করোনাকাল, তারপর-৩

অবশ্যই এই সময় নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিখুঁত করা জরুরি। কিন্তু সংকটের প্রথম দিন থেকেই অভাব বোধ করেছি, ‘IEDCR’ এর সঙ্গে আরও অন্তত দু-একটা ল্যাবরেটরির অত্যধিক প্রয়োজনীয়তা। ১৬ কোটি জনসংখ্যার দেশ বাংলাদেশ। জ্ঞান বিদ্যা চর্চা করার জন্য দেশে এখন অনেক বিদ্বান আছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতন একটি বিশাল প্রতিষ্ঠান আজ ১০০ বছর হতে সসস্মানে দাঁড়িয়ে (প্রতিষ্ঠাকাল- ১৯২১)। যেখানে জাপান, অস্ট্রেলিয়া থেকে শুরু করে ইউরোপ, উত্তর আমেরিকার প্রচুর শিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত মেধাসম্পন্ন জ্ঞানীগুণীদের অবস্থান। প্রচুর দক্ষ ও যোগ্যতাসম্পন্ন জনবল রয়েছে তাদের। বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি জ্ঞান সম্পন্ন কর্মীদের নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাগারে তৈরি করা তাদের জন্য খুবই সম্ভব। অবশ্যই ‘বায়োসেফটি প্রটোকল’ অনুসরণে তারা সক্ষম।

ভালো লাগল পড়ে যে বিলম্বে হলেও ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় করোনাভাইরাস রেসপন্স টেকনিক্যাল কমিটি’ গঠিত হয়েছে। রাজনীতির ঊর্ধ্বে থেকে আপনাদের বিশাল ফ্যাকাল্টির (বিশেষ করে মেডিসিন ও সায়েন্স ফ্যাকাল্টি সমূহ) এখনই তো দেশাত্মবোধ প্রদর্শন ও ত্যাগের শ্রেষ্ঠ সময়। এখন দেশে-বিদেশে কথায় কথায় আমরা আইসিডিডিআর,বি এর কথা বিশেষত শুনতে পাই। আমরা অচিরেই শুনতে চাই আমাদের সম্পূর্ণ নিজস্বে গড়ে ওঠা গবেষণাগার ও অভিজ্ঞতার কথা। খুঁজে দেখুন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে, বিভিন্ন গবেষণাগার-বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশি চিকিৎসা-বিজ্ঞানীরা সম্মানের সাথে, সুনামের সাথে কাজ করছেন। তারা এই দেশেরই গ্র্যাজুয়েট, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট। ট্রাম্প যেন ভারতের মতো বাংলাদেশকেও এক দিন অনুরোধ করে ওষুধ ও প্রশিক্ষণের জন্য। আমরা যেন বিদেশীদের কথায় অতিমাত্রায় নির্ভরশীল না হই! তাদের থেকে অনেক অনেক কিছু ঠিকই শেখার আছে। কিন্তু বিদেশি অনেক স্বাস্থ্য ‘তত্ত্ব ও তথ্য’ আর কারিগরি কৌশলকে আমাদের দেশের মতো করে সাজাতে হবে, ‘কাস্টমাইজ’ করতে হবে দেশীও প্রয়োজনীয়তায়। আমরা যেন হীনমন্যতায় না ভুগি। বিশাল এই জন্মভূমিতে গবেষণার সুবর্ণ সুযোগ আমরা হাতছাড়া করতে চাই না।

গত দেড় দশকে চোখের সামনেই পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সামগ্রিক জনস্বাস্থ্যে না হলেও বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি দেখলাম আমরা। আরও দেখলাম তাদের মেডিকেল শিক্ষার অগ্রগতি ও বিশেষত গবেষণায় ভারতের বিশেষ অর্জন। বিভিন্ন সামাজিক সূচকে আমাদের উন্নতির কথা শুনলেও বুঝতে পারছি যে স্বাস্থ্য-শিক্ষা-গবেষণায় আমাদের আত্মতৃপ্তিতে ভুগবার মতন সময় এখনো আসেনি। উপরে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের’ কথা শুনে ভালো লাগলেও, ভয়ও লাগল। কারণ কথায় আছে, আমরা শুরু করি শেষ করি না। প্রতিযোগিতায় যাই, অংশগ্রহণ করবার জন্য, জিতবার জন্য নয়। কিছুদিন আগেই দেখেছিলাম, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নের স্বাস্থ্য কৌশল অনুযায়ী বাংলাদেশে আগামী ২০২১ সালের মধ্যে স্বাস্থ্য খরচের ব্যক্তিগত পরিমাণ আবারও পরিবর্তন করবার পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নেই প্রয়োজনীয় সরকারি-বেসরকারি সমন্বয়ের উদ্যোগ। যেমনি নেই আজ বর্তমানের এই মহাসঙ্কটেও। ( চলবে )

ডা. রুবায়ুল মোরশেদ: চিকিৎসক, গবেষক, হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ও প্রতিষ্ঠাতা, সম্মান ফাউন্ডেশন

(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নিবে না।)

আরও পড়ুন

করোনাকাল, তারপর-১

করোনাকাল, তারপর-২

 

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh garment exports face US tariff hike

Can Bangladesh retain its foothold in US market?

As Bangladesh races against a July 9 deadline to secure a lower tariff regime with the United States, the stakes could not be higher.

15h ago