৩৫০০ টাকায় করোনা টেস্ট করাতে পারবেন তিন হাসপাতালের ভর্তি রোগীরা

বাংলাদেশে প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হওয়ার দেড় মাসেরও বেশি সময় পরে গত মঙ্গলবার দেশের তিনটি বেসরকারি হাসপাতালকে সীমিত পরিমাণে করোনাভাইরাস পরীক্ষার অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হওয়ার দেড় মাসেরও বেশি সময় পরে গত মঙ্গলবার দেশের তিনটি বেসরকারি হাসপাতালকে সীমিত পরিমাণে করোনাভাইরাস পরীক্ষার অনুমোদন দিয়েছে সরকার।

রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতাল, ইউনাইটেড হাসপাতাল এবং এভার কেয়ার হাসপাতাল (পূর্বে অ্যাপোলো হাসপাতাল নামে পরিচিত) শিগগির করোনাভাইরাস পরীক্ষা করতে পারবেন। তবে তারা শুধু তাদের হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের নমুনা পরীক্ষা করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

পরীক্ষার ফি হিসেবে সর্বোচ্চ তিন হাজার ৫০০ টাকা নেওয়া যাবে বলে নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এবং অনেক বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করোনা প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পরেই বেসরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা সুবিধার দাবি জানিয়েছিল। তবে তখন তাতে সায় মেলেনি সরকারের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা গতকাল বুধবার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা সব বেসরকারি হাসপাতালে চিঠি দিয়েছি আমাদেরকে জানাতে যে, তারা করোনার পরীক্ষা করতে সক্ষম কিনা। যাদের সক্ষমতা আছে এবং অত্যাবশ্যকীয় সকল শর্ত পূরণ করতে পারবে তাদের কোভিড-১৯ পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া হবে।’

সারা দেশে নিবন্ধিত প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে।

করোনা পরীক্ষা এবং চিকিৎসার সুবিধা সরকারি হাসপাতালে সীমাবদ্ধ থাকলেও বেসরকারি হাসপাতালের অনেক ডাক্তার এবং স্বাস্থ্যকর্মী ইতিমধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

এভার কেয়ার হাসপাতালের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার আরিফ মাহমুদ জানান, আগামী শনিবার থেকে তারা করোনাভাইরাস পরীক্ষা শুরু করতে পারবে।

তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে আপনারা জানেন যে বিপুল সংখ্যক স্বাস্থ্য কর্মী সংক্রমিত হয়েছেন। আমরা যদি করোনা আক্রান্তদের শনাক্ত করতে পারি তাহলে তা অন্য রোগীদের পাশাপাশি আমাদের কর্মীদেরও নিরাপদ রাখবে।’

তিনি আরও জানান, এই পরীক্ষা রোগীদের কাছে যাওয়ার আগে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।

চিকিত্সকদের একটি বেসরকারি প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বুধবার পর্যন্ত মোট ৪৪০ জন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে অথবা করোনা রোগীর সংস্পর্শে আসায় অনেক চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য কর্মী কোয়ারেন্টিনে বা আইসোলেশনে রয়েছেন।

করোনা পরীক্ষার অনুমতি পাওয়া বেসরকারি হাসপাতালগুলো বহিরাগত রোগীদের পরীক্ষা করতে পারবে না। তবে, স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন ধীরে ধীরে এই সুবিধা বাড়ানো হবে।

পরীক্ষা সুবিধা সীমিত রাখার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে অধ্যাপক নাসিমা বলেন, ‘আমরা বহিরাগত রোগীদের পরীক্ষা করার অনুমতি দিচ্ছি না, কারণ কারও যদি কোভিড-১৯ পজিটিভ হয় তাহলে বেসরকারি হাসপাতালগুলো তাকে নজরদারিতে রাখতে পাবে না। বেসরকারি হাসপাতালে পরীক্ষার অনুমতি দেওয়ার এটা প্রথম ধাপ। অবশ্যই আমরা ধীরে ধীরে এই সুবিধা আরও বাড়ানোর ব্যবস্থা করব।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক মোজাহেরুল হক বলেন, ‘অবশ্যই, এটা একটা ভালো উদ্যোগ। এখন সময় এসেছে সারা দেশে পরীক্ষা সুবিধা সম্প্রসারণের। তবে একই সঙ্গে আমাদের পরীক্ষার মানের দিকেও নজর রাখতে হবে।’

তিনি জানান, কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সরকারকে বেসরকারি হাসপাতালগুলোকেও নিযুক্ত করতে হবে।

অধ্যাপক নাসিমা জানান, বগুড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতাল কোভিড-১৯ পরীক্ষার অনুমতি চেয়েছে এবং শিগগির একটি বিশেষজ্ঞ দল হাসপাতালটির সক্ষমতা পরিদর্শন করবে।

তিনি আরও জানান, করোনা পরীক্ষার সক্ষমতা আছে কিনা জানতে চেয়ে তাদের দেওয়া চিঠির উত্তরে ঢাকার কয়েকটি হাসপাতাল জানিয়েছে যে তাদের কাছে পিসিআর মেশিন নেই। কয়েকটি হাসপাতাল অন্য রোগীর সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে করোনা পরীক্ষা করতে চায় না।

তিনি বলেন, ‘যদি কোনো প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসে তাহলে আমরা তাদের সহযোগিতা করব।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বুধবার পর্যন্ত দেশে মোট করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে সাত হাজার ১০৩ জন এবং মারা গেছেন ১৬৩ জন।

Comments

The Daily Star  | English

3 quota protest leaders held for their own safety: home minister

Three quota protest organisers have been taken into custody for their own safety, said Home Minister Asaduzzaman Khan

22m ago