বোরো ধান ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় হবিগঞ্জের কৃষক

করোনা মহামারি, ধান কাটার শ্রমিকের অভাব ও আগাম বন্যার আশঙ্কায় বোরো ধান ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন হবিগঞ্জের কৃষকরা। জেলার ৯ উপজেলার কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে ধান পাকতে শুরু করেছে। কিন্তু, ধান কাটার শ্রমিক সংকটে পড়েছেন কৃষকরা। তবুও কেউ কেউ ধান কাটতে শুরু করেছেন।
শ্রমিক সংকটেও কেউ কেউ ধান কাটতে শুরু করেছেন। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা

করোনা মহামারি, ধান কাটার শ্রমিকের অভাব ও আগাম বন্যার আশঙ্কায় বোরো ধান ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন হবিগঞ্জের কৃষকরা। জেলার ৯ উপজেলার কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে ধান পাকতে শুরু করেছে। কিন্তু, ধান কাটার শ্রমিক সংকটে পড়েছেন কৃষকরা। তবুও কেউ কেউ ধান কাটতে শুরু করেছেন।

কৃষকরা জানান, অন্যান্য বছর দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শ্রমিকরা ধান কাটতে আসতো। কিন্তু এবার করোনার কারণে যোগাযোগ বন্ধ ও বিভিন্ন জেলায় লকডাউন থাকায় প্রবল শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে, ঝড়-বৃষ্টি ও আগাম বন্যা হলে তাদের সোনালী ফসল মাঠেই পচবে।

হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, আগামী ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে হবিগঞ্জে আকস্মিক বন্যা দেখা দিতে পারে।

বাংলাদেশ, ভারত আবহাওয়া অফিস, ইউরোপীয় ইউনিয়নভিত্তিক আবহাওয়া সংস্থা (ইসিএমডব্লিউএফ) ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আবহাওয়া সংস্থার বরাত দিয়ে পাউবো  জানায়, বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন ভারতের মেঘালয় ও আসামের বরাক অববাহিকায় ভারি বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট মৌলভীবাজার ও নেত্রকোনা জেলার নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। এতে নদী সংলগ্ন এলাকায় স্বল্প মেয়াদী আকস্মিক বন্যার আশংকা রয়েছে।

সূত্র মতে, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য সংলগ্ন হবিগঞ্জ জেলায় উল্লেখিত সময়ে ১৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে।

হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার ৯ উপজেলায় মোট ১ লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে ব্রি-২৮ ও হাইব্রিড জাতের বোরো জমি আবাদ হয়েছে। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ১৮ হাজার হেক্টর। এতে ৪ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।

বানিয়াচংয়ের কৃষক হারুন উল্লা বলেন, ‘সাড়ে তিন একর জমিতে ধান কাটার জন্য এখনো  শ্রমিক যোগাড় করতে পারিনি। ইতোমধ্যে বিআর-২৮ ধান পেকে গেছে। সময় মতো ধান কাটতে না পারলে জমিতেই ফসল নষ্ট হয়ে যাবে। অন্যদিকে বাকি জাতের ধান ১০ দিনের মধ্যে কেটে শেষ করতে হবে। না হলে হাওরে পানি চলে আসবে। এখন কী করব বুঝে উঠতে পারছি না।’

একই উপজেলার কাগাপাশা গ্রামের ফুল মিয়া বলেন, ‘ধান কাটার শ্রমিকের সঙ্গে আলোচনা করার সুযোগই দিচ্ছে না পুলিশ। এক জায়গায় বসে মজুরি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে পুলিশের ধাওয়া খেয়েছি।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. তমিজ উদ্দিন খান বলেন, ‘শ্রমিক সংকট পুষিয়ে ওঠার জন্য প্রত্যেক উপজেলায় ১৮ থেকে ২৭ জন শ্রমিক নিয়ে একটি ‘লেবার পুল’ গঠন করা হয়েছে। তারা কৃষকদের ধান কেটে দেবেন। এই পুলের মাধ্যমে ইতোমধ্যে বানিয়াচংয়ে ধান কাটা শুরু হয়েছে। বৃষ্টিপাত ও আগাম বন্যার আগে যাতে ধান কাটা শেষ করতে প্রয়োজনে কম্বাইন্ড হারবেষ্টর ও রিপার মেশিন ব্যবহার করা হবে।’

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমি বানিয়াচংয়ের একটি হাওড়ে ধান কাটা কার্যক্রম পরিদর্শনে এসেছি। জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ সিলেট, সিরাজগঞ্জ, ময়মনসিংহ থেকে আনা ১১০ জন শ্রমিক দিয়ে ধান কাটা শুরু করেছি। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ভাণ্ডার থেকে এক সপ্তাহের খোরাকি হিসেবে তাদের ২শ কেজি চাল, ৫০ কেজি ডাল, আলু ও প্রয়োজনীয় তেল সরবরাহ করা হয়েছে। প্রত্যেক উপজেলাতে একই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কৃষকরা জানান, বোরো ফসল উঠিয়ে ধান বিক্রি করে শ্রমিকের মজুরি, মাড়াই এবং ঋণ পরিশোধ করতে হয়। এ সময় প্রতি বছর ধানের দাম কম থাকে। এবার করোনার কারণে ধানের দাম আরও কমে যাবে। এমন হলে এবারও ঋণের বোঝা কমবে না। এ অবস্থায় উচ্চ সুদে ঋণ পরিশোধসহ উৎপাদনের খরচ যোগাতে হিমশিম খেতে হবে কৃষকদের।                                        

 

 

 

 

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

8h ago