েছে। তারা প্রতিমণ ধান ৫শ থেকে সাড়ে ৬শ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। এখন তাদের হাতে খাওয়ার মতো ধান ছাড়া আর অবশিষ্ট নেই। অথচ যখন তাদের ধান নেই তখন ধানের মণ ১১শ থেকে সাড়ে ১২শ টাকা।

লালমনিরহাট শহরের গোশালাবাজারের চালের পাইকারি বিক্রেতা মোসলেম দেওয়ান বলেন, ‘বাজারে এখন খুচরা ক্রেতা খুবই কম। যারা বাজারে আসছেন তারা বস্তায় বস্তায় চাল কিনছেন। আমাদের নিজস্ব কোন স্টক নেই, মিল মালিকদের কাছ থেকে চাল কিনে বাজারে বিক্রি করি। মিল মালিকের কাছে বেশি দামে চাল কিনছি তাই বাধ্য হয়ে বেশি দামে বিক্রি করছি। মিল মালিকরা যেভাবে ধান ও চালের সংকটের কথা বলছেন তাতে চালের দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা করছি।’

লালমনিরহাট সদর উপজেলার নামাটারি এলাকার চালকল মালিক উজ্জল ইসলাম বলেন, তাদেরকে বেশি দামে ধান কিনে চাল তৈরি করতে হচ্ছে বলেই বেশি দামে চাল বিক্রি করতে হচ্ছে। বড় বড় মিল মালিকরা হাজার হাজার টন ধান চাল স্টক করেছেন তারাই অপ্রত্যাশিত মুনাফা ভোগ করছেন।

‘মূলত অটো মিল মালিকরা বর্তমান বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করছেন,’ বলেন তিনি।

জেলা মার্কেটিং অফিসার আব্দুর রহিম চালের দাম বেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘ধানের সংকট ও শ্রমিকের সংকট  দেখিয়ে জেলার অধিকাংশ চালকল মালিকরা চাল উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছেন। এ কারণে বাজারে চালের সরবরাহ কমে গেছে। এই সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রাতারাতি চালের দাম বাড়িয়েছে। এই মুহূর্তে বাজারে খুচরা ক্রেতা নেই বললেই চলে।’

চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে তারা অভিযানে নামবেন বলেও জানান তিনি।

  

Comments

The Daily Star  | English

Floods cause Tk 14,421 crore damage in eastern Bangladesh: CPD study

The study highlighted that the damage represents 1.81 percent of the national budget for fiscal year (FY) 2024-25

1h ago