হাজারো পোশাক শ্রমিক ফিরছেন, বাড়ছে সংক্রমণ ছড়ানোর ভয়

ঢাকা ও বিভিন্ন পোশাক শিল্প এলাকাগুলোতে গতকাল বুধবার ফিরেছেন হাজার হাজার পোশাক শ্রমিক। এতে করে দ্রুত নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পরার আশংকা বেড়ে গেছে।
গতকাল বুধবারে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ফেরি ঘাট। সামাজিক দূরত্ব না মেনে ফেরিতে ঢাকামুখি শত শত যাত্রী, যাদের বেশিরভাগই পোশাক কারখানার শ্রমিক। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা ও বিভিন্ন পোশাক শিল্প এলাকাগুলোতে গতকাল বুধবার ফিরেছেন হাজার হাজার পোশাক শ্রমিক। এতে করে দ্রুত নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পরার আশংকা বেড়ে গেছে।

পুনরায় কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি পাওয়া কারখানাগুলো চলবে ঢাকায় থাকা শ্রমিকদের নিয়ে, বাইরে থেকে কোনো শ্রমিককে আসতে দেওয়া হবে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের এমন ঘোষণার একদিন পরেই শ্রমিকরা এভাবে আসতে শুরু করে। যাতে করে তারা তাদের কারখানায় কাজ অংশ নিতে পারে।

গণপরিবহনের অভাবে তারা পিকআপ ভ্যান এবং ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় করে ফিরেছে। পরিশোধ করেছে সাধারণ ভাড়ার দুই থেকে তিনগুণ অর্থ।

সারাদেশের সাত হাজার ৬০২টি পোশাক কারখানার মধ্যে গতকাল বুধবার থেকে কাজ শুরু করেছে দুই হাজার ৩৫৬টি। শিল্প পুলিশ জানায়, এর মধ্যে রয়েছে ঢাকার ৪৪৩টি, গাজীপুরের ৬৩৮টি, চট্টগ্রামের ৬০৫টি, নারায়ণগঞ্জের ৩০১টি, ময়মনসিংহের ৮০টি এবং খুলনার ২৮৯টি কারখানা।

গত মঙ্গলবার পোশাক কারখানার মালিকদের সঙ্গে বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, সীমিত আকারে চালু হতে যাওয়া পোশাক কারখানাগুলো শহরে অবস্থানরত শ্রমিকদের দিয়েই চলবে। বাইরে থেকে রাজধানীতে শ্রমিকদের প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।

গতকাল বুধবার যোগাযোগ করা হলে মন্ত্রী জানান, শ্রমিকদের এভাবে ঢাকায় ফিরতে দেখে তিনি উদ্বিগ্ন।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘কেন শ্রমিকরা ঢাকায় ফিরছে আমি জানি না। গত মঙ্গলবার গার্মেন্টস মালিকরা আমাকে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে তারা ঢাকার বাইরে থাকা কোনো শ্রমিককে কাজে যোগ দিতে বলবেন না। আমরা মালিকদের কাছে জানতে চাইব কেন এবং কীভাবে শ্রমিকরা ঢাকায় আসছেন।’

তিনি আরও জানান, এত বিরাট সংখ্যক মানুষকে ঢাকায় প্রবেশ করতে না দেওয়া কার্যত অসম্ভব।

তিনি যোগ করেন, ‘শ্রমিকরা হয়ত ভাবছেন কাজে যোগ না দিতে পারলে তারা চাকরি হারাবেন। এ কারণেই তারা ঢাকায় ফিরে আসছেন।’

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কারখানায় ও বাড়িতে যাতায়াতের পথে যথাযথ স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত না করা হলে কারখানাগুলো পুনরায় চালু করায় ভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক মোজাহেরুল হক সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘(কারখানার পুনরায় খোলার) এই সিদ্ধান্ত সঠিক না। এটা জনগণকে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে। এটা লকডাউন নীতির সম্পূর্ণ লঙ্ঘন। লকডাউনের অর্থ মানুষ ঘরে থাকবে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখবে। কারখানা চালু করায় সংক্রমণের হার বাড়বে।’

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সরকার হয়তো সিদ্ধান্তটি নিয়েছে অর্থনৈতিক দিক বিবেচনা করে। তবে শ্রমিকদের সুরক্ষা নির্দেশিকা তৈরি করার আগে কারখানা চালু করতে দেওয়া উচিত না।

শ্রমিকরা আসছে

গতকাল শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ী এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটের দুটি ফেরি জনাকীর্ণ হয়ে ফেরে ঢাকা এবং এর আশেপাশের গন্তব্যে পৌঁছাতে মরিয়া কয়েকশ শ্রমিককে নিয়ে।

ঘাটের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জানিয়েছেন, পোশাক কারখানার কার্যক্রম শুরু হওয়ার ঘোষণার পর গত সোমবার প্রচুর মানুষ ফেরিতে করে পদ্মা নদী পার হয়েছেন। গত মঙ্গলবার ও বুধবার যাত্রীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।

কাঠালবাড়ী ঘাটে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডাব্লিউটিসি) সহকারী ব্যবস্থাপক শামসুল আবেদীন বলেন, ‘আজ ভিড় স্বাভাবিক সময়ের মতো।’

তিনি জানান, পুলিশ সদস্যরা সেখানে থাকলেও এত বিপুল সংখ্যক মানুষ আটকানো তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না।

তিনি আরও জানান, বর্তমানে প্রতিদিন সাতটি ফেরি জরুরি পণ্য ও যানবাহন পরিবহন করছে। যেখানে নিয়মিত সময়ে ১৫ থেকে ১৭টি ফেরি চলাচল করে।

শিমুলিয়া ঘাটের একজন বিআইডব্লিউটিসি কর্মচারী জানান, গত তিন দিন ধরে নদী পারাপারের যাত্রী সংখ্যা অনেক বেশি বেড়েছে।

তিনি বলেন, ‘কয়েক মিনিট আগে টার্মিনালে প্রায় ৮০০ মানুষ নিয়ে একটি ফেরি নোঙ্গর করেছে।’

একই অবস্থা পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটের।

এছাড়াও স্থলপথে আশেপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জে আসছে শ্রমিকরা।

যোগাযোগ করা হলে বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক জানান, তারা স্পষ্টভাবে বলেছেন যে ঢাকার বাইরে থাকা শ্রমিকদের ফেরার দরকার নেই এবং এপ্রিল মাসের বেতন তাদের অ্যাকাউন্টে জমা দিয়ে দেওয়া হবে।

দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া এক বার্তায় তিনি জানান, ‘আমরা আমাদের সদস্যদের বলেছি যে শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা যাবে না।’

গাইডলাইন অনুসরণ না করলে সদস্যদের বিজিএমইএ সহযোগিতা করবে বলে জানানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ঢাকামুখি লক্ষাধিক শ্রমিকের আসা প্রমাণ করে যে এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা এবং এতে কারও নিয়ন্ত্রণ নেই।’

বিজিএমইএর সহসভাপতি আরশাদ জামাল দিপু জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত প্রায় ৪২ শতাংশ পোশাক শ্রমিক কাজে যোগদান করেছেন এবং তাদের বেশিরভাগই ঢাকা ও এর আশেপাশের এলাকা থেকে এসেছেন।

তিনি উল্লেখ করেছেন, প্রায় দুই লাখ শ্রমিক ঢাকার বাইরে থেকে ফিরে আসতে পারেন।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা তাদের আসতে বলিনি। কারখানা আবার চালু হচ্ছে জেনে তারাই হয়ত ফিরে এসেছে। আমরা কারখানার কর্মকর্তাদের কড়া নির্দেশ দিয়েছি যাতে ঢাকার বাইরে থেকে শ্রমিকদের ফিরিয়ে না আনা হয়।’

সংক্ষেপিত: ইংরেজিতে মূল প্রতিবেদনটি পড়তে ক্লিক করুন RMG Workers: Thousands rush in, raise fear of spread এই লিংকে।

Comments

The Daily Star  | English

Ex-public administration minister Farhad arrested

Former Public Administration minister Farhad Hossain was arrested from Dhaka's Eskaton area

3h ago