মেয়রের বিরুদ্ধে শ্রমিক ইউনিয়ন নেতাকে মারধরের অভিযোগ
ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলায় স্থানীয় পৌরসভার মেয়রের বিরুদ্ধে দোকান ও প্রতিষ্ঠান কর্মচারী শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতিকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় মেয়রের বিরুদ্ধে রানীশংকৈল থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
আজ রোববার বিষয়টি নিশ্চিত করে রানীশংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মান্নান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গতকাল বিকালে ওই সংগঠনের সভাপতি প্রদীপ চন্দ্র শাহা বাদী হয়ে রানীশংকৈল পৌরসভার মেয়র আলমগীর সরকারসহ প্রবীর দত্ত, মাজহারুল ইসলাম ও অমিত বসাকের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগপত্র দিয়েছেন। অভিযোগটি ডায়েরিভুক্ত করে তদন্ত চলমান রয়েছে।’
প্রদীপ চন্দ্র শাহা অভিযোগে উল্লেখ করেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে সব দোকানপাট বন্ধের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন দোকান কর্মচারীরা। প্রায় একমাস ধরে দোকানপাট বন্ধ থাকার কারণে বেতন-ভাতাও দিচ্ছেন না মালিকরা। এতে স্বাভাবিকভাবেই খুব কষ্টে দিন অতিবাহিত করছেন তারা। এর পরিপ্রেক্ষিতে বেতন-ভাতার দাবিতে গত ২২ এপ্রিল দুপুরে রানীশংকৈল চৌরাস্তা মোড়ে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেন কর্মচারীরা। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌসুমী আফরিদা ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাহরিয়ার আজম মুন্নার আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে তারা অবরোধ তুলে নেন।
দোকান কর্মচারীদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী দেওয়ার জন্য পৌর মেয়র আলমগীর সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ত্রাণ দেওয়ার কথা বলে কয়েকবার কর্মচারীদের কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি নেন। কিন্তু, ত্রাণসামগ্রী দেননি। গত ২৪ এপ্রিল দুপুর আড়াইটার দিকে মেয়র আলমগীর প্রদীপকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে সন্ধ্যায় তার বাসায় ডেকে নেন।
পরে সভাপতি প্রদীপসহ সংগঠনের বেশ কয়েকজন সদস্য মিলে মেয়রের বাসায় গেলে সবার সামনে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রদীপ ও কোষাধ্যক্ষ সাগর সাহাকে বেধড়ক মারধর করেন মেয়র। পরে সঙ্গে থাকা অন্যান্য কর্মচারীরা তাদের উদ্ধার করে রানীশংকৈল হাসপাতালে ভর্তি করে।
এ ব্যাপারে পৌর মেয়র আলমগীর সরকারের কাছে জানতে চাইলে তিনি মারপিটের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘দোকান কর্মচারীরা বেতন-ভাতা না পাওয়ার বিষয়টি অবগত করলে আমি তাৎক্ষণিকভাবে মালিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করি। এরপর মালিক পক্ষকে নিয়ে ২৫ এপ্রিল তাদের সঙ্গে বসার সিদ্ধান্ত হয়। সে সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে তারা গত ২২ এপ্রিল বেতন-ভাতার দাবিতে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করে। সে সময় ইউনিয়নের নেতারা বক্তব্যে উল্লেখ করেন, “মেয়র তাদের কোনো ত্রাণ সরবরাহ করেননি।” অথচ ইতোমধ্যে পৌরসভা থেকে প্রায় দেড় শতাধিক কর্মচারীর মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রদীপ শাহাসহ অন্যান্য নেতাদের আমার বাড়িতে ডেকে আনা হয়। তবে, কাউকে মারধর করা হয়নি।’
রানীশংকৈল দোকান মালিক সমিতির সভাপতি উজ্জ্বল বসাক বলেন, ‘মাস ভিত্তিক নয়, কর্মচারীদের দৈনিক মজুরি হিসেবে টাকা দেওয়া হয়। লকডাউনের সময় দোকান বন্ধ থাকলেও প্রত্যেক কর্মচারীকে এক হাজার করে টাকা দেওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য সহযোগিতা করা হয়েছে।’
পৌর মেয়র আলমগীর সরকারসহ আরও তিন জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান ওসি আব্দুল মান্নান।
Comments