যশোরে করোনা আক্রান্ত ৪৪ জনের মধ্যে ১৮ জন চিকিৎসাকর্মী
যশোরে সাধারণ মানুষের তুলনায় করোনাভাইরাসে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন চিকিৎসাকর্মীরা। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত জেলায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ৪৪ জনের। এরমধ্যে চিকিৎসক চার জন, নার্স তিন জন ও স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন ১১ জন। এর বিপরীতে সাধারণ মানুষের সংখ্যা ২৬ জন।
যশোরের সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহীন জানান, অধিকাংশ রোগীর করোনার উপসর্গ না থাকা, ভ্রমণ, উপসর্গ গোপন করা, কারো সংস্পর্শে গিয়েও প্রকাশ না করার কারণে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। কিন্তু অজানায় থেকে যাচ্ছেন করোনায় আক্রান্ত রোগীরা। এ অবস্থা চলতে থাকলে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাবে। তখন চিকিৎসা ব্যবস্থাও হুমকির মুখে পড়বে। বিষয়টি নিয়ে চিকিৎসক সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) যশোর জেলা শাখার নেতারাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
সিভিল সার্জন বলেন, ‘আক্রান্ত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন। বর্তমানে শারীরিকভাবে তারা সুস্থ আছেন। মেডিকেল টিমের সদস্যরা নিয়মিত তাদের খোঁজ খবর নিচ্ছেন। করোনায় আক্রান্ত চিকিৎসকদের মধ্যে যশোর মেডিকেল কলেজের নাক,কান ও গলা বিভাগের এক জন সহকারী অধ্যাপক, যশোর সিভিল সার্জন অফিসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক জন মেডিকেল অফিসার, চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক জন ও কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক জন। করোনায় আক্রান্ত তিন জন নার্স চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। এ ছাড়া আক্রান্ত ১১ স্বাস্থ্যকর্মী অন্যান্য উপজেলায় কর্মরত।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ বলেন, ‘চিকিৎসা সেবাদানকারী ও অন্য মানুষের সুরক্ষায় করোনা উপসর্গের কথা কেউ যেন না লুকায়। তাহলে সবার জন্য ভালো হবে। কারণ, করোনা ভাইরাস অত্যন্ত সংক্রামক হওয়ায় এতে আক্রান্তদের সংস্পর্শে প্রস্তুতি ছাড়া কেউ গেলে তারও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) যশোর জেলা শাখার সভাপতি ডা. একেএম কামরুল ইসলাম বেনু জানান, রোগীর অনুপাতে যশোরে করোনায় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্তের হার বেশি। চিকিৎসক, সেবিকা ও স্বাস্থ্যকর্মীদের শতভাগ ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। পিপিই পরে অন্তবিভাগ ও বর্হিবিভাগে দায়িত্ব পালনের ব্যবস্থায় কর্তৃপক্ষের সজাগ হওয়া উচিৎ। চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও রোগীর মধ্যে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এ ছাড়া করোনার উপসর্গ থাকা রোগী ও সাধারণ রোগীদের চিকিৎসার জন্য আলাদা হাসপাতালের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় করোনায় আক্রান্ত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে।
গত ২৪ ঘণ্টায় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জেনোম সেন্টারে আরও ১৮ জনের করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। দুটি জেলার মোট ৭২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ওই ১৮ জন করোনা শনাক্ত হন। এরমধ্যে যশোরে ১০ জন ও ঝিনাইদহের আট জন রয়েছেন। জেনোম সেন্টারের সহকারী পরিচালক প্রফেসর ড. ইকবাল কবির জাহিদ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এদিন নড়াইল জেলার দুটি নমুনা পরীক্ষা করলে ফলাফল নেগেটিভ পাওয়া যায় বলেও জানান ইকবাল কবির জাহিদ।
Comments