নীরবে ছড়াচ্ছে করোনা, উপসর্গ ছাড়াই হঠাৎ মৃত্যু

২০ এপ্রিল রাতে অসুস্থ হয়ে পরেন দিলরুবা বেগম। পরিবারকে অসুস্থতার কথা জানালে তারা তার রক্তচাপ পরীক্ষা করে এবং স্বাভাবিক পায়।

২০ এপ্রিল রাতে অসুস্থ হয়ে পরেন দিলরুবা বেগম। পরিবারকে অসুস্থতার কথা জানালে তারা তার রক্তচাপ পরীক্ষা করে এবং স্বাভাবিক পায়।

রাজধানীর খিলগাঁও এলাকার ৬০ বছর বয়সী এই নারীর ডায়াবেটিস ও হাইপারটেনশান থাকায় তাকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য বলা হয়।

তার ছেলে জাকির হোসেন বলেন, ‘আমরা একটি অ্যাম্বুলেন্স জোগাড় করতে পারিনি। পরে একটি গাড়ির ব্যবস্থা করে মাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে নেওয়ার পর ইসিজি করা হয়। এর কিছুক্ষণ পরই মা মারা যান।’

তিনি যোগ করেন, চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন যে তার মা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

দিলরুবা বেগমের কোভিড-১৯ এর কোনো লক্ষণ ছিল না। কিন্তু, তার বয়সের কারণে চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন নমুনা সংগ্রহ করে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করতে।

জাকির বলেন, ‘আমার মায়ের করোনা পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ এসেছে। কিন্তু, তার কোনো উপসর্গ ছিল না এবং বন্ধের শুরু থেকেই তিনি বাড়ির বাইরেও যাননি।’

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এটা হচ্ছে উপসর্গহীন করোনাভাইরাসের একটি ঘটনা। এ ধরনের ক্ষেত্রে, আপনার চারপাশে কে এই রোগের বাহক তা জানা অসম্ভব। অত্যন্ত সংক্রামক এই ভাইরাসটির কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হচ্ছে। অনেক সংক্রামিত পাওয়া যাবে যাদের কোনো উপসর্গই দেখা যায় না।

তারা আরও আশঙ্কা করেন যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ সারাদেশ জুড়ে বেড়ে যাওয়ার ফলে উপসর্গহীন এমন রোগীর সংখ্যা আরও অনেক বাড়তে চলেছে।

এখন পর্যন্ত দেশের সনাক্ত হওয়া সব করোনাভাইরাস রোগীর উপসর্গ প্রকাশ পেয়েছে। স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এখনও এমন সংক্রমিত রোগী পাননি যার মধ্যে উপসর্গ দেখা যায়নি।

গতকাল রোগত্বত্ত, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এএসএম আলমগীর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘উপসর্গহীন রোগী থাকবেই এবং সারা পৃথিবীতেই আছে। যখন কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়ে যায়, তখন এটা হতেই পারে।’

এখন পর্যন্ত তারা এ ধরনের রোগী পেয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা সরাসরি রোগীদের সঙ্গে কাজ করি না, তাই এটা বলতে পারছি না।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অভ্যন্তরীণ মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাজমুল হাসান জানান, কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়ে গেলে প্রায় ৩০ শতাংশ সংক্রমিত থাকতে পারেন যাদের কোনো উপসর্গ দেখা যাবে না।

তিনি বলেন, ‘সাধারণত কম বয়সীরাই উপসর্গহীন বাহক হয়, তবে বয়স্করাও হতে পারেন। যাদের আগে থেকেই বিভিন্ন রোগে ভুগছেন তাদের মৃত্যুর ঝুঁকিও থাকে।’

বিএসএমএমইউয়ের জ্বর ইউনিটে কোভিড-১৯ রোগীদের নিয়ে কাজ করা ডা. নাজমুল জানান, অনেক ক্ষেত্রেই বয়স্ক রোগীদের মধ্যে যারা এই ভাইরাসের বাহক আছেন তাদের কোনো উপসর্গ দেখা যায় না এবং কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে মারা যেতে পারেন।

সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) তথ্য অনুযায়ী, সংক্রমিতদের মধ্যে ২৫ শতাংশের কোনো উপসর্গ নাও থাকতে পারে।

গতকাল বুধবার পর্যন্ত, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১২০ জন মারা গেছেন এবং তিন হাজার ৭৭২ জনকে সনাক্ত করা হয়েছে।

যেহেতু দেশে এখনও ব্যাপকভাবে পরীক্ষা করা যায়নি তাই অনেক বিশেষজ্ঞ বিশ্বাস করেন যে এই সংখ্যাটি আরও অনেক বেশি হবে।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজিস্ট এবং সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, ‘বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশ করা হচ্ছে কোভিড-১৯ এ সংক্রমিত প্রায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ রোগীর উপসর্গ নাও থাকতে পারে। এটা সত্যি উদ্বেগজনক। কারণ, উপসর্গহীন করোনাভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে মৃত্যুর কারণ হতে পারে।’

তিনি জানান, ইতালিতে ভাইরাসটি প্রকট আকার ধারণ করার অন্যান্য কারণের পাশাপাশি এটা একটি বড় কারণ ছিল।

তিনি বলেন, ‘যত তাড়াতাড়ি জনগণের পরীক্ষা করা হবে, সমাজের জন্য ততই ভালো হবে।’

Comments

The Daily Star  | English

Ratan Tata no more

The 87-year-old industrialist was admitted to Breach Candy Hospital for age-related ailments

1h ago