ধর্ষণের অভিযোগে সালিসে নির্যাতন, অপমানে কিশোরের আত্মহত্যা
পঞ্চগড়ে শিশু ধর্ষণের অভিযোগ এনে গ্রাম্য সালিসে স্থানীয় বিচারকদের বিরুদ্ধে এক কিশোরকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। সেই অপমান সহ্য করতে না পেরে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে অভিযুক্ত কিশোর।
গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে পঞ্চগড় সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নের সোনারবান-বাঁশবাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় শুক্রবার বিকেলে পঞ্চগড় সদর থানায় নিহত কিশোরের বাবা বাদি হয়ে সালিসে নির্যাতনকারী স্থানীয় ৯ ব্যক্তির বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচণার অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
পরিবারের সদস্যদের দাবি, সাজানো একটি ঘটনায় সালিসের মাধ্যমে ওই কিশোরকে অতিরিক্ত মারধর করা হয়েছে।
পুলিশ, স্থানীয় লোকজন ও মামলার এজাহার সুত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাতে গ্রামের মসজিদের চত্বরে এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ এনে অভিযুক্ত কিশোরকে বাড়ি থেকে ধরে এনে সালিস বসায় স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। সেখানে শিশুটির মা অভিযোগ করেন গত ২০ এপ্রিল দুপুরে তার ৮ বছরের মেয়েকে স্থানীয় একটি গড়ের (মাটির পুরোনো উচু প্রাচীর) নিচে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেছে অভিযুক্ত কিশোর। সালিসের শুরুতেই তাকে এক দফা মারধর করা হয়। ওই সময় ধর্ষণের বিষয়টি সে অস্বীকার করে এবং জানায় গড়ের নিচে কয়েকজন প্রতিবেশিসহ তারা বসে ছিল। সেখানে তাদের সঙ্গে ওই শিশুটিও ছিল।
এ সময় সেখানে অভিযুক্ত কিশোরের বাবা উপস্থিত হলে তাকেও অপমান করা হয়। পরে তিনি নিজেই ছেলেকে মারধর করেন এবং সালিসে উপস্থিত বিচারকদের বিষয়টি তদন্ত করার অনুরোধ জানান।
কিন্তু শিশুটির মা তা না শুনলে সেখানে উপস্থিত কয়েকজন কিছু কঞ্চি জড়ো করে তাকে মারধর শুরু করে এবং একজন তাকে লাথিও মারে।
বিচার শেষে অভিযুক্ত কিশোর দ্রুত বাড়ি চলে যায়। কিছুক্ষণ পর বাড়িতে ফিরে পরিবারের লোকজন দেখতে পায় সে ঘরের আড়ার সাথে ওড়না দিয়ে ফাঁসি লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
নিহতের বাবা বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে আমি বাইরে থেকে বাড়ি ফিরে দেখি আমার ছেলেকে ওরা ধরে নিয়ে গিয়ে সালিস বসিয়েছে। আমি সালিসে গিয়ে বিষয়টি তদন্ত করে দেখার অনুরোধ করি কিন্তু তারা আমার কোন কথা শোনেনি। তারা আমার ছেলেকে মারধর করে। অপরাধ না করেও এমন নির্যাতন-অপমান সইতে না পেরে আমার ছেলে আত্মহত্যা করেছে। আমি এর বিচার চাই।’
সালিসে উপস্থিত থাকা স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘ধর্ষণের অভিযোগে সালিসে আমি উপস্থিত ছিলাম। আমরা তার বাবাকে বলেছি এ ধরনের বিচারের এখতিয়ার আমাদের নেই, আপনার ছেলের বিচার নিজেই করেন। পরে ওর বাবা মারধর করেছে। রাত ১১টার দিকে আমি সেখান থেকে চলে যাই। এর প্রায় দুইঘন্টা পর শুনি ওই ছেলে গলায় ফাঁসি লাগিয়ে মারা গেছে।’
অমরখানা ইউনিয়ন পরিষদের (৩,৫ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের) সংরক্ষিত মহিলা সদস্য শাহনাজ পারভীন বিউটি বলেন, ‘আমি ব্যস্ততার কারণে সালিসে যেতে না পারায় আমার স্বামী উপস্থিত ছিল। ওই যুবককে বিচারকরা কেউ মারধর করেনি। তার বাবাই মারধর করেছিল। তাকে একজন লাথি মেরেছিল এটা সত্য।’
পঞ্চগড় সদর থানার ওসি আবু আককাস আহমদ বলেন, ‘ওই কিশোরের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। ময়না তদন্ত শেষে রাতেই তার পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে।’
Comments