বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমার সুফল পাবে না বাংলাদেশ

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন

করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রায় ৫০ শতাংশ কমে যাওয়ায় জ্বালানি তেল সংরক্ষণ নিয়ে বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন বিপিসি। ফলে বিপিসির পাইপ লাইন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও পেট্রোল পাম্পের সংরক্ষণাগারে তেল রাখার পরিকল্পনা করছে রাষ্ট্রায়াত্ব এ সংস্থাটি।

বিপিসির কর্মকর্তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলেও দেশে তেল সংরক্ষণের পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় এর সুফল নিতে পারবে না বাংলাদেশ। বিপিসি সাধারণত সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আরব লাইট এবং মরবান তেল আমদানি করে থাকে।

গত ২৩ এপ্রিল আন্তর্জাতিক বাজারে আরব লাইট তেলের এক ব্যারেলের দাম ১৬.০১ ডলার এবং মরবান তেলের দাম ১৯.০৪ ডলার নেমে এসেছে। যা গত এক মাসের ব্যবধানে যথাক্রমে ৪৫ এবং ৫০ শতাংশ কমেছে।

বিপিসির তথ্য মতে, বিপিসির সাড়ে নয় লাখ ধারণ ক্ষমতার বিপরীতে গত বুধবার পর্যন্ত মজুদ রয়েছে প্রায় নয় লাখ টন ৪০ হাজার জ্বালানি তেল। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) তেল সংরক্ষণের সীমাবদ্ধতার কারণে বন্দরের বহিনোঙরে ৫ টি তেলবাহী জাহাজে আটকে আছে ১ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল ও ২০ হাজার মেট্রিক টন ক্রড অয়েল। আমদানির অপেক্ষায় আছে আরও সাড়ে চার লাখ টন জ্বালানি তেল।

বিপিসির বিপণন বিভাগের তথ্য মতে, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় দেশে চলমান সাধারণ ছুটির কারণে শিল্প, বাণিজ্য, কৃষি ও পরিবহন খাতে জ্বালানি ৫০ শতাংশ কমে এসেছে। ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে প্রতিদিন গড়ে ১৩ হাজার টন ডিজেল ব্যবহার হলেও তা কমে এসেছে ছয় হাজার টনে। অপরদিকে প্রতিদিন বিমানের জেট ফুয়েলের চাহিদা ১২৩৯ মেট্রিক টন থাকলেও তা কমে মাত্র ৮১ টনে নেমে এসেছে। এছাড়াও উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে পেট্রোল, অকটেন ও কেরোসিনসহ অন্যান্য জ্বালানি তেলের চাহিদা।

বিপিসির সচিব কাজী মোহাম্মদ হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের ভয়াবহ প্রভাব ও সংক্রমণ প্রতিরোধে গত এক মাস ধরেই বেশিরভাগ শিল্পকারখানা, পরিবহন আছে। ফলে এসময়ে জ্বলানি তেলের চাহিদা প্রায় ৬৫ শতাংশ কমেছে। ফলে বিপিসি জ্বালানি তেল কিনলেও তা বিপণন করতে না পারায় মজুত বেড়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বিপিসি ৫০ শতাংশ সরকার টু সরকার এবং বাকি ৫০ শতাংশ ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে ক্রয় করে। যার প্রক্রিয়া ৬ মাস আগে থেকেই শুরু হয়। দেশের চাহিদা বিবেচনায় প্রতি মাসে গড়ে পাঁচ লাখ টন থেকে সাড়ে ছয় লাখ মেট্রিক টন জ্বালানি তেল ক্রয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।’

বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এ সংকট কাটিয়ে উঠতে বিপিসি উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন বিপিসির পরিচালক (পরিচালন) সৈয়দ মেহদী হাসান।

তিনি বলেন, ‘জ্বালানি তেলের চাহিদা কমে যাওয়ায় মজুদ বেড়ে গেছে। এর থেকে উত্তোরণের জন্য বেসরকারি মালিকানাধীন বিভিন্ন পেট্রোলিয়াম প্রতিষ্ঠান, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশাপাশি পেট্রোল পাম্পেও এসব জ্বালানি তেল সংরক্ষণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এসব জায়গায় কী পরিমাণ তেল সংরক্ষণ করা যাবে তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা বেশকয়েকটি পেট্রোলিয়াম প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আশা করি খুব শিগগির এ বিষয়টি সমাধান হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশের জ্বালানি তেলের প্রায় ৭০-৭৫ শতাংশ চাহিদাই হচ্ছে ডিজেল। বর্তমানে ডিজেলে ৬ লাখ ২৮ হাজার টন ধারণ ক্ষমতার বিপরীতে মজুদ রয়েছে প্রায় ৫ লাখ ৩০ হাজার টন। খালাসের অপেক্ষায় চারটি অয়েল ট্যাংকারে আরও এক লাখ ২০ হাজার টন তেল রয়েছে।’

বিপিসির কর্মকর্তারা বলছেন, জ্বালানি তেলে সংরক্ষণের জায়গা না থাকার কারণে ডিজেল ভর্তি চারটি জাহাজ ও একটি ক্রুড অয়েল ভর্তি একটি জাহাজ গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বন্দরের বহিনোঙরে অপেক্ষমাণ আছে। আমদানি তেলবাহী জাহাজ থেকে তেল খালাস না করা হলে প্রতিদিনের জন্য বাড়তি প্রায় ১০ হাজার ডলার বাড়তি জরিমানা গুনতে হচ্ছে বিপিসিকে। এছাড়া একই কারণে বিপিসির বিভিন্ন অয়েল ট্যাংকারে প্রায় ৪৫ হাজার টন তেল মজুদ রাখা হয়েছে।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্য মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত ডিজেল আমদানি হয়েছে ৮ লাখ ৮৯ হাজার টন এবং অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার টন। গতবছরের একই সময়ে যা ছিল যথাক্রমে ১০ লাখ ৬১ হাজার টন এবং ৩ লাখ ৬৬ হাজার টন।

Comments

The Daily Star  | English

No justifiable reason to delay nat'l polls beyond Dec: Salahuddin

We have been able to make it clear that there is not even a single mentionable reason to hold the election after December, says the BNP leader

3h ago