‘যে জেলায় দরিদ্র যত বেশি, সেখানে চাল ও অর্থ বরাদ্দ তত কম’

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে ত্রাণের দাবিতে গত ১৯ এপ্রিল, ২০২০ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষেরা। ছবি: স্টার

করোনা পরিস্থিতিতে যে জেলায় দরিদ্র মানুষের হার যত বেশি সেখানে চাল ও অর্থ বরাদ্দ তত কম বলে দাবি করেছে দুর্যোগ সহায়তা মনিটরিং কমিটি। আজ বৃহস্পতিবার অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করা হয় কমিটির পক্ষ থেকে।

সংবাদ সম্মেলনে সরকারি ত্রাণ বরাদ্দ ও বণ্টনের জেলাভিত্তিক তথ্য উপাত্ত তুলে ধরা হয়।

জেলাভিত্তিক সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত যতটুকু চাল, নগদ অর্থ ও শিশুখাদ্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তার তথ্য বিশ্লেষণ করে কমিটি জানায়, যে জেলায় দরিদ্র মানুষের হার যত বেশি, সেই জেলায় সরকারের চাল ও অর্থ বরাদ্দ তত কম।

কমিটির পক্ষ থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০১৬ সালে যে খানা জরিপ করা হয়েছিল তাতে জেলাওয়ারী দরিদ্র ও চরম দরিদ্র মানুষের যে তথ্য পাওয়া যায়, ত্রাণ ও অর্থ বরাদ্দের সময় সেগুলো উপেক্ষা করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জরিপ অনুযায়ী বর্তমানে কুড়িগ্রামে সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষ থাকলেও সেখানে মাথাপিছু চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রায় ৯০০ গ্রাম এবং অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩ টাকা ৮৫ পয়সা। অন্যদিকে সবচেয়ে কম দরিদ্র মানুষের জেলা নারায়ণগঞ্জে মাথাপিছু সাড়ে ২২ কেজি চাল আর ৮৮ টাকা অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।  

কুড়িগ্রামের পর দরিদ্র হার বেশি দিনাজপুরে। সেখানে মাথাপিছু চাল ও অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ ৬৭২ গ্রাম ও ৩ টাকা। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জের পর দরিদ্রহারে কম মুন্সীগঞ্জ জেলা আর সেখানে মাথাপিছু বরাদ্দ ২১ কেজি চাল আর ৯৫ টাকা।

কমিটির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, রাষ্ট্রক্ষমতার কেন্দ্রে যেসব অঞ্চলের মানুষের প্রাধান্য আছে এর সাথে জেলার দারিদ্র্য হার কম বেশি থাকার একটা সম্পর্ক অল্পবিস্তর আছে। ত্রাণ বরাদ্দের ক্ষেত্রেও এই ছাপ স্পষ্ট।

আজ বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল) দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যারা নানা সংকটে ও দুর্যোগে কথা বলেন ও পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন তারা মিলে দুর্যোগ সহায়তা মনিটরিং কমিটি গঠন করে বলে জানানো হয়েছে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে। কমিটির সমন্বয়ক জ্যোতির্ময় বড়ুয়া এবং সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন রাখাল রাহা। এতে যারা যুক্ত হয়েছেন তাদের বাইরেও সবার মতামতের ভিত্তিতে কমিটির সদস্যগণ যুক্ত হবেন। এই কমিটি করোনা দুর্যোগ অব্যাহত থাকা পর্যন্ত কাজ করবে বলে জানানো হয়েছে।  

কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, বরাদ্দকৃত সহায়তা ও প্রণোদনা যেন মানুষের কাছে পৌঁছায় সেজন্যে সরকারি তদারকির পাশাপাশি জনমানুষের দিক থেকেও তদারকি দরকার। সে লক্ষ্যেই জরুরিভিত্তিতে সারাদেশের ত্রাণ কার্যক্রম মনিটরিং করার প্রয়োজন মনে করছি।

তারা বলেন, সরকার কাদের জন্য, কতটুকু ত্রাণ বরাদ্দ করছে তার খোঁজ-খবর রাখা এবং সেটি পর্যাপ্ত কিনা বা প্রয়োজনের তীব্রতার ভিত্তিতে সারাদেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বরাদ্দ-বণ্টন হচ্ছে কিনা তা তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে বিশ্লেষণ এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করবে কমিটি।

এছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন অনুযায়ী ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে কিনা, ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও তছরুপের তথ্য সংগ্রহ করা এবং তা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের জানানোসহ ৯টি কার্যপরিধি ঠিক করেছে কমিটি।

কমিটির পক্ষ থেকে ত্রাণের বিষয়ে পাঁচটি সুপারিশ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে আছে- সব বরাদ্দ হতে হবে প্রান্তিক জনসংখ্যার ভিত্তিতে। খানা জরিপের ভিত্তিতে দরিদ্র ও কর্মহীন প্রতি পরিবারকে একবারে ৩০ কেজি চাল ও নগদ ১০ হাজার টাকা মোবাইলের মাধ্যমে পৌঁছে দিতে হবে। যতদিন দুর্যোগ থাকবে প্রতিমাসে এটি অব্যাহত থাকবে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, ভাসমান মানুষ যাদের তথ্য খানা জরিপে নেই তাদের কথা বিশেষভাবে ভাবতে হবে। লকডাউনের কারণে নতুন করে যারা দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে এসেছেন তাদের হিসাব করতে হবে। ত্রাণ সহায়তা বিতরণে সব রকমের অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি দূর করতে হবে। মানুষের মর্যাদা ও সম্মান নিশ্চিত করতে হবে। 

Comments

The Daily Star  | English

JnU students vow to stay on streets until demands met

Jagannath University (JnU) students tonight declared that they would not leave the streets until their three-point demand is fulfilled

3h ago