গাজীপুরে ৪ খুনে জড়িত থাকার অভিযোগে যুবক গ্রেপ্তার
গাজীপুরের শ্রীপুরে চাঞ্চল্যকর চার খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
গতকাল রবিবার দিবাগত রাতে ২০ বছর বয়সী এই যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়।
গাজীপুর পিবিআইয়ের পরিদর্শক হাফিজুর রহমান জানান, এই যুবককে তার এলাকা থেকে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, তার বাসা থেকে রক্তমাখা কাপড়, মাটির নিচ থেকে মোবাইল ফোন, পায়জামার পকেট থেকে তিনটি গলার চেইন, কানের দুল ও লুট করা স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে সে পুলিশের কাছে হত্যার কথা স্বীকার করেছে, উল্লেখ করে তিনি আরও জানান, সংবাদ সম্মেলন করে চাঞ্চল্যকর বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।
গত ২৩ এপ্রিল বিকালে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার আবদার এলাকার একটি বাড়ি থেকে প্রবাসী রেদোয়ান হোসেন কাজলের স্ত্রী ইন্দোনেশিয়ান নাগরিক স্মৃতি আক্তার ফাতেমা (৪৫), তার বড় মেয়ে সাবরিনা সুলতানা নূরা (১৬), ছোট মেয়ে হাওয়ারিন (১২) ও প্রতিবন্ধী ছেলে ফাদিলের (৮) গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
পরদিন নিহত স্মৃতি ফাতেমার শ্বশুর আবুল হোসেন বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় অজ্ঞাতনামাদের অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেন।
ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার গোলাবাড়ী গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে রেজোয়ান হোসেন কাজল কিশোর বয়স থেকেই কর্মসূত্রে দেশের বাইরে থাকেন। প্রায় ২০ বছর আগে কাজল ইন্দোনেশিয়ায় থাকাকালে সে দেশের নাগরিক স্মৃতি ফাতেমাকে বিয়ে করেন।
পরে দেশে ফিরে ছোটভাই জাহিদ হোসেন আরিফের সঙ্গে এক সঙ্গে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার আবদার গ্রামে জমি কিনে বাড়ি করেন। পরে তিনি কাজের জন্য মালয়েশিয়া চলে যান। তার বাসার নিয়মিত বাজার করা ও অন্যান্য সাধারণ কাজে আরিফ সহযোগিতা করতেন অথবা অন্য কাউকে দিয়ে করিয়ে দিতেন।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী বলেন, ‘এটাই এই যুবকের প্রথম মামলা নয়। এর আগেও তার নামে শ্রীপুর থানায় হত্যা ও ধর্ষণ মামলা ছিল। মামলাটি বর্তমানে আদালতে রয়েছে।’
আবদার এলাকার হাসান ওরফে ফালান বলেন, ‘২০১৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তার মেয়ে নীলিমাকে (৭) ধর্ষণের পর মাথায় আঘাত ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে এই যুবক। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা ও পরে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হলে বয়স বিবেচনায় উচ্চ আদালত থেকে সে জামিনে মুক্ত হয়।’
‘মুক্তির পর সে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মামলা প্রত্যাহার ও এলাকাছাড়াসহ নানা ধরনের চাপ ও হুমকি দিতে থাকে। এ বিষয়ে ২০১৮ সালে ২৮ আগস্ট নিরাপত্তা চেয়ে তাকেসহ তার বাবা, মা ও স্বজনদের অভিযুক্ত করে শ্রীপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়’ যোগ করেন তিনি।
গাজীপুর জেলা পিবিআইয়ের পরিদর্শক হাফিজুর রহমান বলেন, ‘সে অবশ্যই তার সহযোগীদের নিয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। মাসহ চার জন হত্যার ঘটনায় বিভিন্ন দিক থেকে তদন্ত করলে তার চারিত্রিক নানা অপকর্ম বেরিয়ে আসে। সেসব সূত্র ধরে এগিয়ে গতকাল রবিবার রাতেই তাকে তার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যাকাণ্ডের দায়িত্ব স্বীকার করে।’
Comments