অস্ট্রেলিয়ায় আটকে পড়া ৩৫০ বাংলাদেশি দেশে ফিরতে পারছেন না
করোনাভাইরাসের কারণে বিভিন্ন দেশে আটকে পরেছেন কয়েক লাখ মানুষ। নিজেদের নাগরিককে দেশে ফিরিয়ে নিতে এরই মধ্যে অনেক দেশই বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
বাংলাদেশও ভারত ও সিঙ্গাপুরসহ কয়েকটি দেশ থেকে নিজেদের নাগরিকদের বিশেষ উড়োজাহাজে ফিরিয়ে এনেছে। তবে অস্ট্রেলিয়ায় আটকে পড়া প্রায় ৩৮৫ জন বাংলাদেশির ব্যাপারে এখনো কোন সিদ্ধান্ত সরকার নেয়নি। তারা গভীর উদ্বেগ-অনিশ্চয়তায় আছেন বলে জানিয়েছেন। তাদের অনেকের ভিসার মেয়াদও প্রায় শেষ পর্যায়ে।
অস্ট্রেলিয়ার সরকার স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, এই সংকটকালে নতুন ভিসা ইস্যু ও অস্থায়ী ভিসাধারীদের ভিসার মেয়াদ বাড়ানো হবে না। এ ছাড়া ১৪ মার্চ থেকে ২৩ মার্চ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়াতে পর্যায়ক্রমে লকডাউন শুরু হলে অস্থায়ীভাবে বাস করা বহিরাগতদের অস্ট্রেলিয়া ছাড়ার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। তিনি বলেন, ‘বহিরাগতের এখন নিজেদের দেশে ফিরে যাওবার সময় এসেছে।’
অস্ট্রেলিয়ায় আটকে পড়া বাংলাদেশিরা ফেসবুকে Bangladeshi Stuck In Australia নামে একটি গ্ৰুপ খুলেছেন। সেখানে তারা নিজেদের কষ্টের কথা, অনিশ্চিত দিনরাত্রির গল্পসহ নিজেদের মধ্যে দেশে ফেরার সম্ভাবনা নিয়েও মতবিনিময় করছেন।
আটকে পড়া বাংলাদেশি মাশরুর মাহমুদ শুভ ওই গ্ৰুপে একটি অডিও বার্তায় বলেছেন, ‘আমি এই মুহূর্তে আমার পরিবারকে নিয়ে প্রচণ্ড অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে দিন পার করছি। আমরা আসলে খুব সীমিত বাজেট নিয়ে ১৫ দিনের জন্য এখানে বেড়াতে আসি। কিন্তু, এখন উপায় না পেয়ে আমাদের এক আত্মীয়র বাসায় ঠাঁই নিয়েছি। এরই মধ্যে যেহেতু আমি দু’বার টিকিট করেছি সেই কারণে আমার ফান্ডও আস্তে আস্তে কমে আসছে। অস্ট্রেলিয়াতে জীবনযাপন আসলেই খুব ব্যয়বহুল এবং এই অবস্থা বেশি দিন চলতে থাকলে আমাদের প্রচণ্ড বিপদে পড়তে হবে। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ান সরকার বিভিন্ন দেশ থেকে তাদের নাগরিকদের আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করছে। তাদের দেশে অবস্থিত অন্যান্য দেশগুলোর অ্যাম্বাসিগুলোকেও তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে।’
এই প্রতিবেদকের সঙ্গে বেশ কয়েকজনের কথা হয়। তাদের মধ্যে সিডনির ব্ল্যাকটাউনের নির্ঝর আবেদীন বলেন, ‘আমি একজন ছাত্র। আমার মা বেড়াতে এসে আটকে পড়েছেন। আমি পার্টটাইম জব করতাম। লকডাউনের জন্য আমার জব চলে গেছে। মা উচ্চ রক্তচাপের রোগী। তাকে নিয়মিত চেকআপ করাতে হয়। এদেশে বিদেশিদের চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল। যা বহন করা এই মুহূর্তে আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তিনি দ্রুত দেশে ফিরতে না পারলে অবস্থা খুব ভয়াবহ হবে।’
অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন তাদের অফিশিয়াল ওয়েব সাইটে গত ৪ এপ্রিল ঘোষণা দিয়ে বলেছে, অস্ট্রেলিয়ায় আটকে পড়া যেসব বাংলাদেশি দেশে ফিরতে আগ্রহী তারা যেন দ্রুত হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
‘এখন পর্যন্ত ৩৫০ জন বাংলাদেশি তাদের নাম নিবন্ধন করেছেন’ উল্লেখ করে বাংলাদেশ দূতাবাসের হাইকমিশনার সুফিউর রহমান এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন এয়ারলাইন্স সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করছি এবং অস্ট্রেলিয়ান কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কূটনৈতিক ছাড়পত্রের বিষয়ে কথা বলেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার এই বিষয়ে অবগত আছে এবং আমরা তাদের নির্দেশ মতো কাজ করছি।’
আকিদুল ইসলাম: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক
Comments