পঞ্চগড় সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে আহত শিক্ষার্থী মারা গেছে

পঞ্চগড় সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত শিক্ষার্থী শিমোন রায়ের মা-বাবা ও ছোটবোন। ২০ এপ্রিল ২০২০। ছবি: স্টার

দেশের ভেতরে এসে এক শিক্ষার্থীকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) গুলি করে হত্যার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য ও প্রতিবেশী মো. আসাদুজ্জামানসহ গ্রামবাসী। তারা সরকারকে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করার দাবিও জানান।

এখন শোকস্তব্ধ পরিবারসহ পাড়া-প্রতিবেশীরা অপেক্ষা করছেন কিশোর শিমোন রায়ের লাশের জন্য।

নিয়মানুযায়ী ময়নাতদন্ত শেষ হলে রংপুর থেকে নিয়ে আসা হবে মৃতদেহ। তারপর সদ্য স্বপ্নভাঙা পিতা তার একমাত্র ছেলের মুখে আগুন দিয়ে সম্পন্ন করবেন শেষকৃত্য অনুষ্ঠান।

গতকাল রোববার বিকালে পঞ্চগড় সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে আহত শিক্ষার্থী অবশেষে রাত সাড়ে আটটায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায়।

সেই সঙ্গে অফুরন্ত স্বপ্নের অবসান ঘটেছে বেসরকারি সাহায্য সংস্থা পরিচালিত স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করা মধ্যবয়সী এক বাবার।

স্থানীয় ইউপি সদস্য ও প্রতিবেশী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘এক ছেলে, এক মেয়েসহ স্বামী-স্ত্রীর ছোট সংসারে প্রাচুর্য ছিল না বটে কিন্তু সূখের কমতি ছিল না।’

আর দশটা ছেলের মতো হেলাফেলায় সময় নষ্ট করতে নিহত শিমোন রায়কে (১৬) দেখেনি গ্রামের মানুষ। পড়ালেখার অবসরে বাবার সঙ্গে নিজেদের কৃষি কাজের দেখভাল করাই ছিল তার পছন্দ।

গতকাল বিকালটা ছিল সেই ধারাবাহিকতারই অংশ।

বাবার সঙ্গে পাটক্ষেতে বেড়া দেওয়ার কাজে ব্যস্ত থাকা ছেলের ওপর অশনি নেমে এলো অকারণেই। পঞ্চগড় সদর উপজেলার শিংরোড-প্রধানপাড়া সীমান্তে ৭৬২ নম্বর মেইন পিলার এলাকায় বিএসএফর সাকাতি ক্যাম্পের এক সদস্যের  গুলি মুহূর্তেই যেন সবকিছু লণ্ডভণ্ড করে দিল একটি নিরীহ পরিবারের…’ বলেই কেঁদে ফেলেন প্রতিবেশী আসাদুজ্জামান।

আহত শিমোনকে রংপুরে নিয়ে যাওয়া আরেক প্রতিবেশী রাজ্জাকুল বলেন, ‘পরেশ দাদার সব স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা কারো কল্পনাতেও ছিল না। আমরা নায্য বিচার চাই।’

বিকালে নিহত ছাত্রের বাবা পরেশ চন্দ্র রায় ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছিলেন, ‘আমাদের পাটক্ষেত থেকে প্রায় দেড়শ গজ দূরে ভারতের কাঁটাতারের বেড়া। বিকালে সুতার নেট দিয়ে আমরা ক্ষেতে বেড়া দিচ্ছিলাম। আমার ছেলে ২০ থেকে ২৫ হাত দূরে কাজ করছিল। একজন বিএসএফ সদস্য সেসময় আমাদের দিকে এগিয়ে এসে গালিগালাজ শুরু করে।’

‘ছেলের সঙ্গে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ওই বিএসএফ সদস্য আমার সামনেই ছেলের পেটে বন্দুক লাগিয়ে গুলি করে দেয়। আমাদের চিৎকারে স্থানীয় লোকজন ছুটে আসলে বিএসএফ সদস্য পালিয়ে যায়,’ যোগ করেন তিনি।

আক্ষেপ করে আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকে আমার জমিতে আমার ছেলেকে গুলি করে গেল বিএসএফ।’

ঘটনার পর স্থানীয়রা গুলিবিদ্ধ শিমোনকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। হাসপাতালের চিকিৎসক মো. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘ছেলেটির পেটে গুলি ঢুকে পেছন দিক দিয়ে বেরিয়ে গেছে। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।’

রমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী মুঠোফোনে বলেন, ‘অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণেই রাত সাড়ে আটটার দিকে তার মৃত্যু হয়েছে।’    

নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মামুনুল হক বলেন, ‘ঘটনাটি জানার পর আমরা তদন্ত শুরু করেছি। প্রতিবাদ জানিয়ে এ ব্যাপারে বিএসএফের কাছে কারণ জানতে চাওয়া হবে।’

করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে ভারতের সীমান্তের কাছাকাছি না যাওয়ার জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের বলা হয়েছে বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন:

‘পেটে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে দেয় বিএসএফ’

Comments