১০ লাখ বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিক ফেরত পাঠাতে পারে সৌদি আরব

সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে নির্মাণাধীন মেট্রো রেল নেটয়ার্কের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন একজন প্রবাসী শ্রমিক। ছবি: এএফপি

করোনাভাইরাস মহামারিতে অর্থনৈতিক ক্ষতি এবং তেলের দাম কমে যাওয়ার কারণে আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে সৌদি আরব থেকে ১০ লাখ বাংলাদেশি অভিবাসীকে দেশে ফিরে আসতে হতে পারে বলে জানিয়েছেন সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাস।

দূতাবাস কর্মকর্তারা আশংকা করছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে নিজ দেশের নাগরিকদের মাধ্যমে ৭০ শতাংশ বিদেশী কর্মী প্রতিস্থাপনের নীতিও এর আরেকটি কারণ হতে পারে।

দূতাবাসটি থেকে সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে সম্ভাব্য বিকল্প শ্রম বাজার হিসেবে আফ্রিকান দেশগুলোতে অনুসন্ধান করার পরামর্শ দিয়েছে সরকারকে।

কর্মকর্তারা বলছেন, আফ্রিকার দেশগুলোতে প্রায় ৪০ লাখ বাংলাদেশিকে কৃষি, একুয়াকালচার, প্রাণিসম্পদ ও বিভিন্ন কারখানায় নিয়োগ দেওয়া সম্ভব।

বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্য সৌদি আরব। দেশটিতে কাজ করছেন প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি।

দূতাবাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে প্রণীত সৌদিকরণ নীতি বাস্তবায়নের জন্য সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ বিদেশী কর্মীদের সঙ্গে থাকা পরিবারের সদস্যদের জন্য মাসিক ফি ধার্য করেছে এবং ইকামা বা দেশটিতে থাকার অনুমতির জন্য ফি বাড়িয়ে দিচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি তেলের দাম রেকর্ড পরিমাণে কমে যাওয়ায় সৌদি আরবের উন্নয়ন কাজের গতি কমে যাবে। ‘অনেক প্রকল্পের কাজ বিলম্বিত হবে বা স্থগিত হতে পারে।’

ভবিষ্যতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের ফেরত আসার কারণ হিসেবে দেশটিতে যন্ত্রের ওপর নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি এবং দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করেছে বাংলাদেশি দূতাবাস।

চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে প্রায় এক লাখ ২৯ হাজার বাংলাদেশি কাজের জন্য দেশের বাইরে গেছেন। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, তাদের মধ্যে অন্তত ৯৫ হাজার ৩৮৫ জন বা ৭৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ গেছেন সৌদি আরবে।

সৌদি আরব খুব দ্রুত প্রতিটি খাতেই রোবট এবং যন্ত্রের ব্যবহার বাড়াচ্ছে। এমনকি পরিচ্ছনতা এবং রক্ষণাবেক্ষণের কাজের জন্যও যান্ত্রিক ব্যবহার বাড়ানো হচ্ছে।

দূতাবাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির পরিচ্ছন্নতা কাজে নিয়োজিত ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ কর্মী বাংলাদেশি এবং আগামী কয়েক বছরের মধ্যে তাদের বেশিরভাগকেই আর প্রয়োজন হবে না সৌদির।

করোনাভাইরাসের কারণে সৌদির অর্থনৈতিক অবস্থার কথা উল্লেখ করে এতে বলা হয়েছে, ‘এটা সৌদির অপরিশোধিত তেলের দামে আরও আঘাত করবে। যার ফল হবে সৌদির অনেক উচ্চাভিলাষী প্রকল্প স্থগিতকরণ এবং বিপুল সংখ্যক অভিবাসী শ্রমিককে অবিলম্বে ফেরত পাঠানো।’

দ্য ডেইলি স্টারের কাছে প্রতিবেদনের একটি অনুলিপি রয়েছে।

সম্প্রতি এক বৈঠকে সৌদি শ্রম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে শিগগির তারা বৈধ প্রত্যয়নপত্রসহ দক্ষ কর্মী নিয়োগ দেওয়া শুরু করবেন।

সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ জানিয়েছেন, সরকারের উচিত এই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা এবং বিকল্প শ্রমবাজার অনুসন্ধানের জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা এমন পরিস্থিতিতে হাতে হাত রেখে বসে থাকতে পারি না।’

সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে বছরে প্রায় তিন বিলিয়ন ডলার আয় করে। তিনি বলেন, অবৈধ ভাবে দেশে যে পরিমাণ টাকা পাঠানো হয় তা হিসাবে নিয়ে এই আয়ের পরিমাণ সাড়ে সাত বিলিয়ন ডলার হতে পারে।

মূলত তেলের দাম কমে যাওয়া এবং সৌদিকরণ নীতিসহ ছয়টি কারণে সৌদি সরকার সম্ভবত বাংলাদেশি শ্রমিকদের ফেরত পাঠাবে বলে মুঠোফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন রাষ্ট্রদূত।

কোভিড-১৯ মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকেই সৌদি কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের ফেরত পাঠাচ্ছে।

এর পাশাপাশি সৌদিতে অবৈধভাবে প্রায় দুই থেকে তিন লাখ বাংলাদেশি অবস্থান করছেন। ‘এই বাংলাদেশিদের বেশিরভাগ গত দুমাসে কোনো আয় করেননি।’

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লেখা চিঠিতে গোলাম মসীহ উল্লেখ করেছেন, সৌদি সরকার আগামী দেড় বছরের মধ্যে তাদের সবাইকে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা করছে।

বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি ফর মাইগ্রান্টসের (বিসিএসএম) সহ-সভাপতি সৈয়দ সাইফুল হক জানান, সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার হারাতে যাওয়া অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় এবং একটি হুমকিরও বটে। শ্রমিক ফেরত পাঠানো বন্ধে সরকারের অবিলম্বে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা শুরু করা উচিত।

মহামারির পর প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন বেশ কয়েকটি দেশে সফরে যাওয়া উচিত যেখানে অনেক বেশি পরিমাণে বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিক রয়েছেন। এমনটি জানিয়ে সাইফুল সতর্ক করে বলেন, ‘অন্যথায় বাংলাদেশ একটি বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে পারে।’

বিসিএসএম সম্প্রতি জাতিসংঘের মহাসচিবকে চিঠি দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশ থেকে বাধ্যতামূলক বিদেশী শ্রমিকদের ফেরত পাঠানো রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

তিনি বলেন, নাগরিক সমাজের সবস্তরের সদস্য ও সরকারি কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সবার উচিত অভিবাসী শ্রমিকদের সুরক্ষার প্রচেষ্টা শুরু করা।

 

Comments

The Daily Star  | English

No clear roadmap for investment

The budget for FY26 has drawn strong criticism from business leaders who say it lacks a clear roadmap for improving the investment climate, bolstering industrial competitiveness, and implementing overdue reforms in the banking sector.

15h ago