প্রবাস

অস্ট্রেলিয়ায় কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে, শিথিল হচ্ছে লকডাউন

অস্ট্রেলিয়ায় কখনো কোনো রাজ্য কোভিড-১৯ এর কারণে পুরোপুরি লকডাউন করেনি। অধিকাংশ রাজ্যই লকডাউন করেছে আংশিকভাবে। তবে রেস্টুরেন্ট, প্রার্থনালয়, মিউজিয়াম, নাইটক্লাব, ক্যাসিনো বন্ধ ঘোষণা করেছে।
ক্যানবেরায় অস্ট্রেলিয়ান ইনস্টিটিউট অব স্পোর্টসে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলছে প্রশিক্ষণ। ২১ এপ্রিল ২০২০। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ায় কখনো কোনো রাজ্য কোভিড-১৯ এর কারণে পুরোপুরি লকডাউন করেনি। অধিকাংশ রাজ্যই লকডাউন করেছে আংশিকভাবে। তবে রেস্টুরেন্ট, প্রার্থনালয়, মিউজিয়াম, নাইটক্লাব, ক্যাসিনো বন্ধ ঘোষণা করেছে।

রাজ্য সরকারগুলো করোনাভাইরাসবিষয়ক বেশ কিছু বিশেষ আইন প্রবর্তন করেছে। এই আইনগুলো পালনে জনগোষ্ঠীকে বাধ্য করতে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন অমান্য করায় নিউ সাউথ ওয়েলসের শিল্পকলামন্ত্রী ডন হারউইনকে ১০০০ ডলার জরিমানা করেছিল পুলিশ। মন্ত্রী তার অপরাধ মেনে নিয়ে  স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন।

করোনার বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ান সরকারের এই কঠোর ও সুপরিকল্পিত উদ্যোগের জন্যই এখন এই প্রশান্ত মহাসাগর তীরের দেশটি মহামারিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে দ্রুত। পার্থ, ক্যানবেরা ও এডেলাইড রাজ্যে গত এক সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা শূন্য। কুইন্সল্যান্ডে গত দুই মাসে কেউ আক্রান্ত হননি। অন্যান্য রাজ্যেও কোভিড-১৯ এ আক্রান্তের ও মৃতের সংখ্যা ২০ শতাংশ কমে এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার লকডাউন শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন এক সাংবাদিক সম্মেলনে কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, পর্যায়ক্রমে সমুদ্র সৈকতগুলো খুলে দেওয়া হবে শুধুমাত্র ব্যায়াম, সাঁতার ও সার্ফিংয়ের জন্য। আরও জানিয়েছেন, ইলেকটিভ সার্জারি ও ডেন্টাল হাসপাতালগুলোও আগের মতো স্বাভাবিকভাবে চলবে।

মহামারি এই ভাইরাসের কারণে গোটা পৃথিবীই স্থবির হয়ে গেছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থা বলেছে, এভাবে চলতে থাকলে বিশ্বে ৩ কোটি মানুষ অনাহারে মারা যাবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী বিশ্বে ১৮৫টি দেশে আঘাত হেনেছে কোভিড-১৯। আক্রান্ত ৮২টি দেশ পুরোপুরি অথবা আংশিক লকডাউন প্রয়োগ করেছে। এরই মধ্যে কয়েকটি দেশ অর্থনীতি ও মানুষের জীবন গতিশীল রাখতে লকডাউন শিথিল করেছে।

ডেনমার্ক, অস্ট্রিয়া, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড, ইতালি, স্পেন, ইরান ও পাকিস্তান গত সপ্তাহেই অভিভাবকদের কাজে ফেরার জন্য স্কুল খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়াতেও আগামী ১১ মে থেকে স্কুলগুলো খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। নিউ সাউথ ওয়েলস এর প্রিমিয়ার গ্লাডিস বেরেজিকলিয়ান স্কুলগুলো কীভাবে খোলা হবে তার একটি নকশা জাতীয় মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। তিনি জানিয়েছেন, স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের সশরীরে একদিন উপস্থিত থাকতে হবে টার্ম ২ এর তৃতীয় সপ্তাহ থেকে অর্থাৎ ১১ মে থেকে যে সপ্তাহ শুরু হবে। পর্যায় ক্রমে জুলাই মাসে টার্ম ৩ এ স্বাভাবিক নিয়মে স্কুলে ফিরতে হবে সব শিক্ষার্থীকে।

অস্ট্রেলিয়ার অভ্যন্তরীণ কয়েকটি বিষয়ে লকডাউন শিথিল করার ব্যাপারে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, ‘শীতের শেষ পর্যন্ত লকডাউন রাখা উচিত ছিল। কিন্তু, সরকার দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে লকডাউন শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উড়োজাহাজ ও অন্যান্য ট্রান্সপোর্ট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় সব ধরণের  সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। অস্ট্রেলিয়াতে গত চার মাসে ৬০ লাখ মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক তাকেশি কাসাই গতকাল সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, 'এখনই লকডাউন তুলে নিলে মহামারি আরও প্রকট আকার ধারণ করবে।’

সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় গত সোমবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম বলেছেন, ‘আমাদের বিশ্বাস করুন। চরম বিপর্যয় আসা এখনো বাকি।’

অস্ট্রেলিয়ার সর্বশেষ করোনা পরিস্থিতি: এখন পর্যন্ত টেস্ট করা হয়েছে ৪৫৮,০০০ জনের। আক্রান্ত হয়েছেন ৬,৬৫৪ জন। সুস্থ হয়েছেন ৫,০১২ জন। অস্ট্রেলিয়ায় কোনো বাংলাদেশি এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হননি।

আকিদুল ইসলাম: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

7h ago