ফসল ওঠার আগে লালমনিরহাটে কৃষকদের ডুলি কেনার হিড়িক

লালমনিরহাটের আদিতমারিতে কারিগরের বাড়ি থেকে ডুলি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা। ছবি: এস দিলীপ রায়

‘ডুলি’ গ্রামবাংলার কৃষিভিত্তিক সমাজে অতি প্রয়োজনীয় একটি উপকরণ। উত্তরের জেলাগুলোতে বাঁশ দিয়ে তৈরি বিশালাকার এই পাত্র ধান সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হয়। তাই স্বাভাবিকভাবেই ধান কাটার মৌসুমের শুরুতে বেড়ে যায় ডুলির চাহিদা। কৃষকরা হাট-বাজর অথবা সরাসরি কারিগরদের বাড়ি থেকে ডুলি কিনে নিয়ে আসেন। ধান কাটা শুরু হলে তা মাড়াই করে শুকিয়ে তোলা হয় ডুলিতে। সংসারের চাহিদার ধান রেখে সেখান থেকে বাড়তি ধান বিক্রি করেন কৃষকরা।

আদিতমারী উপজেলার হাজীগঞ্জ গ্রামের কৃষক মিবেন চন্দ্র বর্মণ জানান, ডুলি কৃষক পরিবারের প্রয়োজনীয় একটি জিনিসের নাম। ডুলি রাখা হয় মাচার ওপর আর ডুলির ভেতরে রাখা হয় ধান। ডুলি বিভিন্ন আকারের হয়ে থাকে। সাধারণত এই অঞ্চলে তিন আকারের ডুলি দেখা যায়। ছোট আকারের ডুলিতে ধান সংরক্ষণ করা যায় ১০ থেকে ১২ মণ। মাঝারি আকারের ডুলিতে ২০ থেকে ২২ মণ আর বড় ডুলিতে ২৫ থেকে ৩০ মণ ধান।

তার ভাষায়, ‘সোকগুলা বাড়িত ডুলি আছে। ডুলিই হইল হামার ব্যাংক। হামরা এটে ধান থুইয়া আস্তে আস্তে পাড়ি, সিদ্ধ করি আর চাল বানায়া খাই।’

একই গ্রামের কৃষক সোলেমান মিয়া জানান, কৃষকরা ডুলি কিনেন তাদের চাহিদা অনুযায়ী। ছোট আকারের একটি ডুলির দাম পড়ে এক থেকে দেড় হাজার টাকা। মাঝারি আকারের ডুলি দেড় থেকে দুই হাজার টাকায় আর বড় আকারের ডুলির দাম তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। শক্ত বাঁশ দিয়ে তৈরি ডুলি সাত-আট বছর পর্যন্ত নির্ভাবনায় ব্যবহার করা যায়। তাই ডুলি কিনতে হতে হয় বাঁশের মান দেখে।

আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ী গ্রামের ডুলি কারিগর শফিকুল ইসলাম জানান, ধানের মৌসুম আসার আগেই ডুলি কারিগরদের ব্যস্ততা শুরু হয়। মৌসুমে দিন-রাত কাজ চলে। অনেক কারিগর ডুলির আগাম বায়নাও নিয়ে থাকেন। এক একটি ডুলি বানাতে কারিগরদের সময় লাগে দুই-তিন দিন। লাভ হয় ছয় থেকে সাত শ টাকা। ‘হামরা ডুলি বানায়া খাই। সারা বছর কমবেশি ডুলি বানে থুই আর ধানের মৌসুম আসার সময় হামার ডুলি বিক্রির হিড়িক পড়ি যায়,’ তিনি বলেন।

একই গ্রামের ডুলি কারিগর নুর হোসেন জানান, বাঁশের দাম বেড়ে যাওয়ায় ডুলিতে মুনাফা কমেছে। তিনি কয়েকজনের কাছে ডুলি বানানোর আগাম টাকাও নিয়েছেন। সারা জেলায় ৬০ জনের বেশি ডুলি বানানোর বারিগর রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘হামার কাছ থাকি পাইকার আসি ডুলি নিয়া হাটোত বেচায়।’

লালমনিরহাট সদর উপজেলার মেঘারাম গ্রামের কৃষক রনজিত চন্দ্র বর্মণ বলেন, গ্রামে প্রবাদ আছে যে বছর ডুলির চাহিদা বেড়ে যায় সেই বছর ধানের ফলনও বেশি হয়। এ বছর ডুলির চাহিদা বেড়ে গেছে। মাঠে ধানের অবস্থাও ভালো। প্রকৃতির আশীর্বাদে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন পাবেন এমন আশায় বুকও বেঁধেছেন কৃষকরা।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক শামিম আশরাফ দ্য ডেইল স্টারকে বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে কৃষকরা এ মৌসুমে বোরো ধানের যত্ন নিতে পারেননি। কিন্তু মাঠে ধানের অবস্থা গেল বছরের চেয়ে অনেক ভালো। আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন পাবেন কৃষকরা।

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

5h ago