প্রবাস

অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশিসহ ৬৪ হাজার শরণার্থী ঝুঁকিতে

ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

মহামারি করোনা অস্ট্রেলিয়ার অর্থনৈতিক মানচিত্র বদলে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, গোটা বিশ্বের আর্থিক ধস থেকে রক্ষা পাবে না অস্ট্রেলিয়াও। বিশেষ করে বহিরাগত অভিবাসীরা পড়বে মারাত্মক ঝুঁকিতে।

সংকট এতটাই ভয়াবহ হবে যে, সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল মাইগ্রেশন বিশেষজ্ঞ সহযোগী অধ্যাপক আনা বাউচার আশঙ্কা করে বলেছেন, ‘অভিবাসী বেকার নারীরা যৌনব্যবসায় লিপ্ত হতে পারে। কারণ এই সংকটময় পরিস্থিতিতে এ ছাড়া তাদের আর কোনো কাজের সুযোগ নেই।’

অস্ট্রেলিয়ান সরকারের পরিসংখ্যান বলছে, করোনার আঘাতে আড়াই কোটি জনসংখ্যার দেশে এরই ভেতর প্রায় ৬০ লাখ মানুষ বেকার হয়েছেন। এই সংকটে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বেকারত্বের হার ১০ শতাংশে পৌঁছাবে। বহিরাগত অভিবাসীদের মধ্যে এর সংখ্যা হবে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ।

অস্ট্রেলিয়ার কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসংখ্যান হিসাবে ৬৪ হাজারের বেশি অবৈধ শরণার্থী রয়েছেন এই দেশে। এদের মধ্যে ১২,০৪০ জন বাস করছেন ২০ বছরের বেশি সময় ধরে। প্রায় ৬,৬০০ জন আছেন ২০ বছর ধরে। প্রায় ১১ হাজার জন আছেন ২ থেকে ৫ বছর ধরে। প্রায় ৫,০০০ জন আছেন ৩ মাসের বেশি সময় ধরে। ইমিগ্রেশন ও সীমান্ত সুরক্ষা ডিপার্টমেন্টের হিসাব অনুযায়ী ৪৭,০০০ মানুষ পর্যটক ভিসায় এসে থেকে গেছেন এবং অবৈধভাবে বাস করছেন। এরা এদের ভিসাকে অপব্যবহার করেছেন।

মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মেরি সেগ্রাভস ও অন্যান্যরা, যারা অস্ট্রেলিয়ায় বেআইনি কর্মীদের অভিজ্ঞতা নিয়ে তদন্ত করছেন তারা বিশ্বাস করেন, এই হিসাবের বাইরেও রয়ে গেছে বিপুল সংখ্যাক মানুষ। যারা বিভিন্ন দেশ থেকে উড়োজাহাজে করে এসেছেন ডিপার্টমেন্টের কাছে শুধু তাদের হিসাবটিই আছে। এর বাইরেও সমুদ্র পাড়ি দিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছেন বিপুল সংখ্যক বহিরাগত।

এই বৃহত্তর বহিরাগত জনগোষ্ঠীর জন্য করোনাকাল বয়ে নিয়ে এসেছে গুরুতর উদ্বেগ। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে তৈরি হবে ভয়াবহ পরিস্থিতি।

সুপারঅ্যানুয়েশন সংস্থা ‘জুপার’ একটি সমীক্ষা প্রকাশ করেছে। তারা ২০০ জন শ্রমিকের উপর গবেষণা করে দেখেছে, মহামারির কারণে অধিকাংশের কাজ চলে গেছে। তাদের ৭৯ শতাংশ বলেছেন, আগামীতে শুধুমাত্র বাড়ি ভাড়া দেওয়ার জন্যই তাদের সংগ্রাম করতে হবে। এদের অনাহারে থাকার দিন এগিয়ে আসছে। অস্ট্রেলিয়ায় এদের বৈধ ভিসা না থাকায় সরকার ঘোষিত অনুদানও পাবেন না। এদের কাজেরও অনুমতি না থাকায় লুকিয়ে বিভিন্ন সংস্থায় কম মজুরিতে কাজ করতেন। দেশে বেকারত্ব বৃদ্ধি পেলে সেই কাজেরও কোনো সুযোগ থাকবে না।

করোনাকালে শরণার্থীদের সব থেকে যে বিষয়টি মারাত্মক ঝুঁকির ও উদ্বেগের কারণ হয়েছে তা হচ্ছে, এই পরিস্থিতিতেও তারা স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারছেন না। করোনা আক্রান্তের উপসর্গ দেখা দিলেও তারা হাসপাতালে যেতে ভয় পাচ্ছেন। কারণ সেখানে গেলেই তাদের ভিসা পরীক্ষা করা হবে।

এই শরণার্থীদের মধ্যে অনেকেই আছেন বাংলাদেশি। অস্ট্রেলিয়ায় এই মুহূর্তে কতোজন বাংলাদেশি শরণার্থী আছেন তার সঠিক কোনো হিসাব নেই। অস্ট্রেলিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো হিসাব পাওয়া যায়নি। তবে বাংলাদেশি ও ইন্ডিয়ান মাইগ্রেশন এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ২ হাজার বাংলাদেশি শরণার্থী আছেন অস্ট্রেলিয়ায়। এর মধ্যে অনেকেই আছেন যারা জাতিগতভাবে রোহিঙ্গা। তারা অবৈধভাবে বাংলাদেশি পাসপোর্ট বানিয়ে সমুদ্রপথে অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশ করেছেন।

এই প্রতিবেদকের সঙ্গে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি শরণার্থীর কথা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন চাঁদপুরের মোবারক হোসেন। তিনি প্রায় ১৮ বছর আছেন অস্ট্রেলিয়ায়। এখনো বৈধ হতে পারেননি। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি আমার যে মেয়েকে তার মায়ের কোলে রেখে এসেছিলাম সে এখন ইউনিভার্সিটিতে পড়ছে। অস্ট্রেলিয়ায় সিটিজেনশিপ পাওয়ার আশা নিয়ে এতোটা বছর কাটিয়ে দিয়েছি। জানি না, জীবিত দেশে ফিরতে পারবো কিনা!’

আকিদুল ইসলাম: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English
Anti-Terrorism Act

Banning party activities: Govt amends anti-terror law

The interim government is set to bring the curtain down on the Awami League as a functioning political party.

4h ago