শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ না করলে বাগানের লিজ বাতিল

মৌলভীবাজারের কালিটি চা বাগানের শ্রমিকদের ১২ সপ্তাহের মজুরিসহ সব বকেয়া পরিশোধে বাগান মালিককে আগামী সোমবার পর্যন্ত সময়ে বেঁধে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। অন্যথায় বাগানের লিজ বাতিল হবে বলে জানানো হয়েছে।
এক জরুরি বৈঠকের পর আজ বৃহস্পতিবার এ কথা জানিয়েছেন মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন।
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘আগামী সোমবার (২৭ এপ্রিল) এর মধ্যে কালিটি বাগানের শ্রমিকদের সব দেনাপাওনা পরিশোধ করতে হবে মালিককে। অন্যথায় মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে ইজারা বাতিল করা হবে এবং তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরবর্তীতে বাগান ডিসি’র নিয়ন্ত্রণে থাকবে।’
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় অবস্থিত কালিটি চা বাগানের শ্রমিকরা ১২ সপ্তাহের মজুরিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার দাবিতে গত ১৯ এপ্রিল ভূখা লংমার্চ ও মহাসড়ক অবরোধ করলে তা গণমাধ্যমে আসে।
চা শ্রমিকদের বকেয়া মজুরির দাবিতে ১৫১ নাগরিক বিবৃতি দেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
কুলাউড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এ টি এম ফরহাদ চৌধরী জানান, ‘বাংলাদেশ চা বোর্ড ২১ এপ্রিল কালিটি চা বাগানের স্বত্ত্বাধিকারী কয়সর আহমেদ বরাবর একটি নোটিশ দিয়ে আগামী ৭ দিনের মধ্যে চা শ্রমিকদের মজুরিসহ সব বকেয়া পরিশোধ করতে বলেছে। ৭ দিনের মধ্যে বকেয়া পরিশোধ না করলে বিধি মতো লিজ বাতিল করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।’
কালিটি বাগান ‘জোবেদা টি কোম্পানি লিমিটেডের’ নামে সরকারের কাছ থেকে ইজারা নেওয়া হয়েছে। বাগানে ৫৩৭ জন স্থায়ী শ্রমিক আছেন। প্রত্যেক শ্রমিক দৈনিক ১০২ টাকা করে মজুরি পান। প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার তা পরিশোধের কথা। কিন্তু ১২ সপ্তাহ ধরে শ্রমিকেরা মজুরি পাচ্ছেন না।
বাগানের শ্রমিক সরদার ও স্টাফদেরও ১১ মাসের বেতন আটকা পড়ে আছে।
বাগান শ্রমিক পঞ্চায়েত কমিটির সম্পাদক উত্তম কালোয়ার জানান, ‘শ্রমিকেরা এমনিতেই সামান্য মজুরি পান। এরপর ১২ সপ্তাহ থেকে কেউই সেই মজুরি পাচ্ছেন না। কাজ করেও মজুরি মিলছে না। ঘরে চাল-ডাল নেই। উপোস দিন কাটাতে হচ্ছে। বাগান কর্তৃপক্ষ আজ দিচ্ছি, কাল দিচ্ছি বলে সময়ক্ষেপণ করছে।’
চা শ্রমিক নেতা বিশ্বজিৎ দাশ বলেন, বাগানে দীর্ঘদিন ধরে নানা সমস্যা। অবসরে যাওয়া শ্রমিকেরা তহবিলের টাকা পাচ্ছেন না। অথচ প্রত্যেক শ্রমিকের মজুরি থেকে ৭ শতাংশ করে ভবিষ্যৎ তহবিলের টাকা কেটে রাখা হয়। এর সঙ্গে মালিকপক্ষ আরও ৭ শতাংশ যোগ করে মোট ১৫ শতাংশ টাকা শ্রম অধিদপ্তরে জমা দেওয়ার কথা।
ছাত্র-যুবক নেতা দয়াল অলমিক বলেন, বাগানে চিকিৎসক নেই। শ্রমিকেরা বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করালে বাগান কর্তৃপক্ষ বিলের টাকা দেয় না। বাগানের এসব সমস্যার কথা তুলে ধরে এর প্রতিকার চেয়ে ৫ জানুয়ারি তারা শ্রীমঙ্গলে শ্রম অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন বলে জানান।
Comments