অনাহার-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন পটুয়াখালীর দ্বীপচরের মানুষ

করোনাভাইরাস মহামারিতে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে পটুয়াখালীর দ্বীপচর এলাকার মানুষের। কর্মহীন হয়ে পড়া এসব মানুষের হাতে কাজ নেই, ঘরে খাবার নেই। তাই পরিবার নিয়ে চরম সংকটের মধ্য দিয়ে দিন পার করছেন তারা।
করোনা মহামারিতে চরম সংকটে আছেন দ্বীপচরের বাসিন্দারা। ছবি: স্টার

করোনাভাইরাস মহামারিতে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে পটুয়াখালীর দ্বীপচর এলাকার মানুষের। কর্মহীন হয়ে পড়া এসব মানুষের হাতে কাজ নেই, ঘরে খাবার নেই। তাই পরিবার নিয়ে চরম সংকটের মধ্যে দিন পার করছেন তারা।

এক মাস ধরে ঘরে বসে আছেন চরকাশেমের বাসিন্দা শাহ আলম গাজী (৪৮)। অথচ এখনও কোনো সরকারি ত্রাণ পাননি তিনি। যা সঞ্চয় ছিল তা দিয়ে এক মাস সংসার চালাচ্ছেন। সেই সামান্য সঞ্চয়ও শেষ। ঘরের খাবার ফুরিয়ে গেছে। ধার করারও কোনো সুযোগ নেই। গত কয়েকদিন ধরে তিন সন্তান, স্ত্রীসহ ৫ সদস্যের পরিবার নিয়ে অনাহারে-দিন কাটছে তার। দ্বীপচর পেরিয়ে কোথাও যেতে হলে নৌকা কিংবা ট্রলারে যেতে হয়। কেউ জানলে বিপদ হতে পারে, তা ভেবে ঘরেই পরিবার নিয়ে অনাহারে দিন কাটছে তার।

শুধু শাহ আলম গাজী নয়! তার মতো অনাহারে এবং অর্ধহারে আছেন ওই দ্বীপের দুই শতাধিক নিন্ম আয়ের মানুষ।

চরকাশেম দ্বীপ ছাড়াও রাঙ্গাবালী উপজেলার চরনজির, কলাগাছিয়া ও চর আন্ডায় এখনো পর্যন্ত ত্রাণ পৌঁছায়নি। সেখানকার মানুষেরও একই অবস্থা। খাবারের জন্য এসব জায়গায় এক রকম হাহাকার চলছে। রাঙ্গাবালী এই চার দ্বীপে প্রায় এক হাজার পরিবারের বাস। করোনাভাইরাসের সাধারণ ছুটির প্রায় এক মাস হলেও দ্বীপগুলোতে পৌঁছায় কোন ত্রাণ সামগ্রী। সরকারি বা বেসরকারিভাবে কেউ তাদের পাশে দাঁড়াননি।

চরকাশেম দ্বীপের বাসিন্দারা জানান, এখানে বসবাসকারী মানুষ জেলে ও দিনমজুর। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি শুরু হওয়ার পর থেকে সবাই কর্মহীন। প্রথম দু-একদিন ভালো কাটলেও কয়েকদিন যেতে না যেতেই কষ্টের দিন শুরু হয়। ঘরে চাল থাকলে, ডাল নেই! আবার ডাল থাকলে, তেল নেই। এভাবে অভাব লেগেই আছে। তবুও, আশেপাশের সবাই মিলে ভাগাভাগি করে চলছিলাম কিছু দিন। কিন্তু, গত এক সপ্তাহ যাবত পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অধিকাংশ লোকের ঘর এখন খাবার শূন্য। ছোটছোট ছেলে-মেয়ে নিয়ে অনেকেই না খেয়ে আছেন। কিন্তু তাদের খোঁজ নেওয়ার কেউ নেই।

চরকাশেমের বাসিন্দা সালেহা খাতুন বলেন, ‘আমি আগে মাছ ধইরা সংসার চালাইতাম। করোনায় আমার কাম-কাইজ বন্ধ। ঘরে চাউল নাই। তিন দিন আগে ভাত রানছি (রান্না) করছি। হেই ভাত এই কয়দিন ধইরা অল্প অল্প কইরা খাই। আইজ সকালে ভাত শ্যাষ হইয়া গ্যাছে। দুপারে উপাস আছিলাম, এ্যাহন রাইতেও উপাস থাকতে হবে। জানি না কয়দিন এরম উপাস থাকমু। কেউ আমাগো একটু খোঁজও লয়না। আমরা এই চরের মধ্যে আছি, নাকি মরছি দেহার কেউ নাই। আমরা কি এই দ্যাশের জনগণ না?’ 

একই কথা বলেন চরকাশেম দ্বীপের অন্য বাসিন্দারাও।

রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশফাকুর রহমান বলেন, ‘চরকাশেম ও চরনজীরসহ কয়েকটি দ্বীপের বিষয়ে আমি শুনেছি। আমার শিগগির ব্যবস্থা নেব। আশাকরি রাঙ্গাবালীর কেউ না খেয়ে থাকবে না।’ 

 

Comments

The Daily Star  | English

Police see dead man running

Prisoners, migrants, even the deceased get implicated in cases

10h ago