ঘর মেরামতের ৩৬ হাজার টাকা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দিলেন দরিদ্র মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কুদ্দুস
করোনাকালে মানুষের খাবারের কষ্ট দেখে মনকষ্টে ভুগছিলেন পাবনার বেড়া পৌর সদরের নতুনপাড়া মহল্লার বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কুদ্দুস। তাই নিজের ঘর মেরামতের জন্য জমিয়ে রাখা ৩৬ হাজার টাকা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দান করেছেন তিনি। মানুষের পাশে দাঁড়াতে মহানুভবতার এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কুদ্দুস।
দরিদ্র মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কুদ্দুস দৈনিক ১০০ টাকা হাজিরায় বেড়া পৌরসভা কার্যালয়ে প্রায় ২১ বছর ধরে পিয়নের কাজ করেন। পাশাপাশি প্রতি মাসে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পান ১২ হাজার টাকা। সেই ভাতা ও পৌরসভা থেকে মাসিক ৩ হাজার টাকায় কোনমতে চলে তার সংসার। তার দুই ছেলে ও তিন মেয়ে। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। আর ছেলেদের মধ্যে এক ছেলে মাছ ধরার কাজ এবং অন্য ছেলে গরু বিক্রির সময় মধ্যস্থতাকারীর কাজ করেন। নিজের ভাঙাচোরা ঘর মেরামতের জন্য তিন মাসের ভাতা ৩৬ হাজার টাকা জমা করেছিলেন তিনি।
গতকাল শুক্রবার বিকালে বাড়ির কাছে শহীদ আবদুল খালেক স্টেডিয়ামে কর্মহীন মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলতে দেখেন আব্দুল কুদ্দুস। সেখানে খাবারের জন্য মানুষের দীর্ঘ লাইন দেখে মনের মধ্যে কষ্ট অনুভব করেন তিনি। পরে ঘর মেরামতের সিদ্ধান্ত বাতিল করে বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন। পরে স্থানীয় সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকু ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ আনাম সিদ্দিকীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দেওয়ার জন্য জমানো ৩৬ হাজার টাকা প্রদান করেন মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কুদ্দুস।
এসময় আব্দুল কুদ্দুস সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার ঘর ভাইঙে গ্যাছে মেলাদির ধইরে। টেকার অভাবে সারবেরও পারতিছি না। পরে বাধ্য হয়া তিন মাসের ভাতার টেকা গুছাইছিলেম। কিন্তু করোনায় মানুষের কষ্ট দেইখ্যা মনের মধ্যে অস্থির লাগতিছিল। তাই টেকাগুল্যান প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠায়া দিল্যেম। ঘর তো আমি পরেও দিব্যার পারব।’
বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসিফ আনাম সিদ্দিকী বলেন, ‘আর্থিকভাবে অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কুদ্দুস প্রকৃতপক্ষেই মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন। যা অনেকের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এভাবেই তো মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়ায়।’
আব্দুল কুদ্দুসের দান করা ৩৬ হাজার টাকা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে পাঠানো হবে বলেও জানান ইউএনও।
Comments