কোভিড-১৯: বড় ভয় ‘সামাজিক লাঞ্ছনা’

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা সন্দেহ করেন গাইনি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন এক নারী করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হতে পারেন। নিশ্চিত হতে তার কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরপর থেকেই তিনি নিখোঁজ।
Corona BD.jpg
প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা সন্দেহ করেন গাইনি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন এক নারী করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হতে পারেন। নিশ্চিত হতে তার কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরপর থেকেই তিনি নিখোঁজ।

বৃহস্পতিবার রাতে নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে জানা যায় তিনি করোনায় আক্রান্ত। তার আগেই সদ্য ভূমিষ্ঠ মৃত সন্তানকে নিয়ে তিনি হাসপাতাল থেকে পালিয়ে গেছেন।

এর আগে গত ১৯ এপ্রিল সিলেটের খাদিমপাড়ার এক যুবক করোনা আক্রান্ত জেনে পালিয়ে যান। করোনায় আক্রান্ত জানার পরে ২২ এপ্রিল সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের এক যুবক পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। গণমাধ্যমে এমন আরও অনেক সংবাদ পাওয়া যাবে।

আলোচনার বিষয় করোনায় আক্রান্তদের পালিয়ে যাওয়ার প্রবণতা। সবাই কেন পালাতে চাচ্ছে? মানুষতো পালিয়ে বাঁচতে চায়, তাহলে এরা কী থেকে বাঁচতে পালাচ্ছেন?

এ বিষয়ে মতামত জানতে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায়কে প্রশ্ন করেছিলাম। জবাবে তিনি দায় চাপালেন দায়িত্বজ্ঞানহীন সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর। 

তার কথায় বিব্রত হইনি, তবে বিচলিত হয়েছি। ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, ‘কোভিড-১৯ রোগটিকে আমরা এমন একটি জায়গায় দাঁড় করিয়েছি যে, কোনো ব্যক্তিই এ রোগে আক্রান্ত হওয়াকে লজ্জার ব্যাপার ভাবছেন।’

ডা. হিমাংশু লাল রায়ের সঙ্গে এক মত হওয়া যথেষ্ট কারণ রয়েছে। করোনার চেয়ে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন বা লাঞ্ছিত হওয়ার ভয়। কিছুদিন আগে চীনে করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা কয়েকজনের ইন্টারভিউ দেখছিলাম। তাদের মধ্যে একজন বললেন, তিনি সুস্থ হয়ে ওঠার পরে তার সন্তানকে অন্য শিশুরা কোভিড কিড বলে ডাকছে।

শুধুমাত্র চীনে নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ছোট শহরাঞ্চলেও বুলিং টেনডেন্সি বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে রিপোর্ট করেছে নিউইয়র্ক টাইমস। একটা সময় ছিল যখন কুষ্ঠ বা তারপর এইডস আক্রান্তদের সামাজিকভাবে হেয় করা হতো। যে কোনো ইস্যুতে কোনো মানুষকে সামাজিকভাবে লাঞ্ছিত করার মনোভাব এখনো যায়নি। এখনো প্রতিবন্ধী শিশু ও তার পরিবার সামাজিক লাঞ্ছনার শিকার হন। এই মনোভাবের নতুন শিকার হচ্ছেন করোনা আক্রান্ত বা সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও তাদের পরিবার। তাই করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিকে দেখতে লোকে বাড়ির সামনে ভিড় করে।

সংবাদের পাঠক জানতে চান, কোন এলাকার কোন ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন। তারা আক্রান্ত ব্যক্তির ছবিও দেখতে চান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি চেয়ে মন্তব্য করেন।

হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার আরেকটি বড় কারণ সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর অনাস্থা। প্রশ্ন ওঠে যারা আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের চিকিৎসা কি সঠিকভাবে হচ্ছে? কেন সুস্থতার চেয়ে দেশে মৃত্যুহার বেশি?

প্রথমত, মুখপাত্রদের উচিত অতিরঞ্জিত কথা না বলে সঠিক উদ্যোগ ও প্রচারণার মাধ্যমে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর আস্থা ফিরিয়ে আনা। দ্বিতীয়ত, ব্যাপক সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলা, ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া— করোনায় আক্রান্ত হওয়া লজ্জার নয়।

কোভিড-১৯ নিয়ে আতঙ্ক-ভীতি না ছড়িয়ে মানুষকে আশাবাদী করতে হবে। মৃত্যুর সংখ্যা গণনা নয়, সুস্থ হওয়ার সংবাদ প্রচারে জোর দিতে হবে। কোনো আক্রান্ত ব্যক্তি যেন সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্নতা বা লাঞ্ছনার শিকার না হন তা নিশ্চিত করতে হবে।

তা না হলে হয়তো একদিন আপনার বা আমার পরিবারকে লাঞ্ছিত হতে হবে করোনা বা অন্য কোনো অসুস্থ্যতায়, আর শিশুদের বয়ে বেড়াতে হবে ‘কোভিড কিড’ হওয়ার গ্লানি।

লেখক: দ্বোহা চৌধুরী

নিজস্ব সংবাদদাতা, দ্য ডেইলি স্টার

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

7h ago