একজন রুমানা, মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত
একজন রুমানা। বয়স ২৫ কিংবা ২৬। তৃতীয় লিঙ্গের এই মানুষটি তার মত আরও কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে থাকেন কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় উপজেলা পেকুয়ায়। পেকুয়া তাদের জন্মস্থান না। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসে এখানে ঠাঁই নিয়েছেন এই মানুষগুলো। সঙ্গীদের নিয়ে দল বেধে গ্রামীণ জনপদে ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবন চলে রুমানাদের। চলার পথে অনেকের ব্যঙ্গ-বিদ্রূপও শুনতে হয় তাদের। চলমান করোনা সংকটের এ সময়ে সেই রুমানাই স্থাপন করলেন এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
প্রতিদিন ভিক্ষাবৃত্তি করে পাওয়া টাকা থেকে পাঁচ-দশ টাকা করে জমিয়েছেন রুমানা। জমানো এই টাকা দিয়ে চাল কিনে উপকূলীয় জনপদের সুবিধা বঞ্চিত অসহায় দরিদ্র মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। রুমানার এ মানবিক উদ্যোগে আপ্লুত হয়েছেন স্থানীয়রা। দুহাত তুলে দোয়া করেছেন রুমানার জন্য।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের উত্তর গোঁয়াতলি গ্রামে ৫০টি হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে চাল বিতরণ করেন তিনি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘চলমান এ সংকটে যখন অনেক বিত্তশালী নিজেদের গুটিয়ে রেখেছেন, অনেক জনপ্রতিনিধি হতদরিদ্র মানুষের চাল নিয়ে নানারকম চালবাজিতে মেতেছেন, তখন একজন রুমানা যা করলেন তা আমাদের জন্য অনুকরণীয় এবং দৃষ্টান্তমূলক। রুমানা আমাদের বিবেককে নাড়া দিয়েছেন। তার কাছ থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে।’
রুমানা তার সহজাত ভাষায় বলেন, ‘প্রতিদিন আমাদেরকে পাঁচ-দশ টাকা করে সহায়তা দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছেন গ্রামের এই হতদরিদ্র মানুষগুলোই। বড়লোকদের কাছে হাত পাতলে কত কটু কথা শুনতে হয় প্রতিদিন। যেসব মানুষের করুণা ও দয়ার উপর আমাদের জীবন চলে, তারা এখন পরিস্থিতির শিকার হয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। তাই অল্প যা জমানো টাকা ছিল, তা দিয়ে অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানোর সামান্য চেষ্টা করেছি মাত্র। এটা এমন বড় কিছু নয়।’
Comments