বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৯ করোনা রোগী
করোনায় আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় ভালো সফলতা পেয়েছে বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল। এখানে চিকিৎসা নিয়ে এখন পর্যন্ত নয় জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। এরমধ্যে আজ বুধবার সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন চার জন। চার জনের মধ্যে ৬০ বছরের অধিক বয়সী দুই জন রোগী ছিলেন। এছাড়াও, গত এক সপ্তাহে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন আরও পাঁচজন।
সবমিলিয়ে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে এ পর্যন্ত ভর্তি হওয়া ১১ জন করোনা রোগীর নয় জন পুরোপুরি সুস্থ হয়েছেন। তাও মাত্র ১৬ দিনের ব্যবধানে। এসব রোগীদের তিনবার ফলোআপ টেস্টে নেগেটিভ আসার পর হাসপাতাল ছাড়ার অনুমতি দেওয়া হয়।
হাসপাতালে ভর্তি হওয়া অন্য দুজনও সুস্থ হওয়ার পথে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
জানা গেছে, গত একমাসে করোনা উপসর্গ নিয়ে আসা প্রায় শতাধিক রোগীর চিকিৎসা দিয়েছে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিট। বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন দুজন। এছাড়া করোনা উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন আছে আরও আট জন।
আজ বুধবার ছাড়পত্র পাওয়া ৭০ বছর বয়সী এক জন বলেন, ‘আসি এখন পুরোপুরি সুস্থ। করোনার কথা শুনে অনেক ভয় পেয়েছিলাম। মনে করছিলাম আর বাঁচবো না। তবে, হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সরা আমাকে সবসময় সাহস দিয়েছেন।’
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও করোনা বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তরুণ চিকিৎসক ডা. মো. কামরুল আজাদ জানান, এই হাসপাতালে এখন পর্যন্ত কোনো করোনা রোগীর মৃত্যু হয়নি। জেলার দুই উপজেলায় যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে তাদের কেউই বরগুনা সদর হাসপাতালের চিকিৎসা নেননি। তাদের একজন চিকিৎসা নিয়েছেন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও অপরজন পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে।’
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের করোনা বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একমাত্র চিকিৎসক কামরুল আজাদ। তাই এখানের করোনা ইউনিটের পুরো দায়িত্ব তার ওপরে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী, কোনো চিকিৎসক এক সপ্তাহ করোনা রোগীর চিকিৎসা শেষে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকবেন। কিন্তু, একমাত্র প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক হওয়ায় কোয়ারেন্টিনে যেতে পারছেন না তিনি। ফলে একমাসেরও বেশি সময় ধরে টানা চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যাচ্ছেন কামরুল আজাদ।
করোনা রোগীদের সুস্থ হওয়া প্রসঙ্গে ডা. কামরুল আজাদ বলেন, ‘করোনার কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা না থাকলেও লক্ষণ দেখে আমরা চিকিৎসা দিয়েছি। তাদের সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রেখেছিলাম। এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে রোগীর মনোবল বাড়ানো, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো এবং সময়মত খাওয়া-দাওয়া
করানো। সম্ভব হলে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো, যাতে তার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।’
বরগুনার সিভিল সার্জন এবং জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কসহ সকল স্বাস্থ্যকর্মীদের আন্তরিক অবদানের কথা উল্লেখ করেন এই চিকিৎসক।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের নার্স জাকিয়া পারভিন সীমা বলেন, ‘বাসায় মায়ের কাছে ছোট বাচ্চাকে রেখে তারপর ডিউটি করে যাচ্ছি। যেহেতু মানুষের সেবা করতে এই পেশায় এসেছি তাই পিছপা হওয়ার সুযোগ নেই।’
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র মেডিকেল টেকনোলজিস্ট সুভাষ দত্ত বলেন, ‘দেশের জন্য, দেশের মানুষের সেবা করার জন্য এ পেশায় আসা। আর এখন তো সেবা করার সেরা সময়।’
বরগুনা সিভিল সার্জন ডা. হুমায়ুন খান শাহীন জানান, ‘বরগুনা জেনারেল হাসতাপালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মৃদু সংক্রমণ হয়েছিল এবং জটিলতা তুলনামূলক কম থাকায় স্বল্প সময়ের সেবায় তারা সুস্থ হয়ে উঠছেন। বরগুনায় এ পর্যন্ত ৩০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে দুই জন মারা গেছেন এবং আজ চার জনসহ মোট নয় জন সুস্থ হয়েছেন। বাকি ১৯ জন এখনও জেনারেল হাসপাতালসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।’
Comments