চট্টগ্রাম বন্দরে নজরদারিতে থাকা আমদানির চালান উধাও
চট্টগ্রাম বন্দরে নজরদারিতে থাকা একটি কন্টেইনার থেকে ২৬ টন ফেব্রিক্স পণ্য উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ও খালাসের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিএন্ডএফ এজেন্টের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা।
জড়িতদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
আজ রোববার বন্দরে কায়িক পরীক্ষা করতে গিয়ে কন্টেইনার থেকে পণ্য উধাও হয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হন চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের কর্মকর্তারা।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের সহকারী কমিশনার নূর-এ-হাসনা সানজিদা আনসূয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমদানির দীর্ঘদিনেও চালানটি খালাস করতে আমদানিকারক না আসায় আজ কাস্টমস, বন্দরসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির উপস্থিতিকে কন্টেইনারটি খোলা হয়। ৪০ ফুটের পুরো কন্টেইনারটিই খালি পাওয়া যায়।'
তিনি বলেন, 'শুল্ক ফাঁকি দিতে আমদানিকারক মিথ্যা ঘোষণার আশ্রয় নিয়েছেন। চালানটি লক করা হলে আমদানিকারক খালাসের কোনও উদ্যোগ নেয়নি। ফলে সংশ্লিষ্ট সবার উপস্থিতিতে চালানটি কায়িক পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়। এসময় আমরা কন্টেইনারটিতে যে লক (সিল ও নম্বরযুক্ত) থাকার কথা তা পাইনি।’
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের কমিশনার ফকরুল আলম বলেন, ‘এ ঘটনায় আমদানিকারক ও সিএন্ডএফ এজেন্ট প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ততা পেয়েছি। এছাড়াও বন্দর বা কাস্টমসের কোনও সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা হবে। যেহেতু এটি বড় ধরনের একটি অপরাধ তাই আমরা ফৌজদারি মামলার উদ্যোগ নেব।’
তিনি বলেন, ‘দুটি ট্রাকে করে এসব পণ্য বন্দর থেকে গত বৃহস্পতিবার বের হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। একই সময়ে একটি ট্রাক বন্দর থানা পুলিশ আটক করেছে। ওই ট্রাকে কী পণ্য রয়েছে তা এখনো দেখা হয়নি। এ চালানটির পণ্যের সাথে বন্দর থানা পুলিশের আটক চালানের পণ্যের মিল রয়েছে কিনা তা যাচাই করার পর বলা যাবে।’
কাস্টমসের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগের সহায়তা ছাড়া বন্দরের ৪০-৫০ হাজার কন্টেইনারের মধ্য থেকে একটি কন্টেইনারের খোঁজ বের করা সম্ভব না। বের করতে পারলেও তা নামানো এবং লক খোলার জন্য্য কাস্টমস ও বন্দরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার প্রয়োজন। এছাড়া অন্য চালানের সঙ্গে বাড়তি কোনও পণ্য নিয়ে বন্দরের গেট থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে তা কাস্টমস ও বন্দরের আলাদা তল্লাশি ও ওজন মাপার যন্ত্রে ধরা পড়বে। এতোকিছু সম্পন্ন করতে হলে এ ঘটনার সঙ্গে অবশ্যই বন্দর বা কাস্টমসের কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততা থাকত হবে।’
তিনি বলেন, ‘বন্দরে কাউকে প্রবেশ করতে হলে চোখের রেটিনা ও দুই হাতের আঙ্গুলের ছাপসহ পাস কার্ড নিতে হয়। যানবাহন প্রবেশের ক্ষেত্রেও যানবাহনের কাগজপত্র ও চালকের চোখের রেটিনা ও দুই হাতের আঙ্গুলের ছাপ নেওয়া বাধ্যতামূলক। সেখানে দুইটি কাভার্ড ভ্যান বন্দরে প্রবেশ করে পণ্য বের করে নিয়ে যাবে কীভাবে?’
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে ভুয়া নথি তৈরি করে চালানটি খালাস করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগের উপপরিচালক রেজাউল হক কে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।
আমদানি নথির তথ্য মতে, গত বছরের ফেব্রুয়ারির শুরুতে কোরিয়া থেকে ২৬ টন পরিমাণ একটি চালান বন্দরে আনে কিমস ফ্যাশন লিমিটেড। চালানটি শুল্কমুক্ত সুবিধায় গার্মেন্টের পলিস্টার ফেব্রিক্স ঘোষণা ছিল। গোপন তথ্যে চালানটিতে পর্দা ও সোফার কাপড় থাকায় চালাটি নজরদানিতে এনে এর খালাস কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেন কাস্টমস কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, একবছরের বেশি সময় চলে গেলেও তা খালাসের উদ্যোগ নেয়নি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। আবার আমদানির ৩০ দিনের মধ্যে খালাস না হলে তা নিলাম প্রক্রিয়া শুরু করার নিয়ম থাকলেও তা পালন করেনি কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
এ ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত আর এম অ্যাসোসিয়েটস এর স্বত্ত্বাধিকারী মাহবুব হায়দার চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
Comments